somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেভিস ফল-( ভ্রমন কাহিনী)- ৫ম পর্ব

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘অনেকখানি বন জঙ্গল গাছ তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ‘সাইনবোর্ড দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করে লিখেছে ‘ আপনি কি রেড পান্ডা দেখতে চান তাহলে উপরে তাকান গাছের ফাঁকে খুজুন?’ এই জাতীয় কিছু । দর্শনার্থী যখন গাছের ফাকে পান্ডা খুজে খুজে ক্লান্ত হয়ে-কোন মতে রেড পান্ডার ন্যাজ দেখে দারুন উৎফুল্ল হয়ে সামনে এগুলেই দেখবে জোড়ায় জোড়ায় রেড পান্ডা জাল ঘেরা ঘরের মধ্যে কানামাছি খেলছে ।
রেডপান্ডা মিলবে শুধু হিমারয়ের কোলে -ধারনা করা হয় মাত্র হাজার পাঁচেক রেড পান্ডা এখনো হিমালয়ের গহীন বনে বেঁচে বর্তে আছে । এদের নিয়ে শুধুমাত্র দার্জিলিংয়ের এই চিড়িয়াখানাতেই গবেষনা হচ্ছে । এরা খুব শান্তি প্রিয় ছায়া শীতল একটু অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গা এদের পছন্দ । তাই খাচার সামনে শব্দ করা নিষেধ ।
তবে ফিজান্টগুলো দারুন আকর্ষনীয় । রঙ আর পালকের বাহার দেখে বিস্ময় জাগে ।
পশু পাখি দেখা সেখানেই ক্ষান্ত দিয়ে এগিয়ে চললাম হিমালয় মাউন্টেইন স্কুল ও মিউজিয়ামেরে দিকে।
রাস্তায় লেখা আছে পদব্রজে মাত্র তিন মিনিটের পথ। সময়টা কাদের জন্য ঠিক বুঝলাম নাক। আমরা যারা পাহাড়ী পথে চলাচলে অভিজ্ঞ নই তাদের না ওদের !
এখানে ঢোকার পথেই বিশ রুপি দিয়ে দুটো টিকেট কিনতে হয়েছে একটা চিড়িয়াখানার একটা মিউজিয়ামের।
একতলা মিউজিয়ামটা বেশ ছিমছাম গোছানো । ১৩৬১ সালর ১৮ই কার্তিক এটা উদ্ভোধন করেছেন, পন্ডিত জহরলাল নেহেরু।এভারেস্ট এর চূড়ায় পদার্পন কারী প্রথম মানুষ তিব্বতিয়ান শেরপা তেনজিং নরগে ও এডমন্ড হিলারীরর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই মিউিজিয়াম ।
রুমে ঢুকতেই নজরে এল কাচে ঘেরা মোকেসে তেনজিং এর মুর্তি । তার পাশেই তিব্বতিয়ানদের ব্যাবহার্য জিনিসপত্র । বাদ্যযন্ত্র থেকে থালাবাটি সবই আছে ।
মিউজিয়ামে সম্পুর্ন হিমালয়ের নকশা, পর্বতারোহীদের ব্যাবহার্য পোষাক আশাক অক্সিজেন মাস্ক চশমা জুতা থেকে শুরু করে ট্রাকিং এর সব জিনিস পত্র । তেনজিং এর ব্যাবহার্য জিনিস এখানে আছে ।
একপাশে দেয়ালে টাঙ্গানো হিমালয়ের ভয়ঙ্কর সুন্দর পর্বত শ্রেনীর বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেয়া দুর্দান্ত সুন্দর সব ছবি ।
কমেন্টস খাতায় ওদের উদ্দেশ্যে বাংলায় লিখলাম ,‘
দেখার অনেক কিছু ছিল কিন্তু সময় ছিলনা -ওরা দর্শনার্থীদের অনুরোধ করছে বেরিয়ে যেতে -বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে।
আমাদের গাইড জিজ্ঞেস করল -রোপ ওয়েতে চড়ব কিনা ? তবে সে সন্দিহান এখনো সেটা খোলা আছে কিনা ।
অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে ক্লান্ত দেহে পাহাড়ের মাথায় চড়তেই বিষন্ন করুন দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখলাম দিনের শেষ বাস্কেটটা ছেড়ে চলে গেল। অনুরোধ করে কোন ফায়দা নেই কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। মিনিট পাঁচেক আগে আসলেই হত। এত উচু উচু পাহাড়ের মাঝে জার্নিটা একইসাথে রোমাঞ্চকর ও উপভোগ্য হত সন্দেহ নেই।
সবার শেষে সল্প আলোতে দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত ‘ লথমল টি গার্ডেন ’ দেখে সেখানকার ঝুপড়ি চা দোকানে ঘন দুধের চা খেয়ে রুমে ফেরা।
রুমে এসে আধাঘন্টা রেস্ট নিয়েই আবার বের হলাম। উদ্দেশ্য মার্কেটগুলো ঘুরে ফিরে দেখা আর ভাল কোন রেস্টুরেন্ট পেলে চট করে খাবারটা সেরে ফেলা। সারাদিন পেটে ভাল কিছু পড়েনি।
দোকান গুলোতে শীতের পোষাক-আশাকই বেশী। প্রচুর দোকানে সেল চলছে। সোয়েটার চাদরের দাম তুলনামুলক বেশ কম। আমার দু 'য়েকটা সোয়েটার পছন্দ হলেও কিনলাম না কেননা -ওগুলো এত ভারী যে, দেশে নিয়ে সাজিয়েই রাখতে হবে গায়ে চড়ানো যাবে না।
রাস্তার দুপাশে প্রচুর ফাস্টফুড ভেজিটেরিয়ান নন ভেজিটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট। ফেরার পথে নন ভেজিটেরিয়ান একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পরলাম। ডাল রুটি পুরি সজ্বি আর আলুর দম অর্ডার দিয়ে বসে আছি তো আছিই আমাদের নাম্বার আর আসেনা। খিদে পেটে কতক্ষন অপেক্ষা করা যায় দুবার গিয়ে তাড়া দিলাম -সমস্যা একটাই অর্ডার দেয়ার পরে সব কিছুই নতুন করে রান্না করা হয়। গরম গরম খাবার আসতেই ঝাপিয়ে পড়লাম। নিমিষেই রুটি শেষ সব্জি ডাল আর আলুর দম তখনো পরে আছে -খিদেও মেটেনি। এখন উপায় অর্ডার দিয়ে আবার অপেক্ষা।
কাউন্টারে গিয়ে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলাম কোনটা দ্রুত হবে -রুটি পরোটা না পুরি।
সে বলল,পুরি ’ ।
‘দিন চারখানা ’
সে আন্তরিকতার স্বরে বলল ,‘ চারখানাকে ছোট ছোট করে আটখানা বানিয়ে দেই? ’
‘যথাস্তু ।তাহলেতো আরো ভাল।’ বিল দিয়ে টেবিলে এসে বসলাম। পুরিগুলো বেশ মোলায়েম ও সুস্বাদু ছিল ঝাল আলুর দম আর সজ্বিতে দিয়ে এবার আয়েস করে খেলাম।
মাহমুদ বলেছিল দার্জিলিংয়ের ‘মম’ নাকি বেশ বিখ্যাত । সেটা শুধুমাত্র সন্ধ্যের দিকেই নাকি বিক্রী হয় ।কাল দুপুরেই তো চলে যাব । তাহলে আজ রাতেই ‘মম’ স্বাদটা নিয়ে নেই। মম’র লোভে তাড়াহুড়ো করে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দেখি শেষ টুকরোটাও সবে বিক্রি হয়ে গেছে।
মাহমুদ আমাকে সান্তনা দিয়ে বলল, মম নেই তাতে কি হয়েছে চলেন আমরা মাটন কষা নিয়ে যাই -রাতে জমবে ভাল।’
আগেরবার এসে সে এখানকার একটা বারে মাটন কষা নাকি খেয়েছিল - তার স্বাদ বলে এখনও মুখে লেগে আছে। তাহলে এবার তার স্বাদতো আমাকে চাখতেই হয়ক। সেই বারে গিয়ে মাটনের অর্ডার রান্নার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। দেরী দেখে মনে হচ্ছিল বাজারে ছাগল কিনতে গেছে! অবশেষে পলিথিনে মোড়া গরম মাংসের প্যাকেটটা হাতে পেয়ে দামটা মিটিয়ে রাস্তা থেকে একটা পাউরুটি কিনে হোটেলে ফিরলাম।
কাল সকালে টাইগার হিলে সূর্যদোয় দেখতে যাব। হোটেল ম্যানেজারকে বলে আগে থেকে গাড়ি বুক করে ট্যরিজম জিপ বুক করে রেখেছি। ওরা খুব ভোরে নিতে আসবে। রিসেপসনে বলে রাখলাম ভোর চারটের দিকে ডেকে দিকে। প্রচন্ড ঝাল সেই মাটন কষা আর পাউরুটি খেয়ে রাত দশটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাতে কেন যেন ভাল ঘুম হলনা। মনে হয় ঘুমের রেশটা গাঢ় হতেই টেলিফোনটা বেজে উঠল।
টেলিফোন তুলতেই ওপাশ থেকে বলল;‘ স্যার । ঘুম ভেঙ্গেছে ? জলদি রেডি হয়ে নিন আপনাদের গাড়ি এখুনি এসে যাবে।’
এত দ্রুত চারটা বেজে গেল! চোখে মুখে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি,আরে!তাইতো!
মাহমুদকে ধাক্কা দিয়ে তুলে দিয়ে আমি বাথরুমে ছুটলাম । দাতটা ব্রাশ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে পোশাক পাল্টাতে যেতেই আবার ফোন বেজে উঠল ।
‘স্যার আপনাদের গাড়ি এসে গেছে।’
‘তাই। এত তাড়াতাড়ি । বসতে বলুন। আসছি।’
পোষাক আশাক পরে বের হওয়ার মুখেই আবার ফোন বেজে উঠল। সূর্য মনে হয় উঠি উঠি করছে ওদের আর ত্বর সইছেনা। শীতের দিনে আমাদের ওখানে সাড়ে ছটা সাতটার আগে সূর্য ওঠেনা -তবে এখানে কি এত সাত তাড়াতাড়ি উঠে পরে। কি জানি বাবা?
গাড়িতে উঠে দেখি শুধুমাত্র একজোড়া দম্পত্তি বসে আছে। আর কেউ নেই নাকি? ওদের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ; আরো দু তিনটে হোটেল থেকে বাকিদের পিক করতে হবে।’
এতক্ষনে তাড়াহুড়োর মর্ম বুঝলাম। তার মানে সবখানেই এমনি করে দশ পনের মিনিট করে গাড়ি থামাতে হবে।
বাকী সব যাত্রী নিয়ে আমাদের গন্ত্যব্যের দিকে যাত্রা শুরু করতে করতে ঘড়ির কাটা পাঁচটা ছাড়িয়ে গেল ।
টাইগার হিলের গেটে গিয়ে পৌছুলাম সাড়ে পাঁচটার দিকে। এখান থেকে টিকেট কাটতে হয়। দশ বিশ ত্রিশ ও পঞ্চাশ রুপি করে টিকেট। কোন টিকেটের কি ফ্যাসালিটিজ জানিনা কিছুই তবুও মাঝারী মুল্যের একটা টিকেট কেনাই নিরাপদ।
মুল চত্বরে গিয়ে দেখি প্রচুর লোক। কম মুল্যের টিকেটে খোলা চত্বরে দাড়িয়ে সুর্যোদয় দেখতে হবে। মাঝারি মুল্যের এক তলা ও দোতালায় বিশাল কাঁচ দিয়ে ঘেরা ঘরে বসে কিংবা সামনে রেলিং দিয়ে ঘেরা বারান্দায় দাড়িয়ে দেখার ব্যাবস্থা । সাথে বিনে পয়সায় এক কাপ চা। দামীটার খবর জানিনা -টিকেটের দাম বাইরে থেকে মনে তিন তলার উপরে সেখানটায় একটু বেশী সুবিধা মেলাই স্বাভাবিক । তবে পুরো তেতালাটাই নাকি আজকের জন্য আগে থেকে বুক হয়ে আছে। দার্জিলিং গিয়েই শুনি সেখানে নাকি শাহরুখ এসেছে শ্যুটিং এর জন্য। জনপ্রিয় এ নায়কের প্রচুর ফ্যান এখানে সেকারনেই সবার মধ্যে অন্যরকম উত্তেজনার আভাস পাচ্ছিলাম। কাল ঈদের নামাজে এত ভীড় হওয়ার গুঢ় কারন - শাহরুখের নাকি আসার কথা ছিল নামাজ পড়তে। আজ এখানে এসে প্রচন্ড ভীড় ও সূর্যদয়ের দৃশ্য দেখার বদলে সবার বার বার সেই তিনতলার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকানো সেইসাথে মৃদু গুঞ্জনের কারন জানতে এক দর্শনার্থীকে জিজ্ঞেস করতে তিনি হেসে বললেন, উপরে স্যুটিং হচ্ছে । শাহরুখ নাকি এসেছে !’
বাইরে প্রচন্ড শীত। বড়জোড় প্লাস তিন চার ডিগ্রী হবে। জিনসের নীচে ইনার টুপি আর উলেন দস্তানা ভেদ করেও শীতল বাতাস ঢুকছে । রুমের মধ্যে একটাই মাত্র ছোটখাট হিটার আছে - সেটা দিয়ে দু চার বর্গফুট এলাকা গরম হয় কিনা সন্দেহ আছে । সুযোগ বুঝে মাঝে মধ্যে ওখানে গিয়ে হাত পা সেঁকে আসছিলাম ।
কাঞ্চন জংঘার সুর্যোদয়ের গল্প অনেক শুনেছি। এমন দুর্দান্ত অদ্ভুত সুন্দর সূর্যদয়ের দৃশ্য পৃথিবীতে বিরল ।
যার আলোতে নেহায়েৎ অল্প সময়ের জন্য সবগুলো বরফে ঢাকা পর্বতশ্রেণীর শিখর লাল আগুনে জ্বলতে থাকে।
আমি ভেবেছিলাম ,সূর্য মনে হয় কাঞ্চন জংঘার পিছন দিয়ে উঠবে তাই প্রথমে সেদিকেই চেয়ে ছিলাম। সূর্যদোয়ের কিছু আগে বুঝতে পারলাম যে, আমি ভুল দিকে চেয়ে আছি । সুর্যদয় হয় বিশ্বের তৃতিয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজংঘার ঠিক উল্টোদিকে - সেই আলোতেই রক্তিম বর্ণে উদ্ভাসিত হয় তার চুড়া ।
পূর্বাকাশ ফ্যাকাসে হলুদ রঙ ছেড়ে গাঢ় উজ্জল হলদে আভা ছড়িয়ে যখন কমলা রঙ ধারন করল তখন বুঝলাম কিছুক্ষনের মধ্যেই সূর্যদের উঁকি দেবেন। অপার্থিব সে দৃশ্যের স্থায়িত্ব অল্পক্ষনের -তাই তখুনি সবাই ক্যামেরা নিয়ে ছুটোছুটি করতে শুরু করল। ঈশ্বরের দেয়া স্মৃতিশক্তিকে বিশ্বাস নেই তাই ক্যামেরায় স্মৃতি ধরে রাখার এ প্রয়াস ।
সত্যিই অপূর্ব অভিভুত হওয়ার মত সে দৃশ্য। কিন্তু তীব্র ঠান্ডা উপভোগের সেই মাত্রা কিছুটা ম্লান করে দিয়েছিল। প্রচন্ড শীতের সাথে কনকনে ঠান্ডা বাতাস পোষাক চামড়া ভেদ করে যেন হাড় মাংস কাঁপিয়ে দিচ্ছিল ।
ফেরার পথে দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত শহর ‘ঘুম’ পড়ল । বিশ্বের সবচেয়ে উচু রেলস্টেশন(সাল-২০০২) ‘ঘুমে’ই অবস্থিত । এখানকার আরেকটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে সারাদিনমান আকাশ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা । একে অতিক্রম করে কোন মেঘপুঞ্জ আর সামনে এগুতে পারেনা -এ পাহাড়ের শিখরে এসে নতশিরে লুটিয়ে পরে । যে কারনেইে এই পাহাড়ি শহরের পুরো পরিবেশ সারাক্ষন স্যাঁতসেঁতে ভেজা ভেজা থাকে।
আমাদের শেষ গন্তব্য ছিল ‘বাতাসী লুফ ওয়ার সেমিট্রি’। সকাল আটটার কিছু আগে পরে সেই পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে দাড়াতেই ভাজা পোড়ার গন্ধে জিভে জল এল। আশে পাশ তাকিয়ে দেখি কয়েকজন মহিলা গরম গরম পিয়াজু আর চপ বিক্রি করছে । এখানে এমন লোভনীয় খাবার দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। অবশ্য ওদের ভাজা ও পরিবেশনের স্টাইলে যে কোন দর্শনার্থী আকৃস্ট হবে । অর্ডার দিলে তবেই ওসব ভেজে দেয় । হাতায় করে পিয়াজুর সব উপকরণ নিয়ে তার মধ্যে বড় বড় পিয়াজের টুকরো দিয়ে কড়াই ভর্তি তেলে চেপে ধরে । বেশ বড় আকৃতির গরম পেয়াজু মরিচের চাটনি দিয়ে খেতে বেশ মজা। আমরা এককাপ চা খেয়ে দখানা করে পেয়াজু কাগজে জড়িয়ে খেতে খেতে পাহাড়ে উঠে গেলাম।
ছোট্ট এ পাহাড়ের চুড়ায় দর্শনীয় তেমন কিছুই নেই । এখানে এসে দর্শনার্থীরা ভীড় করে মুলত দুরবীন দিয়ে বহুদুরের বিস্তীর্ণ পর্বত শ্রেনী খুব কাছ থেকে দেখার জন্য। দশবারজন লোক লম্বা চোঙ্গার মত দুরবীন নিয়ে উচ্চস্বরে বিভিন্ন আকর্ষনীয় মন্ত্যব্যে দর্শনার্থীদের দৃস্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছে।
জনপ্রতি দশরুপী। মাহমুদ একটার দিকে এগিয়ে গেলে আমি গেলাম পাশের আরেকজনের কাছে। দুরবীনে চোখ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে যথাসম্ভব অতিদ্রুত বয়ান করতে লাগল ঐটা হল কাঞ্চন জঙ্ঘা তার পাশেই ধবল গিড়ি .. কাঞ্চন জংঘার উচ্চতা ..কিলোমিটার, ওর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে সেটা হচোছ তিব্বতের পথ আর ওটা হচ্ছে নেপাল... । আমি ভাল করে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলামনা ঝাপসা লাগছিল । দুরবীন থেকে চোখ সরিয়ে তাকে বলতেইস, সে হাতে রাখা কাপড় দিয়ে কাচ পরিস্কার করিয়ে বলল , এখন দ্যাখেন। আবার ওখানে চোখ রেখে দেখি একই অবস্থা। এতক্ষন ডানচোখ বন্ধ করে বাম চোখ দিয়ে দেখছিলাম -কি মনে করে বামচোখ দুরবীনে রেখেই খালি ডান চোখ দিয়ে তাকালাম সে দিকে। আরে, এতো এমনিতেই ভাল দেখা যায়! বুঝলাম লোকটা কমদামী নিচুমানের একটা দুরবীন বিশাল চোঙ্গায় লাগিয়ে লোক ঠগাচ্ছে ।
মন খারাপ করে তার হাতে দশটা টাকা গুজে দিয়ে আশপাশটা খালি চোখেই দেখতে লাগলাম।
এবার হোটেলে ফেরার পালা। দুপুরের আগেই শিলিগুড়ি গিয়ে পৌছুতে হবে। ইচ্ছে থাকলেও আর দুয়েকটা দিন এখানে থেকে যাবার উপায় নেই। অবশ্য চেস্টাও করিনি -হয়তো হবেনা জেনে।
হোটেলে নাস্তা সেরে ব্যাগ গুছিয়ে মাহমুদ আবার বের হল চা পাতা আর সোয়েটার কিনতে। তাকে বিদায় দিয়ে আমি ঘন্টা খানেক গড়িয়ে নিলাম।
হোটেল থেকে বের হতে হতে প্রায় সাড় এগারটা বেজে গেল। বিল চুকিয়ে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার মুখে গতদিনের ড্রাইভার কাম গাইড অশোকার সাথে দেখা -তার দিকে তাকিয়ে একটুকরো হাসি ছুড়ে বিদায়ের উদ্দেশ্যে হাত উঠাতেই সে জিজ্ঞেস করল- এখান থেকে কোথায় যাবেন?
-‘কাঠমুন্ডু।’
- নেপালে যাচ্ছেন!’ সে একটু বিস্মিত হল বলে মনে হয় -ওখানে উঠবেন কোথায়?
- মাঝারী মানের ভাল কোন হোটেলে ।ওখানে গিয়ে ঠিক করব ।’
- কাঠমুন্ডুতে আমার বন্ধুর একটা হোটেল আছে । বেশ ভাল । আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি -।ইচ্ছে হলে সেখানে উঠতে পারেন । আমার নাম বললেই হবে।
অপ্রত্যাশিত ভাবে তার পক্ষ থেকে বাড়ানো সাহায্যের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করতে পারলাম না । লোকটাকে প্রথম থেকেই আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে । সেই সাথে তারও যে আমাদের পছন্দ সেটাও বুঝতে বেগ পেতে হয়নি । খাতা কলম এগিয়ে দিলাম তার দিকে । কলমখানা হাতে নিয়ে সে দুমুহুর্ত কি যেন চিন্তা করল। আচমকা উঠে গিয়ে কাউন্টার থেকে একখানা এ ফোর সাইজের কাগজ চেয়ে এনে চিঠি লিখতে বসল।পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইংরেজীতে বেশ বড়সড় একটা চিঠি লেখা শেষে ভাজ করে খামে পুরে ঠিকানা লিখে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললে-আমার বন্ধুকে এটা দিবেন। ‘অল দ্য বেস্ট’
আমি চিঠিখানা হতে নিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে আসলাম ।

আগের পর্বের জন্য ক্লিক করুন; Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×