somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কখনো মহামানব দেখেছেন? (দ্বিতীয় খন্ড)।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম খন্ডের অংশবিশেষ দিয়ে শুরু করবো দ্বিতীয় খন্ড, আর পুরোটার লিঙ্ক :পুরোটা পেতে হলে এখানে লিঙ্ক:

ফয়েজ সাহেবের যে খটকা লাগেনি তা নয়, তিনি চা পান করতে করতে সেই অদ্ভূত লোকটার কথা ভাবছিলেন, কোন কথা বার্তা ছাড়া এতো পরিচিত কোন মানুষ সম্পূর্ণ চেনা জানা ছাড়া এই ধরণের প্রশ্ন করতে পারে তা কোন ভাবে ফয়েজ সাহেবের মাথায় আসে না, সে চা চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে তার শরীর সব কিছু ঠিক আছে কেবল কোথায় যেন একটা বদল হয়েছে যা সে ধরতে পারছে না, তিনি পরের দিন স্ত্রীকে বৃত্তান্ত বললেন, তার স্ত্রী এমনেতেই সন্দেহ বাতিক, কি বুঝতে কি বুঝে শেষে তারা সাইকিয়াত্রিষ্টের শরপান্ন হলেন।

দ্বিতীয় খন্ড

ধানমন্ডির সাত নম্বর গলিতে মোমিন সাহেবের বিশাল চেম্বার এবং অফিস, পুরো অফিস জুড়ে ক্লিনিক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর ল্যাবের যাবতীয় সরঞ্জাম, যেটা যেখানে থাকার কথা সব সেই ভাবে রাখা, এত পরিস্কার পরিছন্ন যে ফয়েজ সাহেবের ঘাম ধরে যাই, কিছুক্ষণ পর পর সে পানি খেয়ে আবার জায়গায় বসেন, গিন্নি আর তার ভাই যাকে সে অনু-শালা বলেই ডাকে, যাই হউক, পরিবারটি টাকা পয়সা ইত্যাদি দিয়ে সিটিং রুমের বিশাল টিভির সামনে অপেক্ষা করছে, কখন ডাক আসে, ফয়েজ সাহেব কিছুক্ষণ পর পর টিভির দিকে চোখ রাখছে, তিনি দেখছেন এক ছেলে (সম্ভবত গোবিন্দ না সালমান) এবং এক নতুন নায়িকার ঢলাঢলি নাচের দৃশ্য, মাত্র চার নম্বর রোগী বের হলেন এখনো আরো আটজন লাইনে আছেন, তিনি ঘড়ি দেখছেন, আর গিন্নীর নিকট বিরক্তি প্রকাশ করছেন, তার কোন অসুখ নাই গতকাল খুব সম্ভব খারাপ বাতাস লেগেছিলো আর তাতেই পরিবারের সকলের ঘুম হারাম।
এতদিন তিনি মোটেই কারো সাথে কখনও গল্প করতেন না, ইদানীং কথা না বলে থাকতে পারেন না, ওইদিনের খারাপ বাতাসের পর থেকে তার কথা না বললে দম বন্ধ বন্ধ লাগে, তিনি রিসেপসেনে গেলেন, রিসেপসেনিষ্ট মহিলা হাত বাড়িয়ে দিলেন তার দিকে? দেন, আপনার প্রেসক্রিপসন? তার মানে, আমি তো এমনি দাড়িয়ে দেখছি, তাহলে পিছনের জনকে আগে আসতে দেন? আরে ফয়েজ সাহেব ভাবে এরা কি যন্ত্র না রোবট, কোন অভিভ্যাক্তি বা আলগা হাসি নেই, যেন এইটা তার প্রোগ্রাম। তিনি অনেকক্ষণ ধরে পাশের মেয়েটাকে লক্ষ্য করলেন তিনি খুব সম্ভবত রোগীর রিপোর্ট পাচ্ছেন না, একবার ইন্টারকম টিপছেন, একবার পাশের মহিলার সাথে কথা বলছেন, কিন্তু কেমন করে যেন ফয়েজ সাহেবের মনে হলো যে রিপোর্ট’টা মহিলাটি খুজছেন সেটা তার বসা চেয়ারের নীচে, তিনি একটু হাসলেন, হায়রে মানুষ, তিনি একটু গলা খাকাড়ী দিলেন এবং বললেন, মেডাম কিছু যদি মনে না করেন তবে আপনার বসা চেয়ারেই আপনার রিপোর্ট? মনে হলো সেই রুমে একটা বিস্ফোরণ হলো, বুবু’ এইতো, কি রে কোথাও পেলাম না ভালো করে দেখতো, এটা এখানে ই থাকার কথা, আইবু উনার বদলতে পেয়েছি, ততক্ষণে ফয়েজ সাহেবকে ধন্যবাদ দিলেন, হ্যান্ডশেক করলেন, নিজের কার্ড দিলেন, তারপর চা আনাবার জন্য যে বলতে যাবেন ফয়েজ সাহেব মানা করলেন, না না তার দরকার হবে না, একটুক্ষানি কাজ করলাম “ আরে না সার এই ফাইল না পেলে আজ আমার চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত, ফয়েজ সাহেব একটু মশকরা হাসি হাসলেন, ঐদিকে তার শালা আবার তার দিকে আসছেন, দুলাভাই আপা ডাকছেন? শালার মুখে মিচকি হাসি, এই হারামজাদা নিজেকে সবজান্তা মনে করেন? এইটারে একটা শিক্ষা দিতে হবে সময়মতো, তিনি আবারও ফিরে গেলেন তার সীটে, কি হলো? তিনি গিন্নিকে শুধালেন, যেমন বসতে বলেছি তেমন বসে থাকো, এতো নড়াচড়া করার দরকার কি, তিনি আবারও টিভিতে মন দিলেন, তার অফিস কামাই একদম অপচন্দ, তবুও তিনি আর কি করতে পারেন, টিভির দিকে চোখ।

টিভি স্ক্রিনে ভালভাবে মনোযোগ দিয়ে এবার আরেক বিপত্তি, ডাক্তারের চেম্বারে এইরুপ টিভি আগে ছিলো কিনা তিনি মনে করতে পারলেন না, আশে পাশে কত রোগী আত্মীয়, ইয়ং ছেলে মেয়ে..এরা কি ভাবে নিচ্ছে বিষয়টা। নাকি বিরক্তি কাটাবার এইটাই একমাত্র মন্ত্র, যাই হউক, তিনি দেখছেন এবার নায়ক এমন ভাবে দাড়িয়ে নায়িকাকে ধরে এমন বাকা করলেন যে তার মাথা আর মাথাতে রইলো না, তিনি তাড়াতাড়ি বাথরুম কোনদিকে তার হিসাব করছিলেন, আচ্ছা এটা কি তার খারাপ বাতাসটা যা তাকে মহামানব দিয়েছেন, না না, এটা কোন যুগ ২০১১ ডিসেম্বর, না সব তো ঠিকই আছে, তাহলে এত সবাই বসে দেখছে আর তার কিনা পেন্ট ভিজে গেলো, এটা একটা কথা। তিনি মন খারাপ নিয়ে রুমাল দিয়ে এমন ভাবে জায়গাটাকে মুছে একটু পানির ছিটাও দিলেন যেন বুঝা যাই যে প্রস্রাবের সাথে পানি খরচ করতে গিয়ে কিছু পানি সেখানে লেগেছে, এর বেশী কিছু নয়, তিনি আবার নিজের সীটে বসলেন, ঠিক তার পর পর ই শালা তার সিট থেকে উঠে দুলাভাইয়ের পাশে বসলেন আর মুচকি হাসি মুখে। শালার বাচ্চা শালা কি তাহলে সব বুঝে ফেলেছে, না, এমনতো হওয়ার কথা না, শালা এবার বলা শুরু করলো, দুলাভাই এই ছবি যেটা দেখাচ্ছে এটাতে অমিতাভবচ্চন আছে, আগে দেখেছন? হারামজাদা বলে কি রে? আরে আমি কি ছবি দেখি? না কোন সময় দেখেছি? সেইতো পাকিস্তান আমলে দেখেছিলাম আন ফিলিম, বার এই বেটা কি কয়, শুনছো গিন্নি হারামজাদা’টা আমাকে কি বলে, আমি নাকি অমিতাভ বচ্চনের ছবি দেখেছি, গিন্নি বিরক্ত হয় বলে, আস্তে কথা বলনা, দেখনা সব দিকে রোগী, তুমি উত্তেজিত হলে ডাক্তার আর তোমাকে কি দেখবে বলো? প্লীজ চুপচাপ একটু বসো আর দুইজনের পরে আমরা, গিন্নী ইশারাতে তার ছোটভাইকে দুলা ভাইয়ের পাশ থেকে সরে যেতে বল্লেন। শালা সরে বসলো ঠিকই, কিন্তু কিছুক্ষণ পড়ে সেখানে এক নার্স এমন ভাবে বসলেন পায়ের উপর পা তুলে তারপর কি সব যেন রুগীর বৃত্তান্ত লিখছেন, ফয়েজ সাহেব কেবল তাদের কান্ড দেখছেন আর দেখছেন নার্স’টার মোটা রান, কি অবলীলায় এরা পুরুষের পাশে বসে যাই, বড় চিন্তার বিষয়, তবে সেটা নিয়া চিন্তা ভাবনা করার আগেই তাদের ডাক পড়লো, ফয়েজ সাহেবের নার্সের মোটা মেদবহুল রান দেখা আপাতত সেখানে শেষ হলো।

জুতা খুলে ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকার নিয়ম। সবাই নিয়ম পালন করে রুমে ঢুকলো, রুমে হালকা মিষ্টি বাতি সেই সাথে একটা রোমাঞ্চকর বাতি জ্বলছে, ডাক্তার একজন হাই প্রোফাইলের ব্যাক্তি যাকে দেখেই বুঝে নেওয়া যাই অনেক ঘাটের জল খাওয়া, ফয়েজ সাহেব সব খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন, তিনি যা দেখার কথা না তাও দেখলেন যে ডাক্তারের তিন নম্বর ড্রয়ারে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট, তাহলে ডাক্তার সাহেব স্মোক করেন, যাই হউক ভাল হয়েছে, এই বিষয়টা নিয়ে একটু কথা বলা যাবে, ডাক্তার খুবই আন্তরিকভাবে তাকে নিজের ছেলের মতো পাশে সুন্দর একটা আরাম বেডে শুয়ে দিলেন, তার বেশ মজায় লাগছিল, কেননা সে জানে তার কিছুই হয়নি। যেখানে তাকে লম্বালম্বি করে শুয়ে দেওয়ার পর পরই ডাক্তার সাহেব তার সাথে কথা বলতে বলতে তার হাট বিট, প্রেসার ইত্যাদি ইত্যাদি সব করিয়ে নিলেন, ডাক্তার সাহেব নিজের সিটে বসে নাকে চশমা বসিয়ে নিজ প্যাডে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা ও তার রির্পোট নিয়ে দুইদিন পর দেখার করতে সময় দিলেন।

তারা তিনজনের মুখে কোন কথা আপাতত জোগালো না কারণ প্রেসার আর হার্টবিট মেপে কি আর রোগ বুঝা যাই? রাত্রে ভাই বোন এই চিন্তা করলেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো এগুনের সিদ্বান্ত নিলেন।

প্রায় চতুর্থদিনের এক দুপুরে ফয়েজ সাহেবের বাসায় এলেন, না, তেমন কিছু নয় জাষ্ট দেখতে আসা, শরীর কেমন, শক্তি কি আগের মতোই আছে না আরও বাড়ছে, প্রেশার হাই না লো? ইত্যাদি বলে বলে জ্বালিয়ে বিধায় নিলেন। ফয়েজ সাহেব কিছু একটা আচ করার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই তার মাথায় ব্যাপারটা ধরা দিচ্ছেনা কেন? দিলদার সাহেব তার জুনিয়ার আজ হঠাত তার খবর নিতে বাসায় এলো, মিলছে না, যদিও তিনি এক সপ্তাহ আগে অসুস্ততার ছুটি পাশ করিয়ে এসেছেন.............বিষয়টা কি একটু জটিলের দিকে যাচ্ছে গিয়া না?.......(আপাতত দ্বিতীয় খন্ডের সমাপ্তি)

(তৃতীয় খন্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, প্লীজ, একটু বৈষয়িক কাজে থাকবো)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×