somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'বিষয় নদী' এবং একটি কৈফিয়ত

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাপামাধ্যমে সচরাচর যেসব কথোপকথন দেখা যায়, একুশে বইমেলায় (২০১২) 'ঐতিহ্য' থেকে প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকার তার তুলনায় দৈর্ঘ্যে অনেক বড় হলেও নজিরবিহীন নয়। কিন্তু এর বিশেষত্ব অন্যত্র। এই আলাপচারিতার বিষয় একটি-ই, তাও আবার নদী। সাক্ষাৎকারদাতাও এমন একজন, বলতে গেলে যার সারাজীবন কেটেছে নদীর সঙ্গে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নদী ও পানি ছিল তার অন্যতম পাঠ্য। পিএইচডির বিষয়ও ছিল নদী। বুয়েটে শিক্ষকতার বিষয় মোটাদাগে পানিসম্পদ হলেও সেখানে ছিল নদীরই আধিপত্য। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে ছিলেন দেড় যুগ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার কর্ম ও তৎপরতায় ঘুরেফিরে এসেছে নদী। নদী রক্ষা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তার মৌলিক চিন্তা সুবিদিত। বড় কথা, অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বিশেষজ্ঞ হলেও তার ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের বুঝতে কষ্ট হয় না। নদী নিয়ে আগ্রহী সাধারণ নাগরিকেরই এই বই সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে।
এও বলে রাখা ভালো, যদিও দুই মলাটের মধ্যে বৃহৎ সাক্ষাৎকার হিসেবে হাজির হয়েছে; যদিও সাক্ষাৎকারদাতা, গ্রহীতা এবং বিষয় অভিন্ন; এটি মূলত তিনটি সাক্ষাৎকারের সংকলন। বিভিন্ন সময়ে সেগুলো দৈনিক সমকালের ঈদসংখ্যা ম্যাগাজিনে (সেপ্টেম্বর ২০০৯), রিভারাইন পিপল-এর বর্ষপত্র 'নদী' (মার্চ ২০১১) এবং দৈনিক সকালের খবরের উদ্বোধনী সংখ্যায় (মে ২০১১) প্রকাশ হয়েছে। তিনটি সাক্ষাৎকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমকালের সম্পাদকীয় পাতার জন্য গৃহীত একটি সাক্ষাৎকারের (জুন ২০০৯) অংশবিশেষ। সর্বশেষ, সাক্ষাৎকারটি পুস্তাকারে প্রকাশের উদ্যোগের পর, নতুন কয়েকটি ইস্যু যুক্ত এবং পুরানো কয়েকটি ইস্যু হালনাগাদ করা হয়েছে। পুনরাবৃত্তি এড়াতে বাদ দিতে হয়েছে কিছু প্রসঙ্গ। কয়েকটি সাক্ষাৎকারকে জোড়া দিতে গিয়ে কিছু প্রশ্নও পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে। আগে যারা এসব সাক্ষাৎকার পড়েছেন, তাদের জন্যও নতুন কিছু রয়েছে এই বইয়ে। আর সবগুলো একত্রে পাওয়ার সুবিধা তো রইলই।
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি ততোধিক দীর্ঘ সময় ধরে সেসব স্থানে, যেভাবে গ্রহণ করা হয়েছে, তাও কম কৌতুহলউদ্দীপক নয়। বিস্তারিতভাবে সেগুলোই আলাদা লেখার বিষয় হতে পারে। মাত্র তিনটি সাক্ষাৎকার হলেও এর কোনটি স্বভাবতই এক বৈঠকে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। কেবল দৈর্ঘ্য নয়, এর পেছনে শ্রদ্ধাভাজন আইনুন নিশাতের ব্যস্ততাও কতখানি দায়ী, তাকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তারা বুঝবেন। বই আকারে প্রকাশ করতে গিয়ে নানা বিষয়ের পাশাপাশি সেসব দিন-রাত ও ঘটনা নতুন করে মনে পড়ছে। আইইউসিএন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অফিস কক্ষ, সমকালের বোর্ডরুম তো বটেই; সাক্ষাৎকারের একটি অংশ গ্রহণ করেছিলাম এক সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে বসে। কোনো একটি ছোটোখাটো অপারেশনের পর তার স্ত্রী তখন সেখানে। ডাক্তার বলেছেন, হাসপাতালে দু’দিন থেকে যাওয়া ভালো। সেই সময় কেবিনের পাশের বসার কে আমারা দুইজন প্রশ্নোত্তর চালিয়ে যাচ্ছি। ঈদ সংখ্যা ধরতে হবে, সময় খুব কম। সাক্ষাৎকারদাতার হাতেও সময় নেই। একদিন বিকেলে বললেন, সন্ধ্যার পর বাসায় যেতে। 'পদ্মমহল'-এর সেই সন্ধ্যারাতে এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চলে গেল। মোমবাতি জ্বালিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, সামনে রেকর্ডার, খাতা-কলম নিয়ে আমি।
আরেকবার, তিনি পরদিনই বিদেশে যাবেন, ফিরতে কিছুদিন লাগবে। এদিকে 'নদী' প্রকাশ করে ফেলতে হবে তার আগেই। টিপাইমুখের মতো কয়েকটি জরুরি বিষয়ে তার ভাবনা তখনও শ্রুতিবন্দী হয়নি। আর বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদী বিষয়ক সাক্ষাৎকার ওই ইস্যু ছাড়া সম্পূর্ণ হয় বা কীভাবে? পরদিন সাতটার আগে কি মোহাম্মদপুর যেতে পারি? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবনে বেলা করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তখনও ছাড়তে পারিনি। তারপরও রাজী হলাম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। চোখ কচলাতে কচলাতে হাজিরও হলাম। ড্রইং রুমে কুণ্ঠিত আমি বসে, গৃহকর্তা ও কর্ত্রী বিদেশযাত্রার ব্যাগ গোছাচ্ছেন। সব শেষ করে হাসিমুখে সামনে বসলেন তিনি। আবার আলাপ। চা শেষ হয়, প্রসঙ্গ সম্পন্ন হয় না। অগত্যা উঠে পড়া। সকালের প্রায় সুনশান রাস্তায় গাড়ি ছুটছে বিমানবন্দরের দিকে; তিনি রেকর্ডারের সামনে কথা বলছেন টিপাইমুখ প্রসঙ্গে।
এখন কেবল কৃতজ্ঞতা নয়, বিস্ময়ও জাগে। দেশের শীর্ষস্থানীয় নদী বিশেষজ্ঞ এক তরুণ সাংবাদিকের এত আবদার মেনে নিয়েছিলেন কেন? নদীর প্রতি দায়বদ্ধতা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাই না। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা কেবল এই কারণেও নয় যে তিনি আমাকে সময় দিয়েছিলেন, ধৈর্য সহকারে আমার হাতুরে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। নদীর প্রতি আমার যে ব্যাখ্যাহীন আগ্রহ, এই সাক্ষাৎকার শেষে তার সঙ্গে খানিকটা জানাশোনাও যুক্ত হয়েছে। আমরা কিছু তরুণ 'রিভারাইন পিপল' নামে যে অলাভজনক উদ্যোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, তাতে আমার ভূমিকা আরও ঋদ্ধ করার ক্ষেত্রে এই সাক্ষাৎকারের শিক্ষা পাথেয় হয়ে থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শ্রেণীকক্ষে সাক্ষাৎকার সম্পর্কে যে তাত্ত্বিক বিষয়াদি জানার চেষ্টা করেছি, এই বইয়ের নেপথ্যের অভিজ্ঞতা তাতে প্রায়োগিক উপাদান যুক্ত করেছে।
নদী বিষয়ে অধ্যাপক আইনুন নিশাতের এমন একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরিকল্পনা বস্তুত অনেকদিন ধরেই মাথার মধ্যে ঘুরছিল; এখন যখন বই আকারে প্রকাশ পেল, স্বভাবতই ভালো লাগছে। আশা করি নদী নিয়ে আগ্রহীরাও বইটি পড়ে অন্তত বিরক্ত হবেন না।
হ্যাপি রিডিং।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×