somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুড়িগঙ্গারও দুর্গতিনাশ হোক

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে আর সাদা কাশফুলে মাটি মুড়িয়ে বাংলায় এসেছেন মাতৃরূপিণী দুর্গা। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে যে আনন্দ তা অন্যদেরও স্পর্শ করে দুর্গা পূজা উৎসবকে করে তুলেছে সর্বজনীন। সারাদেশে এবার মণ্ডপের সংখ্যা ২৮ হাজার। গত বছরের চেয়ে দুই হাজার বেশি। ঢাকেশ্বরীর ঢাকাতেও বেড়েছে। গতবার ১৯১, এবার ১৯৬টি পূজামণ্ডপ। বারোয়ারি কিংবা ব্যক্তিগত এসব মণ্ডপে মণ্ডপে হাসি-কান্নায় পাঁচদিন কাটিয়ে বাঙালির দেবী এ বছরের মতো ফিরে যাবেন স্বামীগৃহে। বৃহস্পতিবার, বিজয়া দশমীতে, কোটি কোটি সন্তান দুর্গতিনাশিনী মাকে বিদায় জানাবেন। আগামী বছরে নাইয়র আসার আহ্বান জানিয়ে ঢক্কানিনাদ বুকে ধারণ করে সাঁঝের মায়ায় ভিজতে ভিজতে ঘরে ফিরবে তারা। ওদিকে, বিসর্জিত প্রতিমার কী হবে?
রাজধানী ঢাকার সব প্রতিমা স্বভাবতই বিসর্জিত হবে বুড়িগঙ্গায়। উদ্বেলিত ভক্তরা যখন ঘরে ফিরবেন, বুড়িগঙ্গার পানিতে ভাসতে ও ডুবতে থাকবে প্রতিমাগুলো। রঙ ও মাটি ধুয়ে পরদিন সকালে আধাডুবন্ত কাঠামোগুলো পুরোপুরি ভেসে উঠবে। আগের সন্ধ্যায় উৎসবমুখর বুড়িগঙ্গা পাড়ে পরদিন সকালে যদি কেউ যান, দেখতে পাবেন ছিন্নমূল মানুষ হল্লা করে প্রতিমায় ব্যবহৃত বাঁশ ও খড় সংগ্রহ করছে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য। ওই প্রক্রিয়া আর যাই হোক, দুর্গা দেবীর জন্য মর্যাদাকর হয় কি? বিসর্জিত সবকিছু যে নদী থেকে উদ্ধার হয় না, বলাই বাহুল্য। কেবল কাঠখড় নয়, পূজায় ব্যবহৃত ফুল-পাতাও কয়েকদিন ধরে ভেসে থাকে। দূষণ লাঞ্ছিত বুড়িগঙ্গার পরিস্থিতি আরও খানিকটা করুণ করে তোলে।
দুর্গাপূজা উৎসবের বৈশ্বিক কেন্দ্র এবং বাঙালির আরেক নগরী কলকাতার 'হাজার হাজার' প্রতিমাও দুই বছরের আগ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পৌরাণিক পিতা গঙ্গায় এভাবে জঞ্জাল হয়ে ভেসে থাকত। গত বছর অক্টোবরের গোড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট আদেশ জারি করেন, বিসর্জনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গঙ্গা পরিষ্কার করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট ও পুরসভাকে বিষয়টি তদারক করতে হবে। এরপর গঙ্গা দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ১৭টি ঘাট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আগের মতো যত্রতত্র নয়, তীরের কাছে বাঁশঘেরা নির্দিষ্ট ঘাটেই দেবী বিসর্জন দিতে হয়। বিজয়ার দিন গভীর রাত পর্যন্ত কঠোর শৃঙ্খলায় চলে প্রতিমা বিসর্জন। পরদিন কলকাতা পুরসভা, রাজ্য পরিবেশ দফতর, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের কর্মী ছাড়াও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঙ্গা পরিষ্কারে নেমে যায়। বিসর্জনে আসা সাধারণ মানুষও পূজার উপচার নদীতে না ফেলে ঘাটের কাছে জড়ো করে রাখে। যাতে করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুবিধা হয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন কি বুড়িগঙ্গা থেকে পূজার বর্জ্য পরিষ্কারের এমন উদ্যোগ নিতে পারে না?
পশ্চিমবঙ্গের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পূজাতে ব্যবহৃত ফুল ও পচনশীল দ্রব্য থেকে সিঁদুর ও মোমবাতি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলে গত বছর আনন্দবাজারে পড়েছিলাম। বিবিসি নিউজে দেখেছিলাম আরও উৎসাহব্যঞ্জক খবর- সিসামুক্ত রঙ দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে কুমারদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এমন রঙও বিলি করা হয়েছে যাতে প্রতিমা বিসর্জনের পরে নদীর পানিতে সিসা মিশে দূষণ না ছড়ায়। কারণ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন, প্রতিমায় ব্যবহৃত রঙে দ্রবীভূত সিসা গঙ্গায় পাওয়া মাছের শরীরে মিশছে। আর অতিরিক্ত সিসাযুক্ত মাছ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আমাদের কপাল! বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনজনিত দূষণ নিয়ে কি ঢাকা সিটি করপোরেশন, কি পরিবেশ অধিদফতর, কি ভক্তকুল- কারও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×