somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক দূরের আপনজন

২৫ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজিম কোইনসু সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম এক তুর্কি তরুণীর কাছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতে প্রেম, প্রকৃতি ও প্রজ্ঞার ব্যঞ্জনা ব্যাখ্যার পিঠে তিনি কাজিমের কথা তুলেছিলেন। সঙ্গে কাজিমের গানের অডিও-ভিডিও লিঙ্ক। মূলত তুর্কি ও কৃষ্ণসাগর-তীরবর্তী কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষায় গাওয়া সেসব গানের কথা বুঝবার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু সুর হৃদয়ছোঁয়া। যেন বহু দূর থেকে ভেসে আসা আনন্দ-বেদনা ও প্রত্যয়ের মিশেল। ওই সূত্র ধরে ইন্টারনেট বিপ্লবের যুগে তার সম্পর্কে সহজেই আরও বিস্তারিত জানা গিয়েছিল।
কৃষ্ণসাগর-তীরবর্তী অঞ্চলে কাজিম কোইনসু তুমুল জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। তুরস্ক ছাড়াও জর্জিয়া ও আর্মেনিয়ায় তার গানের অ্যালবাম বহুল বিক্রীত। তার জন্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতার বছর_ ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর, তুরস্কের আর্তভিন প্রদেশের হোপা এলাকায়। ১৯৯২ সালে মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। পরের বছর প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব ব্যান্ড দল 'ফ্যসি বেরেপে' বা সমুদ্রসন্তান। ২০০০ সালে ব্যান্ড দলটি ভেঙে যাওয়ার পর তিনি একের পর এক সলো অ্যালবাম বের করতে থাকেন। মূলত এ সময়ই তার জনপ্রিয়তা আগের সবার রেকর্ড ভাঙতে থাকে। তার গান ছড়িয়ে পড়তে থাকে তুরস্কের সীমানা পেরিয়ে জর্জিয়া, আর্মেনিয়াসহ কৃষ্ণসাগর-তীরবর্তী গোটা অঞ্চলে। তিনি নিজেও সঙ্গীত শিল্পীর বাইরে এক আন্দোলনের আইকন হয়ে ওঠেন।
ব্যক্তি কাজিম ও তার গান কেন এত জনপ্রিয়? তিনি লোকসঙ্গীতের সঙ্গে রক মিউজিক মিশিয়েছেন বলে? কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ও অবহেলিত কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষায় বেশকিছু গান (আমাদের ভাওয়াইয়ার মতো) গেয়েছেন বলে? কাজিমের স্বাতন্ত্র্য ও সৌন্দর্য হচ্ছে, বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি কেবল কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকার হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেননি। যে বাণী তিনি সঙ্গীতে ধারণ করেছেন, তা নিজের জীবন দিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি একাধারে গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী ও খ্যাতিমান পরিবেশকর্মী। কৃষ্ণসাগর অঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার যে প্রত্যয় তিনি গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন, তা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়েও ছুটে বেড়াতেন। বিশেষ করে ওই অঞ্চলে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউক্রেনে চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।
চেরনোবিল দুর্ঘটনার আড়াই দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও তুরস্কের কৃষ্ণসাগর-তীরবর্তী অঞ্চলে এর বিরূপ প্রভাব স্পষ্ট। সেখানকার প্রায় প্রতি পরিবারেই একাধিক সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। একটি হিসাবে দেখা গেছে, কৃষ্ণসাগর-তীরবর্তী অঞ্চলের ৩৮ শতাংশ মৃত্যুই ক্যান্সারের কারণে ঘটে থাকে। তাদের বড় একটি অংশ হয় অকালমৃত্যুর শিকার। তা সত্ত্বেও উপকূলীয় সিনোপ শহরে তুরস্কের সরকার যখন একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়, কাজিম সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি সঙ্গীতে, বিতর্কে, সমাবেশে অংশ নিয়ে স্থানীয় মানুষকে এর বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে থাকেন। পরমাণু তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় উপেক্ষা করে তিনি জনমত গঠনে গোটা কৃষ্ণসাগর-তীরবর্তী অঞ্চলে ছুটে বেড়িয়েছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ২০০৫ সালে তারও ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং জুনের ২৫ তারিখ, আজকের দিনে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে, ধারণা করা হয়, যে পরমাণু তেজস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তিনি সঙ্গীত ও সংগ্রামে নিমগ্ন ছিলেন, তা থেকেই এই ক্যান্সার।
বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরবর্তী হলেও কাজিম কোইনসু এবং তার চিন্তা ও তৎপরতা আমাদের জন্য কেবল প্রেরণার উৎস নয়, শিক্ষণীয়ও। দেশে এখন সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ। কিন্তু শক্তিশালী এই মাধ্যমটিতে পরিবেশ-প্রতিবেশের অংশ কতখানি? আমাদের ক'জন সঙ্গীত শিল্পী প্রকৃতি নিয়ে ভাবেন? ক'জনই-বা আছেন, যারা মঞ্চে ও মিডিয়ায় বিপন্ন পাহাড়, নদী, বন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য গান গাওয়ার পাশাপাশি মাঠের আন্দোলনে অংশ নেবেন? কৃষ্ণসাগরের সন্তান কাজিম কোইনসুর জীবন ও কর্ম যদি বঙ্গোপসাগর-তীরবর্তী কারও মনে সামান্য ভাবনার উদ্রেক করে, আজকের লেখা সার্থক।-প্রতিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নে অনেক দূরের ওই আপনজনের সংগ্রাম ও ত্যাগের প্রতি টুপিখোলা অভিবাদন।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×