somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানি

২৩ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~মানবিক পশু হত্যা শিক্ষা ইন্সটিটিউট॥
******'হত্যা সবসময়ই ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতম কর্ম তা সেটা যে উপায়েই সংগঠিত হোক না কেন'******
পৃথিবীতে একটা ক্ষুদ্রতম প্রানীরও যেমন বেঁচে থাকার অধিকার আছে ঠিক তেমনই এই গ্রহের সর্ববৃহৎ প্রাণী নীল তিমিরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে সমানভাবে।
কিন্তু প্রকৃতি তাঁর প্রাণ ও প্রাণীর ফুড চেইন সার্কেলকে এমনভাবে তৈরি করেছে যে, প্রকৃতিতে টিকে থাকতে হলে কিছু প্রানীকে কিছু প্রানীর হত্যা করতেই হবে। তবে সেটা নিশ্চিতভাবে শুধু সার্ভাইভালের জন্য- এবং সেটা ব্যাপক আকারের নিধন নয়।
এদিক দিয়ে মানুষ ব্যতিক্রম! তারা অপ্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় প্রাণী হত্যা করছে - তাদের সভ্যতার শুরু থেকেই পৃথিবীকে প্রাণহীন অন্য প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য করে করে সাফ সুতোর করে ফেলতে চাইছে।
মানুষ এমন একটি প্রাণী যাদের পরিপাকতন্ত্র বেশ জটিল। এদের পরিপাকতন্ত্র পৃথিবীর প্রায় সব ধরণের খাবার হজমের সহায়ক। যেহেতু আমাদের পরিপাকতন্ত্র সরাসরি যে কোন প্রকৃতিজাত প্রোটিন হজম করতে পারে সেহেতু কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়া নিশ্চিত ভাবে ধরে নেয়া যায় যে আমাদের আমিষ জাতীয় প্রোটিনের চাহিদা আছে।
মানুষ চাইলে অবশ্য শুধু নিরামিষ খেয়ে জীবন কাটাতে পারে- তবে কোন কোন পরিবেশে কোনভাবে পারে সেই নিয়ে আমার স্বচ্ছ ধারনা নেই।
কিন্তু শুধুমাত্র আমিষ খেয়ে মানুষ পৃথিবীর যে কোন রুক্ষ বন্ধুর পরিবেশে টিকে থাকতে পারে তাঁর বিশেষ উদাহরণ 'ইনুইত'(এস্কিমো) ও আরবীয় বেদুইন।
আমিষ ভোজীদের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবারও নিরামিষ না খেলেও চলে কিন্তু নিরামিষ ভোজীদের তাদের মেটাবোলিজমের জন্য কোন না কোন ভাবে বিকল্প উপায়ে প্রোটিন সংগ্রহ করতেই হবে।
পৃথিবীতে টিকে থাকা আমাদের নিকটতম প্রাইমেট( ধারনা করা হয়) পিগমী শিম্পাঞ্জি বা বোনোবোস যদিও বেশিরভাগ সময় ফলজাতীয় জিনিস খেয়ে জীবনধারা করে কিন্তু তাদের শারিরিক সক্ষমতার জন্য মাঝে মধ্যে প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। তখন তারা দলবদ্ধভাবে এমবুশের মাধ্যমে বানর জাতীয় প্রাণী শিকার করে তার মাংস খায়।
মানুষের পরিপাকতন্ত্র অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় বেজায় জটিল- শুধু অন্য প্রাইমেটই অন্য যে কোন দুগ্ধপোষ্য প্রাণীর থেকে জটিল। ফলমুল নয়, লতা পাতা ঘাস জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সরাসরি আমিষজাতীয় খাবার অন্য কোন প্রানী হজম করতে পারে না।
শুধু তাই নয় আমরা যে এত বুদ্ধিমান, এই বুদ্ধিমত্বার ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই বিশেষ মগজ পরিচালনার জন্য অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় বেশী পরিমান লবন, শর্করা ও প্রোটিনের প্রয়োজন।
লবন ও শর্করার অতিরিক্ত ঘাটতি আমাদের চেতনাকে বিভ্রান্ত করে ও দ্রুত মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়।
হ্যাঁ আপনি কিছু বিকল্প প্রোটিন উদ্ভিজ বা শস্য থেকে পেতে পারেন সেটা সত্য কিন্তু পুরো ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেন মস্তিষ্কের সবচাইতে প্রয়োজনীয় উপাদান 'ওমেগা ফ্যাট থ্রি' যার মুল ও সবচাইতে উৎকৃষ্ট সোর্স মাছের তেল ( অবশ্য বিভিন্ন প্রকার বাদামেও এই ফ্যাট পাওয়া যায় তবে মানুষের মগজের জন্য মাছের তেল থেকে পাওয়া 'ওমেগা ফ্যাট থ্রি' সবচেয়ে কার্যকর বলে স্বীকৃত) । মাছের তেল খেতে হলে আপনাকে মাছ হত্যা করতেই হবে।
পৃথিবীর সব ধরনের পুষ্টিবিজ্ঞানী আপনাকে উদ্ভিদজাত তেল, মার্জারিন, বাটার, খেতে নিষেধ করেন। প্রাণীজাত তেল চর্বি খেয়ে যত না আমাদের রোগ হচ্ছে তার থেকে বেশি রোগ হচ্ছে উদ্ভিদজাত তেল খেয়ে বা তেলের ভাজা পোড়া রান্না খেয়ে।

***
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না; একসময় তিব্বতীয় অঞ্চলের সবচাইতে দামী খাবার ছিল লবন। যে কোন পর্যটক ওই অঞ্চলে ভ্রমন করলে সেখানকার সবচাইতে সম্ভ্রান্ত মানুষও যে কোন রকম আতিথিয়েতার বিনিময়ে একটু লবন চাইত। লবনের সল্পতার জন্য তিব্বতের বেশীরভাগ মানুষ বিশেষ এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
***
তিব্বতিয়ানরা গোঁড়া বৌদ্ধ। তারা একসময় পশু হত্যা করত না। তবে কিছু তিব্বতিয়ানেরা মাংস খেত (খাঁটি ভুটানি্রাও মাংস খায় না)। সমস্যা হল পশু হত্যা না করলে পশু মাংস খাবে কোন উপায়ে?
বিখ্যাত লেখক ও পর্যটক শরৎচন্দ্র দাশ প্রায় দেড়শ বছর আগে তিব্বতের লাসায় ভ্রমনের সময়ে উল্লেখ করেছেন যে, লাসায় লাসায় যে ইয়াক বা চামড়ি গাই কিংবা লামার মাংস বিক্রি হত তাঁর কসাই ছিল মূলত মুসলমান। সম্ভবত তারা ছিল চৈনিক উইঘুর প্রজাতি।
এখানে বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং; মাংস খাবেন আপনি কিন্তু হত্যার দায় চাপাবেন আরেকজনের কাঁধে- সে হল পাপী নিকৃষ্ট মানুষ। বাহ্‌
এখনো যেটা আমরা সমাজের কসাইদের ভেবে থাকি। 'কসাই' একটা প্রচলিত গালিই হয়ে গেছে!!!

***
আসুন আমরা এখন একটু গবাদি পশু হত্যায় অন্য দেশের পরিসংখ্যানের দিকে যাই (পরিসংখ্যান কখনোই নির্ভুল হয় না এখানে কিছু গরমিল থাকতেই পারে) যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন এক লক্ষ গবাদি পশু জবাই করা হয় বলে ধারণা করে। তার মানে বছরে তিন কোটি ৬০ লক্ষ গবাদি পশুর মাংস ওরা ভক্ষণ করে।

একটা পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে পৃথিবীতে প্রতিদিন ৯ লক্ষ গরু ভক্ষণের জন্য কতল করা হয়। একটা গরু যদি ২ মিটার লম্বা হয় তাহলে সোজাসুজি দাঁড়ালে এটা ১৮০০ কিলোমিটার লম্বা একটা লাইন হতো! এটা কিন্তু শুধুমাত্র গরু জবহের হিসাব বাদবাকি পশুর হিসাব করা হয়নি পৃথিবীতে প্রতিদিন ২০ কোটির অধিক মুরগি কতল করা হয়!! অনেকেই এই মুরগির ঠ্যাং আয়েশে চিবোতে চিবোতে কেঁদে কেটে কোরবানি নিয়ে মর্মস্পর্শী পোস্ট দেন।

২০২২ সালের Faunalytics দ্বারা সংকলিত সাম্প্রতিকতম বৈশ্বিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে মোট ২৯ কোটি ৩২ লক্ষ গবাদি পশু জবাই করা হয়েছিল।

পৃথিবীতে দেড়শ কোটি লোক মাংস খায় না তার অর্থ এই নয় যে তারা নিরামিষভোজী তাদের ৯৫ ভাগ মানুষ মাংস পায় না দেখে মাংস খায় না। পৃথিবীতে বেশিরভাগ নিরামিষভোজীরাই হল অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কারণে। তবে এখন কিছুটা দিন পাল্টেছে অনেকে মানবিক কারণে আমিষভোজী থেকে নিরামিষভোজী হচ্ছেন।
***
হত্যা একটা নিষ্ঠুরতম কাজ তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কোন ধর্মের মোড়কেই সেটাকে মানবিক বানানোর উপায় নেই।
সারা বিশ্বের গবাদি পশু লালন পালন করা হয় তিনটে কারনে।
প্রথমতঃ কৃষিকাজ যানবাহন বা যন্ত্রের বিকল্প হিসেবে; যার প্রয়োজন এখন প্রায় ফুরিয়ে গেছে বললেই চলে।
দ্বিতীয়তঃ দুগ্ধ, জ্বালানি,পশম।
আর সর্বশেষঃ মাংস চামড়া আর সহ বিভিন্ন উপজাত এর অর্থনৈতিক কাজে চূড়ান্ত ব্যবহার।
এখানে ভেবে দেখার বিষয় যে, একজন খামারি বা কৃষক গবাদি পশু লালন পালন করে যদি সে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান না হতে পারে তাহলে কেন সে গবাদিপশু লালন পালন করবে? পৃথিবীর সব খামারি ও কৃষক সে যতই মানবিক হোক না কেন তার অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য অবশেষে শেষ পথটাই বেছে নেয়।
আমাদের মত গরিব দেশের এই অর্থনৈতিক সুরক্ষটা একটা বিরাট ফ্যাক্টর!
আমরা শুধু মাংস খাওয়া আর বিলানোর কথা চিন্তা না করে এই দেশের জিডিপিতে এর অবদানের কথা একটু আলোচনা করি; কৃষকদের গরু লালন পালন। কোরবানি নিয়ে তাদের একটা সপ্ন- বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ নারী এইসব গরুর পরিচর্যা ও লালন পালনের সাথে জড়িত। আপনি যেসব উন্নত দেশের সাথে কোরবানির তুলনা দেন যে তারা এভাবে বর্বরের মত পথ ঘাটে পশু জবেহ করে না- বলুন দেখি তারা কি এভাবে আমাদের মত ঘরে ঘরে গরু ছাগল লালন পালন করে? এ বিষয়টাকেও পুরো পশ্চিমা বিশ্ব নন-হাইজেনিক বলবে।
কিন্তু কোনটা মানবিক, গৃহস্থের দ্বারা খোলা মেলা প্রাকৃতিকভাবে পশু লালন পালন নাকি খামারে একেবারে আঁটোসাটো বন্দী অবস্থায় পশু লালন পালন? ( তবে বিশ্বের সবখানেই যে খামারে বদ্ধভাবে পশুলালন পালন হয় তা কিন্তু মোটেই নয়।)
এরপরে আসে সৌখিন ও বানিজ্যিক ভাবে পরিচালিত পশু খামার -এর সাথে শত শত খামারি হাজারো কর্মী, পশুখাদ্য ও ঔষধ ব্যবসায়ী ডাক্তার সহ বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান জড়িত। আজকে প্রান্তিক কৃষক বা খামারীরা যে ভালো দাম পাচ্ছে এবং আধুনিক কেতায় পশু লালোন-পালোনের জন্য এদের অবদান অপরিসীম।
পশু বিক্রির জন্য অনলাইন সংস্থা সহ স্থায়ী অস্থায়ী বিশাল সব হাট বাজার এবং এসব ঘিরে যারা থেকে শুরু করে শত শত কর্মী সহ দালাল ফড়িয়া ইজারাদারদের বড় আয়ের সংস্থান! এর উপরে ট্রাক ও পিক আপ ব্যবসায়ীদের চমৎকার একটা আয়ের সুযোগ আসে এই সময়।
বাংলাদেশে কামার শিল্পীদের একটা বড় অংশ সারা বছর শুধু কুরবানীর দিকে চেয়ে থাকে এই সময়ে তারা মূলত বটি ছুরি চাপাতি বিক্রি করে সারা বছরের সংস্থান করে। হোগলা পাটি শিল্পটাও আমার ধারণা টিকে আছে এই কুরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে। যদি বড় তেতুল গাছ কাটার মহোৎসব শুরু হয় এই কুরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে; কেননা মাংস কাটার জন্য তেঁতুল গাছের গুড়ি সবচাইতে উত্তম। পরিবেশের বড় একটা সর্বনাশ এই সময় হয়।
খড় ভুসি বিচালি সহ অন্য গো-খাদ্য বিক্রি করে অনেকে অতিরিক্ত দু'পয়সা ইনকাম করলেও টাকাটা কারো না কারো উপকারে লাগে। এটাও একটা বিশাল ব্যবসা দেশ জুড়ে হয়।
এরপরে গরু যারা জবহ করেন তারা অনেকের দৃষ্টিতে রক্তের হোলি উৎসব করলেও এর বিনিময়ে কিছু পয়সা আয় করেন। গরু কাটার জন্য সারা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ জাত কসাই আধা কসাই অদক্ষ কসাই কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে নেয় অনেকেই দু-চার ছয় মাসের সংসারের খরচ একদিনে আয় করে নেয়। এইসব কসাইদের পাশাপাশি দেখবেন কাজের-বুয়া ছুটা-বুয়া আশেপাশের গরিব-মহিলারা দারোয়ান কেয়ারটেকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন গরিব মানুষেরা পশুর রক্ত ভুড়ি সহ অন্যান্য বর্জ‍্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে সহযোগিতা করে এছাড়া মাংস কাটা বিলি বন্টনেও এরা বেশি ভালো রকমের সাহায্য করে। এর বিনিময়ে এদের কিছু আয় হয়।

কয়েক বছর যাবৎ হঠাৎ করে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় মানুষ হতাশ হয়ে এখনো চামড়া বিক্রি করে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদ্রাসায় বা মসজিদে চামড়া দিয়ে দেয়। চামড়ার দাম কমে গেলেও কেউ না কেউ চামড়া থেকে উপকৃত হচ্ছে। এর পেছনে হাজার হাজার ফরিয়া, দালাল, মজুতদার ট্যানারি মালিক, ফ্যাক্টরি মালিক লক্ষ লক্ষ কর্মী সারা বছর কাজ করে তাদের আয় রোজগারের একটা বড় নিয়ামত হচ্ছে এই কোরবানি।
বাংলাদেশে সারা বছরের যত চামড়া সংগ্রহ হয়ে থাকে তার অর্ধেকের বেশি চামড়া আসে কোরবানি থেকে এবং এই কোরবানির চামড়া হচ্ছে সবচাইতে উৎকৃষ্ট মানের চামড়া। যদিও আমাদের দেশীয় চামড়া ও চামড়ার তৈরি পণ্য রপ্তানি একদম পড়ে গেছে তবুও দেশের বাজারে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে আমাদের দেশের বাজারে চামড়াজাত পণ্য সারা বছরে আমরা কিনে থাকি তা মূলত এই দেশীয় চামড়া থেকে আসে। কুরবানি দেওয়ার জন্য মানুষ দেখে শুনে খুঁত বিহীন সবচাইতে সেরা গরুটা কেনে- এবং সবই প্রায় দেশীয় যুবক ষাঁড় গরুর ঝকঝকে চামড়া। অতএব এর থেকে ভালো চামড়া কোনভাবেই আর সারা বছর মেলা সম্ভব না।
যদিও অদক্ষ কসাইয়েরা চামড়া ছিলতে গিয়ে চামড়া নষ্ট করে। চামড়া কিভাবে সংরক্ষন করতে হবে সেটা না জেনে আমরা চামড়া নষ্ট করি। সেজন্য প্রতি বছর শত কোটি টাকার চামড়া একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। গরু জবাই থেকে শুরু করে শেষটা সবকিছুই প্রফেশনালরা করলে অবশ্যই ভালো হতো সেটা নিশ্চিত। তবে সেই পর্যায়ে আমরা এখনো যেতে পারিনি -সেই পর্যন্ত যেতে আমাদের বহু পথ বাকি।

কৃষকের হাতে লালিত-পালিত দেশি গরু হাটে গিয়ে দরদাম করে কিনে টেনে হিচরে হই হই রই রই করে, কত দাম? কত দাম?- এর আলোচনা এমনিতে ঘেমে নেয়ে বাসায় এনে একদিন লালন পালন করে পরদিন হুজুর ডেকে যবেহ করে নিজের সামনে কেটে ছিলে বাসায় নিয়ে ভালো করে কষিয়ে রান্না করে না খেলে আমাদের আসলে কোরবানি মজাটাই পাই না। আমরা এমন একটা কালচারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি অনেকের কাছে নৃশংস ভয়াবহ মনে হয়।

আমারও কষ্ট লাগে যখন দেখি কেউ রসনা বিলাসের তরে ছোট ছোট জ্যান্ত অক্টোপাস গুলো কাঠির মাথায় পেছিয়ে সস দিয়ে মুখে পুরে দেয়।যখন দেখি হাজার হাজার তাজা ঝিনুকের ভিতরে একটু লেবুর রস আর লবণ দিয়ে টপটপ করে মুখের পুড়ে দেয়। গভীর সমুদ্র থেকে ধরে নিয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে রাখা সবচেয়ে বিরল প্রজাতির লবস্টার আর কাঁকড়া জীবন্ত গরম পানি বা ফুটন্ত তেলে ছেড়ে দেয়। মানুষের লোভ যখন বিশাল নীল তিমির মা আর দুধের সন্তানকে এফোড় ওফোড় করে ফেলে।

আমি যে কথাগুলো বললাম এগুলো কোন ট্রাইবাল এরিয়ান বর্বর মূর্খ মানুষের কাজ নয় এগুলো পৃথিবীর সবচাইতে মানবিক ও শিক্ষিত মানুষেরা করে থাকেন। ফিনল্যান্ডের মত মহা মানবিক দেশে প্রতি বছর সদ্য যৌবন প্রাপ্ত পুরুষেরা তাদের পৌরুষত্ব দেখানোর জন্য শত শত শত তিমিকে অযথাই হত্যা করে তখন মানবতা কোথায় ঘাপটি মেরে থাকে? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী তিমি হত্যাকারি দেশের তালিকায় প্রথম দিকেই নাম আছে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড আর জাপান।অথচ এদের প্রায় সবগুলো দেশ মানবতার ধারক-বাহক।

আমাদের মত গরিব দেশে এক কোটি ষাঁড় পাঠা খাসির বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ার খাওয়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এখন শুধু দুধ আর কৃষিকাজের জন্য কিছু গবাদিপশু প্রয়োজন। এদের বাকি প্রয়োজনগুলো ফুরিয়ে গেছে। তাহলে অপ্রয়োজনীয় পুরুষ গবাদিপশুগুলো নিশ্চয়ই আমাদের জন্মের পরে কার্ল করতে হবে?

~একজন মানবিক কসাই। বাচ্চা কোলে নিয়ে এইসব হত্যাকাণ্ড দেখার সমস্যা নাই।

(শেরপুর নিউজ ডেস্ক: আমেরিকা, কানাডা, কোরিয়া, চীন, জাপান ও হংকংসহ বেশ কয়েকটি দেশে গরুর পিজলের (পিনাস) চাহিদা বেশ। তাই বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিও হচ্ছে। গরুর এই বিশেষ অঙ্গ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা। ওই সব দেশে এক টন শুকনো পিজলের দাম ২০ হাজার ডলার। পিজল ছাড়াও নাড়ি-ভুড়ি রপ্তানি হচ্ছে। মূলত এগুলো দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ। যা সেখানে বেশ জনপ্রিয়। এবার পিজল বা পেনিস সংগ্রহ হবে ১০০ টন। গরুর পিজল মানভেদে ৬০-১০০ টাকায়এবার আশা করছি ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বিদেশে এগুলোর খুব চাহিদা। কানাডা-আমেরিকায় পিজলের চাহিদা রয়েছে। সারাদেশে ১০ হাজার পরিবার এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।)
***
গঠনমূলক সমালোচনা কাম্য। তথ্যগত ভুলত্রুটি থাকলে কোন দ্বিধা না করে ধরিয়ে দেবার অনুরোধ রইল। 'স্পিচ টু রাইটে' সেলফোনে লেখার জন্য বহুশত ভুল ছিল। তাঁর কিছু এডিট করে দিলাম সাধ্যমত। এ ব্যাপারে কৃতজ্ঞতা জানাই ব্লগার করুণাধারা ও ব্লগার ভুয়ামফিজকে।

~পশু হত্যা মাংস কাটা এগুলো উন্মুক্ত স্থানে সবার সামনে করা ঠিক নয়। বিষয়টা এভাবে একাকী উপভোগ্য!

~মানবিক মাংস বিক্রয়। বিষয়টা খুব নান্দনিকতা শৈল্পকতার সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই মাংস কেনা কাটা খাওয়া দাওয়ার মধ্যে কোন অনুশুচোনা বোধ আসার প্রশ্নই আসে না।যে হত্যা ম্যাসিভও নির্মম হলেও আড়ালে হয় সেটাকে আমরা হত্যা বলে গন্য করি না।

~কাঁচের ওপারে মাংসগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে সাইজ ও প্রোডাক্ট ডিজাইন অনুযায়ী হয়ে যায়। এটা হত্যাকাণ্ডহীন দুর্দান্ত একটা আমিষের সোর্স।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ৮:৩৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×