বি.আর.টিসি. বাসটা প্রায় পনের মিনিট ধরে এক জায়গায় দাঁড়ানো, সামনেও যায় না পিছনেও আসে না। বাসের মধ্যে বসে বার বার ঘড়ি দেখছে আদিল, আজও অফিসের দেরি হয়ে গেল। গত কয়েকদিন ধরেই রাত জেগে মিম নামের মেয়েটার সাথে চ্যাট করছে আদিল। ফেসবুকে কয়েকদিন আগেই পরিচয় হলো জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী মিম এর সাথে........
তৌকির আহমেদ আদিল, বেশকিছুদিন হল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। একহ্ন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আছে। ছোটবেলা থেকে খুব শান্তশিষ্ট স্বভাবের। আদিল, নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখত, একা একা থাকত। তবে পড়ালেখায় খুব ভাল ছিলো, ভাল রেজাল্ট করত। বাওবা-মা একটু টেনশন করত ছেলেকে নিয়ে, তবে এক দিক দিয়ে তাদের স্বস্তি ছিল, ছেলে লেখাপড়া ঠিক মত করছে। আদিলের বাবা একজন সরকারী চাকুরীজীবি। ভালোই পোষ্টে আছেন। ভালোই চলে তাদের সংসার। বর্তমানে বাবাও চাকরী করে, ছেলেও করে, যাকে বলে সোনায় সোহাগা।
অফিসে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিশ মিনিট দেরি হল আদিলের। আজকেও ম্যাডামের বকা খেতে হবে। আদিলের ম্যাডামের নাম মিনারা আজমী চৌধুরী, পাকিস্তানী মহিলা, তবে বিয়ে করে এ দেশেই রয়ে গিয়েছেন। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই করলেও এখন বেশ সুন্দরী দেখতে তিনি। উনার স্বামী মাহতাব চৌধুরী মারা যাবার পর, এই এম. এম. গ্রুপ আব কোম্পানির তিনিই একমাত্র কর্ণধার। ছেলে মেয়ে নেই, একা মানুষ। আদিল এই কোম্পানির প্রোডাকশন বিভাগের সি.ই.ও.।
অফিসে ঢুকেই পিয়নকে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম তার খোঁজ করছিলেন কিনা? পিয়ন না করল। পরে পিয়নকে এককাপ চা দিতে বলে, নতুন প্রোডাকশনের ফাইলটা একবার দেখে নিলো। এটা নিয়ে এখন ম্যাডামের রুমে যাবে। ম্যাডামের রুমে ঢুকতেই দেখল মোসাদ্দেক সাহেব তাদের কোম্পানির একজন ডাইরেক্টর বসে আছেন। আদিল ঢুকতেই ম্যাডাম মোসাদ্দেক সাহেবকে পরে আসতে বললেন।
"কি খবর আদিল?"
"এইত ম্যাডাম ভালো, আপনি?"
"আছি আর কি। হাতে কিসের ফাইল ওটা?"
"আমাদের নতুন প্রোডাকশানের। আপনি একবার চ্যাক করে সাইন করে দেন।"
"তুমি চ্যাক করেছতো, তুমি করলেই হবে। তা খাবে কিছু চা, কফি?"
"নো ম্যাডাম, থ্যাংকস।"
আদিল এই জিনিসটা আগেও লক্ষ্য করেছে যে, ম্যাডাম তাকে একটু বেশি বিশ্বাস করে, এই অফিসের অন্যান্য স্টাফদের থেকে। রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আদিল খেয়াল করল ম্যাডাম তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আদিল এ ধরনের চাহনি এর আগেও দেখেছে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয় আদিল দেখল, মিমের দুইটা মিসড কল। কাল রাতেই তারা মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান করেছিল। মিমকে প্রথমবার ফোন করে পেল না, দ্বিতীয়বার ফোন দিত্যেই মিম ফোন রিসিভ করল।
"হাই, কি খবর? কি করছ?"
"এইত ফ্রেশ হলাম মাত্র, তুমি?"
"কিছু না পড়ছিলাম। পরশু পরীক্ষা আছে।"
"ও ভাল, তা ডিনার করেছ?"
"হ্যাঁ করেছি, তুমি?"
"না এখনো করি নাই, করবো। অফিসে চাপ অনেক কাজের। বাসায় আসতে আসতে দেরি হয়ে যায়।"
"ও তাহলে খেয়ে আস যাও। পরে কথা হবে, রাখি।"
"ওকে রাখি, বাই।"
ডিনার শেষে আদিল তার ল্যাপ্টপ নিয়ে বসল। দেখল তার ম্যাডাম তাকে ই-মেইল করেছে। অফিসিয়াল কিছু নেই ই-মেইল এ। একটি রোমান্টিক কবিতা। আদিল মুচকি হেসে তার কাজ করতে লাগল।