somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা ইলিশ বনাম মানব শিশু

১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপকূলীয় অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে অভিযান চলছে। যেসব জেলে মা ইলিশ ধরছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান। বিভিন্ন এলাকা থেকে কেবল মণকে মণ ইলিশ উদ্ধার নয়, এর সঙ্গে জড়িত জেলেদের কারাদণ্ড দিচ্ছে, জরিমানা করছে প্রশাসন। কোথায় কী পরিমাণ ইলিশ আটক হয়েছে, কতজন জেলে দণ্ড পেয়েছেন, গত কয়েক দিনে তা সংবাদমাধ্যমের নিয়মিত শিরোনামে পরিণত হয়েছে। তবে জীবিকা বলে কথা। পেটের দায় বড় দায়। প্রশাসনের কড়াকড়ি আর জেলেদের কৌশলের যেন পাল্লা চলছে। ইলিশ ধরতে নিজেরা না গিয়ে জাল ও নৌকা দিয়ে শিশুসন্তানকে নদীতে পাঠাচ্ছেন জেলে মা-বাবা। প্রশাসনের নজরদারির কাছে সে কৌশলও মার খেয়েছে। কয়েকটি শিশু এমন অপকর্ম করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। সে ক্ষেত্রে জাল, নৌকা ও ইলিশ হয়তো কেড়ে নেওয়া যায়; জরিমানার সুযোগ কোথায়? ৮-১০ বছরের শিশুকে কারাগারেই-বা পাঠায় কীভাবে? সুতরাং অন্য ব্যবস্থা। সমকালে বুধবার প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি শিশুকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে নৌকার ওপর, রোদে। ভীত-সন্ত্রস্ত শিশুরা কান ধরে কাঁদছে।
সন্দেহ নেই, এ মাসের গোড়ায় উপকূলীয় এলাকার সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় পূর্ণিমার আগে-পরের ১০ দিন ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, এসব শিশু তা স্পষ্টতই ভঙ্গ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে শিশুদের শাস্তি দেওয়া কি আইনসম্মত? এ বিধান কোথায় আছে যে, শিশুকে এমন অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া যাবে? তার মানে, শাস্তিদাতা কর্তারাও তো আইন ভঙ্গ করছেন। তাদেরকে আইন ভঙ্গের জন্য কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলে কেমন হয়?
মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যাতে ইলিশের উৎপাদন বাড়ে। আরও ভেঙে বললে, যাতে ইলিশের সন্তান রক্ষা পায়। ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে এদেশের মানব সন্তানদের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধানই লক্ষ্য। কিন্তু আলোচ্য ছবিটির ক্ষেত্রে ইলিশশিশুর সুবিধার জন্য সেই মানবশিশুকেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে!
চরমপন্থী পরিবেশবাদীদের কেউ কেউ মানুষের চেয়ে প্রকৃতির মূল্য বেশি দেন। এই কর্তারা তেমন পরিবেশপ্রেমী হলেও না হয় মানা যেত। এরাই তো আবার নদী কিংবা মৎস্য সম্পদের বারোটা বাজাচ্ছেন! আমাদের নদীগুলোতে ইলিশ কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ অতি আহরণ নয়; শিল্প দূষণ। ইলিশের জীবনচক্র যারা জানেন, তারা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝবেন। এখন, অভিযানে নামা হামবড়া কর্মকর্তারা কি পারবেন নদী দূষণকারী শিল্পপতিদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখতে?
প্রশ্ন আরও আছে, মা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে যতটা তোড়জোড় করে অভিযান চালানো হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা জারি করার সময় কি ততটা উৎসাহ ছিল? ডিম্ববতী ইলিশ রক্ষায় ২০০৬ সাল থেকে অক্টোবরের শেষার্ধে কাগজে-কলমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতো। কিন্তু ইতিমধ্যে তিথি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তা কাজে আসছিল না। ফলে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় অক্টোবরের ৬ থেকে ১৬ তারিখ। অক্টোবরের এক তারিখ মৎস্য অধিদফতর এ সিদ্ধান্ত নেয়। মাত্র পাঁচ দিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন কতটা যৌক্তিক? উচিত ছিল মা ইলিশ রক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেশ আগে থেকে যথেষ্ট প্রচার চালানো।
এ ধরনের কর্মসূচি মেনে চলার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও তো জেলেদের আরও সময় দেওয়া দরকার। উপকূলীয় জেলেরা সাধারণত ১০-১৫ দিনের জন্য ইলিশ ধরতে বেরিয়ে যান। যারা ২ তারিখের আগেই জাল-নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন, তারা কীভাবে নিষেধাজ্ঞা মানবেন? এ ধরনের একেকটি ট্রিপে যাওয়ার আগে তারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন, ঋণ বা আগাম দাম নিয়ে যান। ফিরে এসে ইলিশ বা অর্থ দিয়ে তা শোধ করেন। যেসব জেলে নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই মাছ ধরতে গেছেন, তারা ঋণ শোধ করবেন কীভাবে? ওই দশদিন দিন এনে দিন খাওয়া জেলেদের সংসার চলবে কীভাবে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারির আগে এটাও বিবেচনা করা উচিত নয় কি? নাকি প্রশাসন কেবল কিল মারার গোঁসাই?
ইলিশ সুরক্ষা কার্যক্রম অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য; কিন্তু তারও আগে ভাবতে হবে জেলেদের সুরক্ষার কথা, তাদের মর্যাদার, আবেগ ও সংস্কৃতির কথা।
[লেখাটি ইষৎ সংক্ষেপে, আমার পেননেমে, বৃহষ্পতিবারের সমকালে ছাপা হয়েছে]
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×