গণতন্ত্রকামী ও সরকারবিরোধী যেকজন অনলাইন একটিভিস্ট আছেন, তাদের সবাইই আমেরিকার উপর অনেক বেশি আশা করে ছিলেন; তারা ভাবতেও পারেননি যে ভারতের প্রভাবে আমেরিকা তার মিশন থেকে সরে যাবে। এইরকম চরম বোকামিই এইসব অনলাইন একটিভিস্টরা করেছিলেন জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে।
যেমন, গণতন্ত্রকামী ও সরকারবিরোধী অত্যন্ত সক্রিয় একজন অনলাইন একটিভিস্টের কথা এই মুহূর্তে উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই। উনি দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রতিদিনই বিশ্লেষণধর্মী ভিডিও বানাতেন, এখনো বানান, নিয়মিত সরব থাকেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে। ২০২৪-এর তথাকথিত ইলেকশানের অনেক আগে থেকে উনার সাথে আমার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মেসেজে আলাপ হতো। আমি চেষ্টা করতাম বিভিন্নভাবে আমার মতামত দিয়ে উনাকে এসিস্ট করতে যাতে উনার ভিডিওগুলো আরো সুন্দর ও চমৎকার হয়, তার অ্যানালাইসিস আরো সুক্ষ্ণ হয়। একবার গত বছরের মাঝামাঝির একটু পর তিনি জিএম কাদেরকে নিয়ে একটা ভিডিও করেছিলেন। উনি মনে করছিলেন যে জিএম কাদের এরশাদের থেকে ভিন্ন এবং এটাও আশা ক্রুছিলেন জিএম কাদের তার জাতীয় পার্টিকে ইলেকশন থেকে দূরে রাখবেন। আমি তার ওই ভিডিওটা দেখে বলেছিলাম, আপনার ধারণা ভুল। জিএম কাদের ওনার বড় ভাইয়ের থেকে রাজনৈতিক দিক থেকে খুব একটা ভিন্ন কিছু হবেন না এবং শেষ পর্যন্ত সিধা ছেলের মতো নির্বাচনে যাবেন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে। এখন উনি সরকারবিরোধী ও নির্বাচনবিরোধী বিভিন্ন কথা বলছেন স্রেফ পার্টির ডিমান্ড বাড়ানোর জন্য যাতে সরকারের সাথে দরকষাকষিতে তার সুবিধা হয়।
পরে কিন্তু আমার ধারণাই সত্যি হলো।
এরপর নির্বাচনের ঠিক আগে আগে আমি তাকে বারবার বলছিলাম, আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকার স্ট্যান্স মোটেই শক্ত কিছু মনে হচ্ছে না। তাকে এটাও বলেছিলাম, ২৮ অক্টোবরের পর আমেরিকার যেরকম আরো বেশি শক্ত স্ট্যান্স নেওয়া উচিত ছিল আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে, আমেরিকা তার কিছুই নিচ্ছে না। আমার ধারণা ছিল আমেরিকা শেশ পর্যন্ত তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আকারে ইঙ্গিতে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমেরিকা ও ভারতের পররাষ্ট্র পর্যায়ের মিটিংয়ে সম্ভবত ভারত এই দাবিতে অটল ছিল যে বাংলাদেশের তাদের পছন্দের সরকার রাখতে না দিলে আমেরিকার এই অঞ্চলে ‘চী্নকে ঠেকানো’র যে নীতি ও প্রচেষ্টা, সেটাতে ভারত সাহায্য করতে পারবে না। কিন্তু উনি আমার কথাকে মনে হলো না পাত্তা দিয়েছিলেন। কেননা, নির্বাচনের আগে ও পরে তার ভিডিও কন্টেন্টে তিনি সমানে বলে যাচ্ছিলেন— “আমেরিকা পিছিয়ে যাবে না,” “এই নির্বাচন করলেও নির্বাচনের পর আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের স্যাংশনে আওয়ামী সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না,” ইত্যাদি ইত্যাদি নানা জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা! ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তার ভিডিও কন্টেন্টগুলো চেক করলেই আপনারা সেটা বুঝতে পারবেন।
আমার কথা হচ্ছে, এই লোককে সরকারবিরোধী ভিডিও বা অনলাইন একটিভিস্টদের মধ্যে সবচেয়ে সুষ্ঠ, চমৎকার ও যুক্তিপূর্ণ অ্যানালিস্ট বলে বলে ধরা হয়। সেই লোকই যখন এরকম ভুল বিশ্লেষণ করেন, বোকার মতো আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তারই যখন এই অবস্থা, তখন অন্যান্য সরকারবিরোধী অনলাইন একটিভিস্টদের কী অবস্থা, সেটা তো ভালোই আন্দাজ করা যায়। আমার মতো লাইমলাইটহীন একজন মানুষ সঠিক পরিস্থিতিগুলো বুঝতে পারলেও তার মতো দেশের সবচেয়ে দক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেটা ধরতে পারেন না।
আর ওভারঅল বিরোধী দলের থিংক ট্যাংকগুলোর কী ভয়াবহ গর্ধবমার্কা অবস্থা, সেটা এখন না হয় নাই বললাম। সে আলোচনা আরেকদিন করব…!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮