somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিসংঘ জলপ্রবাহ সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করছে না কোন দুঃখে?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতিসংঘ জলপ্রবাহ সনদে (ইউএন ওয়াটারকোর্সেস কনভেনশন, ১৯৯৭) বাংলাদেশ স্বাক্ষর করছে না কেন? আগে যদিও মৃদু-মন্দ ছিল, টিপাইমুখ ডামাডোলে বেশ জোরেশোরেই উঠেছে কথাটি। বারবার উত্থাপিত এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য মিলছে না। জানা যাচ্ছে, কমবেশি ২৭ বছরের প্রস্তুতি, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে ১৯৯৭ সালের ২১ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে "দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-নেভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্সেস" গৃহীত হয়েছিল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। ১০৬টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভোট প্রক্রিয়া বর্জন করেছিল ২৬টি দেশ, অনুপস্থিত ৩১টি। বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল মাত্র তিনটি দেশ- বুরুন্ডি, চীন ও তুরস্ক। কনভেনশনটি কেবল আন্তর্জাতিক জল-আইনের বিবর্তনের ধারায় বড় ধরনের সাফল্য নয়, সাধারণ পরিষদে পাশ হওয়ার সময়টিও আখ্যায়িত হয়েছিল "ঐতিহাসিক মুহূর্ত" হিসেবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, খোদ কনভেনশনটিও এখন ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের কোনো কনভেনশন কার্যকর করতে অন্তত ৩৫টি সদস্য দেশের অনুস্বাক্ষর বা রেটিফিকেশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত ২২টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। অনুস্বাক্ষর করেছে প্রয়োজনের অর্ধেকেরও কম, ১৬। অথচ নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, এর প্রস্তাবকারী দেশের সংখ্যাই ছিল ৩৮টি। প্রস্তাবকারী দেশগুলোই যদি অনুস্বাক্ষর করত, এটি কার্যকর হতো আরও ১০ বছর আগে।
প্রস্তুতি ও পাশ পর্বে কনভেনশনটিকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানিসম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে দেখা হচ্ছিল। দেখা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অতীব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে। বস্তুত নৌ চলাচলের বাইরে পানিসম্পদ ব্যবহার ও বণ্টনের ক্ষেত্রে গত দুই শতকে যেসব ইতিবাচক তত্ত্ব ও তদারকি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, কনভেনশনটিতে তার সবকিছুর সন্নিবেশ ঘটেছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি কার্যকর হলে পানি বণ্টন, প্লাবন ও দূষণ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, তার আন্তর্জাতিক সমাধানসূত্র মিলত। এমনকি বঞ্চিত রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। তারপরও কনভেনশনটি থেকে হঠাৎ সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল কেন?
বিরোধিতার তর্জনী তোলা হচ্ছে ওয়াটারকোর্সেস কনভেনশনের সাত নম্বর ধারার দিকে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রবাহের ক্ষেত্রে একটি দেশ এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না, যা আরেকটি দেশের জন্য "ধর্তব্য ক্ষতির" কারণ হয়। ফলে প্রভাবশালী যেসব দেশ গায়ের জোরে আন্তর্জাতিক প্রবাহের মর্জিমাফিক ব্যবহার করছে, তারা বেঁকে বসেছে। কেবল নিজেরা বিরোধিতা করছে না, তাদের প্রভাববলয়ে থাকা দেশগুলোকেও নিরুৎসাহিত করছে। আবার কিছু কিছু দেশ, বিশেষ করে ইউরোপে, ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে যেসব দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন করেছে, সেগুলো ইউএন ওয়াটারকোর্সেস কনভেনশনের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর। ফলে তারা বলছে যে ইউএন কনভেনশনটি স্বাক্ষর-অনুস্বাক্ষরের প্রশ্ন তাদের কাছে অবান্তর। কিন্তু একটি ভালো উদ্যোগের অচলাবস্থা থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে তারা কেন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে, সেটি একটি প্রশ্ন। না-কি প্রভাবশালী দেশগুলোর খাতিরে গজর দেখাচ্ছে না।
এসব বড়দের ব্যাপার; বাংলাদেশ কনভেনশনটিতে স্বাক্ষর করছে না কোন দুঃখে? অথচ আমরা গোড়া থেকেই কনভেনশনটির পক্ষে ছিলাম। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এর প্রস্তাবকারী ২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। যদিও সেটা বর্ণানুক্রমে, এর প্রতীকী মূল্য নিশ্চয়ই রয়েছে। ৫৭টি অভিন্ন নদী তথা ভূ-উপরিস্থ পানিসম্পদের সব উৎসের ভাটিতে থাকা একটি দেশের জন্য ইউএন ওয়াটারকোর্সেস কনভেনশনের ব্যবহারিক উপযোগিতা নিয়ে নতুন করে কী বলার আছে? এমনও নয় যে ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীর সঙ্গে আরও উন্নত দ্বিপক্ষীয় রক্ষাকবচ নিয়ে বসে আছে। বরং গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবম অনুচ্ছেদে অভিন্ন প্রবাহে "অপরের জন্য ক্ষতিকর কিছু" না করার যে অঙ্গীকার রয়েছে, ভারত তা সকাল-বিকেল লঙ্ঘন করছে।
এখানেই পরিহাসের পরিসমাপ্তি নয়; একবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন মেজর (অব.) এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম তখন পানিসম্পদ মন্ত্রী। এ ব্যাপারে মত নেওয়ার জন্য দেশীয় যেসব বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারা সবাই প্রায় একবাক্যে সায় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশের উচিত অবিলম্বে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা। অন্যান্য দেশও যাতে এতে স্বাক্ষর করে, সেজন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। তারপর কী এক অদৃশ্য ইশারায় বিষয়টি অগ্রসর হয়নি। সে ইশারা নিশ্চয়ই হাফিজউদ্দীন আহমেদেরও উপরমহল থেকে এসেছিল।
কে তিনি? পাঠক অনুমান করতে পারেন। আর যারা বিএনপির ভারতবিরোধীতার জোশে মুগ্ধ, তাদের জন্য এই ঘটনা অন্যতম শিক্ষণীয় হতে পারে।
এখন যখন আবার তিস্তা, টিপাইমুখ ও তিতাস নদী রক্ষার প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে, কাদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে জাতিসংঘ জলপ্রবাহ সনদ স্বাক্ষরের দাবিটি আরেকবার উঠুক না!
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×