সময় আর কত হবে কেবল সন্ধ্যা হয়েছে - বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের ফুড ল্যাবেলে বসে কফি খাচ্ছিল অরন্য রিজভী । খুব দারুন লেখে ছেলেটা । অল্প কিছুদিনেই তার লেখার প্রেমে পরেছে কিছু বন্ধু । বেশ প্রশংসা পাচ্ছে ফেইস বুকে । বিশেষ করে কিছু মেয়ে তার লেখায় খুবেই সুন্দর কমেন্ট করে । কফি চুমুক দিয়ে মোবাইল স্ক্রিন তাকিয়ে আছে । পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে বলল, ভাই আপনি অরন্য রিজভী তাইনা?
অরন্য রিজভী মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে গেল । বাহ চমৎকার অপূর্ব এক কিশোরী যেন সদ্য ফোঁটা পদ্ম ফুল । এত সুন্দর যে একদম কল্পনার রাজকন্যা বলা চলে । । সাদা কালো সিম্পুল পোশাকে তার কাজল কালো চোখ গুলো হিরের মত চকচক করছে।
অরন্য রিজভী বলল , জ্বি আমি অরন্য রিজভী কিন্তু আপনাকে চিনলাম না!
আপনার বাড়ি কিশোর গঞ্জ তাই না ?
হ্যা আমার বাড়ি কিশোর গঞ্জ । কি করে জানেন ?
মেয়েটা বলল আমাকে চিনতে পারেন নি? রোজই তো আমার ছবিতে লাইক দেন। কমেন্ট করেন । একটু আগেই তো পোস্ট দিলেন - আজ বসুন্ধরার কফিতে ডুব দিয়ে খুঁজে নিব ক্যাফেইনের রাজ কন্যার ঘুম ।।
-- বাহ আপনি দেখি আমার লেখা হৃদয়ে বুনন করে নিয়েছেন । তা মেয়ে আপনার নাম আপনার নাম?
---এখনো চিনেন নি কবি আমাকে ?
---নাহ চিনতে পারছি না। আজ চোখ গুলো শুধু ঘুমের গোলামী করে যাচ্ছে ।
--- কেন সারা রাত কি শুধু মেয়েদের সাথে চ্যাট করেই পার করে দেন ।
---- ঠিক তা না । কোন মেয়ে আমাকে কমেন্ট করলে আমি তার উত্তর না দিয়ে পারি না। এই নারী জাতি না থাকলে পুরুষ মানুষ গুলো আত্ম হত্যা করে মরে যেত ।
---- মেয়েটা হেসে বলল হ্যা অনেক পুরুষ আজো আত্ম হত্যা করে এই নারীর জন্য ।
--- বাহ দারুন বলেছেন তাহলে মেয়েরা করে না আত্ম হত্যা ।
---- প্রেমের অভিমান বড়ই কঠিন - নারী পুরুষ বুঝে না- সমান ভাবেই ডুবিয়ে দেয় ।
---- হ্যা ঠিক বলেছেন । তা নামটা কি বলা যায় ?
ভাই আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেণ্ড অজানা অথিতি । আমি তো ভাবছি আমাকে দেখলেই আপনি চিনে ফেলবেন। আমি আপনার লেখা খুব মন দিয়ে পড়ি। খুবেই চমৎকার লেখেন । আর আপনার হাসিটা পাগল করার মতো ।
--- অজানা অথিতি এটা কোন নাম হল । ভাল নাম কি ?
--- আপনার নাম যদি অরন্য রিজভী হতে পারে তবে আমি অজানা অথিতি ।
অজানা অথিতি নামের একটি মেয়েকে চিনি কিন্তু তার কোন ছবি নাই । মাঝে মাঝে খুবেই চমৎকার কমেন্ট করে ।
অরন্য রিজভী বলল কফিটা খুবেই উজ্জ্বল রোদের মতো । পান করবে কি ?
মেয়েটা বলল- করা যাবে পান কিন্তু একটা সর্ত আমার প্রিয় কবিকে আজকের বিল টা আমি দেব ।
--- আচ্ছা বিল যে কেউ দেক । চল ডুবে যাই আজকের কফিতে রোদ মেখে নেই এই বসুন্ধরায় ।
কফি খেতে খেতে ভালই কথা জমে উঠল। সে বনশ্রী থাকে থাকে, প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ছে মার্কেটিং । কথার মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো হাসি দেয় । মুক্তার মতো দাত গুলো তার প্রতি আমার আকর্ষণ টা আর বাড়িয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ তার একটি ফোন আসল অজানা অথিতির । সে ফোন কেটে দিয়ে আবার কথার মধ্যে ফিরে এল। গরম কফিতে তার গোলাপি ঠোঁট আরও গোলাপি হচ্ছে । একটু একটু করে দেখছে , মাঝে মাঝে চোখের সাম্নের চুল গুলো কানে সাথে রাখতে চেষ্টা করছে ।
আবার ফোন আসল ।
অরন্য রিজভী বলল মানুষ খুব দরকার ছাড়া কেউ কাউকে ফোন দেয় না - ফোন পিক করুন।
ফোন পিক করে বলল, কি হয়েছে? কখন ? কার? কোথায়? ওহ আচ্ছা রক্ত লাগবে? কার নাম্বার লিখব? আচ্ছা ওয়েট ওয়েট আমি নাম্বার লিখছি। কবি একটা নাম্বার লিখুন।
পকেট থেকে অরন্য রিজভী ফোন বের করে দিল। সে নাম্বার তুলতে তুলতে বলল, ভাইয়া একটু সামনে ওই মোড়ে যাব চায়ের বিলটা আমি দিয়ে দেই? মেয়েটা নাম্বার টিপে ফোন কানে দিল ।
আমি বললাম, আরে না না বিল আমি দিচ্ছি।
অরন্য বিল দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে আজকের রাজকন্যা নাই , মোবাইলও নাই। রাজকন্যা গায়েব।
আরে মেয়েটা কই গেল । না মেয়েটা কোথাও নাই । বসুন্ধরার হাজার হাজার মানুষের ভিরে মেয়েটা নাই ।
অরন্য রিজভী একজনের কাছ থেকে ফোন নিয়ে তার নিজের নাম্বারে ফোন দিল । লাইন ব্যস্থ ।
যার কাছ থেকে ফোন নিল সে বলল মেয়েটা আসলে চোর । আপনাকে বোকা বানিয়ে মোবাইল নিয়ে গেছে । ভাগ্য ভাল আপনার
এর চেয়ে বেশী কিছু হতে পাড়ত ।
অরন্য রিজভী আজ কি সত্যই বোকা হয়েছে নাকি চোরের পাল্লায় পরেছে । কাউকে লজ্জায় বলতে পারছে না।
রাতে বার বার মেয়েটার সেই হাসি আর চুল গুলো তার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো । বাসায় এসে কম্পিউটারের সামনে বসে ভাবছে
এটা নিয়ে একটা পোস্ট দিবে । লগ ইন করলো কম্পিউটারে ফেইস বুক । মনটা তার খুবেই খারাপ । বাসায় মায়ের ফোন থেকে শেষ বার আর একটা কল দিল । ফোন বন্ধ ।ফেইসবুকে যেয়ে মেয়েটা কে খুজতে লাগলো ।
হ্যা পেয়েছে অজানা অথিতি । একটা ম্যাসেজ দেয়া আছে তার জন্য ।
প্রিয় কবি - আপনার মোবাইল এ চার্জ নেই । আর আই ফোনের চার্জার কিনে আমি টাকা নষ্ট করতে পারব না । মনের ভুলে আমি আপনার মোবাইল নিয়ে চলে এসেছি । এটা আমার নাম্বার - পিলিস কল দিয়ে আমাকে সরি বলার সুযোগ দিয়েন ।
কাল কি আমার আবার কফি খেতে পারি হাতির ঝিলে এ । দারুন একটা কফি হাউজ হয়েছে । যেই খান থেকে ইঞ্জিলের নৌকা গুলো ছেরে যায় । অরন্য রিজভী ম্যাসেজ দিল । আমার ফোন নেই । তাই কল করতে পারলাম না। কাল বিকালে দেখা হবে হাতির ঝিলে ।
আরন্য রিজভী আজ একটা সবুজ পাঞ্জাবী পড়ে হাতির ঝিলে হেটে হেটে যাচ্ছে কফি হাউজের দিকে ।
অজানা অথিতি বসে আছে চুপ করে । আর অপেক্ষা করছে তার প্রিয় কবির জন্য ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৮