বহুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো করার প্রয়াস হিসেবে কেউ ভেবে বসেন সেই সঙ্কোচে।
***
ছোট বেলায় বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি নিজের অধিকার হিসেবে ভাবতাম- এটা কখনোই পাপকর্ম হিসেবে ভাবি নাই। বরংচ মার জমানো টাকা চুরি করে পাপবোধে ভুগতাম।
অনেক অনেক বড় হবার পরে একটা জিনিস টের পেলাম নিজ ঘরে আরেকটা চোর বর্তমান। যে স্বামীর পকেট থকে টাকা চুরি একটা শৈল্পিক রীতি হিসেবে নিয়েছে। এখানে কোন পাপবোধ তো দুরের কথা এনারা এটাকে 'ফরজে কেফায়া' হিসেবে ভাবেন।
ইঁনারা নতুন বউ ঘরে আসলে তাঁকে সংসারের তালিম দেবার পাশাপাশি কিভাবে স্বামীর পকেট কাটতে হবে তাঁর সুক্ষ্ণ তালিমটাও দিয়ে দেন বেজায় হাস্য-রস করতে করতে। সেই সাথে কে কিভাবে তাদের পতিদেবদের বোকা বানিনে পকেট থকে সমুদয় টাকা পয়সা হাপিস করে দেন তাঁর সবিস্তারে বর্ননা করে এমন কৌতুকময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন যে, নববধুর সে রাতেই ধ্যান জ্ঞান সপ্ন হয়ে ওঠে কেমন করে তাঁর বেহুড়া পতিকে আরো বেশী বেহদ্দ বোকা বানিয়ে সবাইকে চমকে দিবেন।
শুধু অগোচরে পকেট মেরে ক্ষান্ত দিলে কথা ছিল- কিছুদিন বাদে স্বামীর দুঃসময়ে তারা বিশ্বব্যাংক কিংবা আই এম এফ সেজে বসে, চমৎকার কিছু শর্ত সাপেক্ষে সেই টাকা থেকে লোন প্রদান করেন।
ফেসবুকে এই লোন নিয়ে অনেক ট্রল হয়। 'কেউ বলে বউ এর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলাম, কতবার শোধ করলাম- এখনো নাকি সে পাঁচ হাজার টাকা পায়।'
আমাদের মত গরিব দেশের মত এই টাকা এক জিন্দেগীতে শোধ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। পুরুষ মানুষের কথায় কাজে মিল থাকে কম। বউ এর টাকার হিসাবে পাত্তা দেয় কম। ওদিকে আই এম এফ তাঁর হিসাব নিয়ে তক্কে তক্কে ঠিকই থাকে। পকেট কাটে দ্বিগুণ গতিতে। একটু বেতাল হইলেই হুমকি দেয়। দ্বিতিয়বার লোন চাইলে তো কথাই নাই; এইবার মামা কট!
(* তবে এটা না বললেই নয় বেশীরভাগ ছেলেরাই বেহিসেবি হয়। গৃহিনীরা তাদের এই জমানো টাকা অনেক দুঃসময় সামাল দেয়।
স্বামীরাও ঠিক ঠাক জানে, দেখেও না দেখার ভান করে। এটা যেন এক পারিবারিক খেলা যা দুই পক্ষের সম্মতিতেই হয়ে থাকে।)
গল্পটা করতে চেয়েছিলাম লাটু ভাইকে নিয়ে। এককালের কুস্তিগীর লাটু ভাই। ষাটের ঘরে বয়স হলেও এখনো দশাশই ফিগার। মায়ের অমতে নিজের কাজিনকে বিয়ে করে ঘরছাড়া হয়েছিলেন। পরে পারিবারিক সম্মতি মিললেও সেভাবে তাঁর গিন্নী শ্বশুরবাড়ির সাথে একাত্ব হতে পারেনি কখনো।
একমাত্র সন্তান তাঁর দেশের বাইরে পড়াশুনা করছে। এইবার করোনায় তাঁর স্ত্রীর সাথে যমে মানুষে টানাটানি করে দীর্ঘ একুশদিন বাদে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরিয়ে এনেছিলেন।এরপর থেকে ভাবিসাহেবের মাথায় একটু গোলমাল- চাকুরি ছেড়ে দিলেন, সারাক্ষন পশু পাখি নিয়ে থাকেন। তাদের খাওয়া দাওয়া আর চিকিৎসা বাবদ টাকা দিতে গিয়ে লাটু ভাইয়ের ধার দেনা করার অবস্থা!
টাকা পয়সার একটু হাত টান দেয়ায়,
সেই মহিলার মানিব্যাগ থেকে টাকা হাপিস করার অভ্যাসটা শুরু হল বাড়াবাড়ি রকমের। উপায়ান্তর না দেখে লাটু ভাই কখনো তোষকের নীচে কখনো ব্যাগে, কখনো আলমারিতে টাকা রাখা শুরু করলেন। ওমা যেখানে টাকা রাখেন সেখান থকেই টাকা হাওয়া হয়ে যায়। সেই মহিলা টাকার গন্ধ শুকে শুকে সেইখানে ঠিক পৌছে যায়।
এবার ড্রয়ারে টাকা রেখে তালা মেরে রাখলেন - আর চাবি রাখলেন নিজের মানি ব্যাগের গোপন অলিন্দে। কদেন বাদে দেখেন মানিব্যাগে চাবি নেই। ভাবলেন হারিয়ে ফেলেছেন কোথাও। বাইরে থেকে চাবিওয়াকে আনিয়ে ড্র্যার খুলে দেখেন টাকা-পয়সা হাওয়া।
এই নিইয়ে বউ এর সাথে মনো-মালিন্য। একটু রাগারাগি করে ঘুমোতে গেলেন।
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে ছায়ার মত কে যেন দেখেন দাঁড়িয়ে আছে। ভাল করে লক্ষ্য কর- ভয়ে দম বন্ধ হয়ে কাঁপতে লাগলেন; তাঁর বউ দাঁড়িয়ে আছে 'বটি হাতে'। মহিলা ভাগ্যিস দয়া করে কোপ দেননি।
এরপরে আর প্রানের ভয়ে আর চটান না। টুকটাক টাকা পয়সা তাঁর চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে যান আর মানিব্যাগে কিছু রেখে দেন নিয়মিত চুরি করে খোশ মেজাজে থাকার জন্য।
এর মাঝে অতি গোপনে একটা মাটির ব্যংক নিয়ে এসে খাটের নীচে লুকিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রতি রাতে পাঁচশ/ এক হাজার টাকা রাখেন তিনি। মনে মনে ভাবেন বউ যেদিন বাপের বাড়ি যাবে সেদিন এই ব্যাঙ্ক ভেঙ্গে বড় অঙ্কের একটা টাকা দিয়ে বন্ধু বান্ধব মিলে ঢাকার বাইরে গিয়ে মৌজ মাস্তি করবেন।
তাঁর হিসেবে ৭৪ হাজার টাকার মত জমা হয়েছিল। বউ এর শ্বশুরবাড়ি যাবার দিনক্ষন পাক্কা- তাঁরও বন্ধুদের সাথে মৌ-মাস্তির হিসাব কিতাব!
রাতে এসি বাসে বউকে উঠিয়ে দিয়ে এসে বাসায় ঢুকেই বড় করে এক স্বাধীনতার হুঙ্কার দিলেন। তারপর নিজের রুমে গিয়ে গোপনে রাখা সেই মাটির ব্যাঙ্কটা বের করে তুলে ধরে আছড়ে ফেললেন টাইলসের মেঝেতে। পোড়া মাটির ভাঙ্গা টুকরো গুলো ঝন ঝন করে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে- আর তাঁর সাথে টুং টুং করে একটা মাত্র পাঁচ টাকার কয়েন। পুরো ৭৩৯৯৫ টাকা গায়েব!!!!