somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিগমানন্দ, গোপীনাথ বা অন্য কেউ

১৯ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুল আলোচিত যোগগুরু স্বামী রামদেবের ততোধিক নাটকীয় 'অনশন' নিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিতে যখন ঝড় তুলেছিল; ঠিক সেই সময়ে নিভৃতে প্রাণ ত্যাগ করেছেন আরেক স্বামী নিগমানন্দ। গঙ্গার বুক থেকে তোলা পাথর ভাঙায় খোদ নদী এবং আশপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য যে দূষণের শিকার হচ্ছে, তা বন্ধের দাবিতে মৃত্যুর ১১৪ দিন আগে, ১৯ ফেব্রুয়ারি অনশনে বসেছিলেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই স্বামী। মে মাসের দ্বিতীয় দিন থেকে তিনি কোমায় ছিলেন। ১৩ জুন তিনি যখন উত্তরাখণ্ডের হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো পার করছিলেন, পাশেই কালো টাকার বিরুদ্ধে জিহাদে নামা প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে বিপুল বিত্তের অধিকারী হওয়া স্বামী রামদেবকে ফলের রস খাওয়ানো নিয়ে তুলকালাম চলছিল। রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ রামদেবকে নিয়ে উচ্চকিত থাকলেও পাশের কেবিনে থাকা নিগমানন্দের দিকে ফিরেও চাননি। কিন্তু তাতে কি? নদী রক্ষার ইতিহাসে স্বামী নিগমানন্দের নাম নিঃসন্দেহে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 'রিভারাইন পিপল'র পক্ষ থেকে আমরা তার ত্যাগ ও সঙগ্রামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
আমরা জানি, যারা কাজ করেন, তারা হৈচৈ করতে চান না। রামদেবরা কাজের চেয়ে হৈচৈ বেশি করে লাভের ঝোল পাতে টানতে চান। আর নিগমানন্দরা প্রাণ বিলিয়ে দেন বিনা বাক্যব্যয়ে। অন্যসব ক্ষেত্রের কথা বাদ; এমন নিঃস্বার্থ কত মানুষ আমাদের স্বার্থপর পৃথিবীতে নদী রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। পাশের পশ্চিমবঙ্গেই গোপীনাথের 'গঙ্গাদূষণ রুখতে নীরব আন্দোলন' সম্পর্কে পড়েছিলাম কিছুদিন আগের আনন্দবাজারে। বলাবাহুল্য, গঙ্গা তার গোটা গতিপথে পাড়ে অবস্থিত ২৯টি নগরী, ৭০টি শহর ও হাজার হাজার গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় যে ১৩০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য এবং আরও ২৬০ মিলিয়ন লিটার শিল্পবর্জ্য গ্রহণ করে, তা পরিষ্কার করার সাধ্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নেই। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক ও সমন্বিত বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ। কিন্তু নবদ্বীপের ওই ভদ্রলোক তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নবদ্বীপের তীর্থক্ষেত্রে সারা বছরই পুণ্যার্থীর ভিড় লেগে থাকে। প্রতিদিন ভোরে যখন শত শত পূজারি গঙ্গার দুই পাড় থেকে ফুল পাতা ঘট ভাসিয়ে দেন বা প্রতিমা বিসর্জন করেন; গোপীনাথ বৈষ্ণব তখন ঝাঁটা, ঝুড়ি ও কোদাল নিয়ে এ-ঘাট সে-ঘাট ঘুরে বেড়ান। এক দশক ধরে তিনি এ কাজ করছেন। না করেছেন পুরস্কারের প্রত্যাশা, না করেছেন সামাজিকতার পরোয়া।
এই ব্লগেই কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম ব্রাজিলের হোসে ক্লদিও রিবেইরো দ্য সিলভার কথা। আমাজোন নদীধারার বনাঞ্চলে অবৈধ উজাড়িকরণ ও দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে গিয়ে তিনি মে মাসের শেষ দিকে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। প্রায় ছয় মাস ধরে নানা হুমকি ও হয়রানি সত্ত্বেও আমাজোন রক্ষায় আপস করেননি। একই কাতারে বলা যায় নদীপ্রেমিক আমেরিকান গ্লেন রস স্যুটকেসের কথাও। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিভারসের সাবেক নির্বাহী পরিচালক প্যাট্রিক ম্যাককেলির ভাষায়- ‌'গ্লেন ছিলেন নদী রক্ষা আন্দোলনকারীদের জন্য অতিপ্রিয় অনুপ্রেরণা ও শিক্ষক এবং নদী ধ্বংসকারী রাজনীতিক ও আমলাদের জন্য একটি কার্যকর কাঁটা।' ব্রাজিল ও লাতিন আমেরিকায় গত দুই দশকের নদী রক্ষা আন্দোলনে গ্লেন হয়ে উঠেছিলেন অপরিহার্য নাম। নব্বই দশকের মাঝামাঝি প্যারাগুয়ে-পারানা রিভার সিস্টেম রক্ষায় 'রিয়োস ভিভোস নেটওয়ার্ক' নামে তার আন্দোলন পরিবেশ ও অধিকার রক্ষার ইতিহাসে অবশ্যপাঠ্য। নাওয়া-খাওয়া ভুলে নদীর জন্য দাবড়ে বেড়াতে গিয়েই তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন; কিন্তু দমেননি। ২০১০ সালের গোড়ায় মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে সমকালে লিখেছিলাম।
কে না জানে, বাংলাদেশের নদীগুলোও ভালো নেই। চাইলে একশ নদীখেকোর নাম উল্লেখ করা যায় এক্ষুনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগও সুবিদিত। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের দেশে নিগমানন্দ, গোপীনাথ কিংবা গ্লেন রস স্যুটকেসের মতো কেউ কি আছেন, যাকে নিয়ে গর্বভরে লিখতে পারি?
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×