দেখতে দেখতে হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে গেলাম। স্কুলে আমি ছিলাম আমাদের ক্লাসে বরাবরই দুই নম্বর পজিশনে। তখন পজিশন নিয়ে অত ভাবতাম না। স্বাভাবিক লেখাপড়াতেই আমার পজিশনের নড়চড় হয়নি। তীব্র প্রতিযোগিতার মনোভাব আমার ছিল না। কিন্তু ক্লাসের এক রোল রাজুর মধ্যে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। আগ্রহ বলতে বাবা-মা এ স্কুলের শিক্ষক বলে মনিরামপুর পাইলট স্কুলে ইচ্ছা স্বত্ত্বেও পড়তে পারেনি ও। আর আমি অতশত বুঝতাম না। বাবা ভর্তি করে দিয়েছেন। ভাইবোন সবাই ওই স্কুল থেকেই পাস। এজন্যই আমিও ভর্তি হয়েছি। দেলোবাড়ির মেঠোপথ দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। আমাদের পাড়ার দুই জন আমার সঙ্গে পড়ত। তারা হলো হাবিবুর ও শেফালি। দুইজনই ভদ্র। পরে হাবিবুর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এজন্য পড়াশুনা হয়নি। এখন ঢাকায় একটা দোকানে চাকরি করে। বিয়েও করেছে। এক ছেলেও। শেফালিরও বিয়ে হয়ে যায় মেট্টিক পাস করার আগেই।
যাই হোক স্যারদের যথেষ্ট অানুকল্য আমি পেয়েছিলাম। এজন্যই এখনও আমাকে দেখলে স্যারেরা সম্মান করেন আর আমিও। গ্রামীণ জীবনের সেই দৃশ্য এখনও মনের মধ্যে ভেসে ওঠে। স্কুলে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতাম। একদিনের ঘটনা। সিদ্দিক স্যার মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আমরা ক্রিকেট খেলছিলাম। ব্যাটিং করছিলাম আমি। স্যার ক্রিজের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। এ সময় একটা ওয়ান ড্রপের বল জোরে হিট করলাম। সেইরকম টাইমিং। বল হিট করার সঙ্গেই সরাসরি স্যারের পিঠে লাগল। ভয়ে তো মুখ খুলতে পারছি না। স্যারের মুখের চিত্র দেখে বুঝতে পারলাম ভালই ব্যাথা লেগেছে। স্যার পেছন ফিরেই ছুটে এসে স্ট্যাম্পগুলো ছুড়ে ফেলে দিলেন। আমরা ততর্ক্ষণ হাওয়া হয়ে গেছি।
এভাবেই নবম শ্রেণিতে উঠে গেলাম। কিছুটা বড় হয়ে গেছি। স্যাররা সমীহ করেন। আদরও করেন। ততটা শাসন আর করেন না। তখন নিজেও বুঝে গেছি কাঙ্খিত সেই এসএসসি পরীক্ষা এক একবছর পরই। লেখাপড়ায় মন দেয়েছি। একটু সিনিয়র ভাব এসে গেছে স্কুলে। এ সময়টাতে কল্পনা ভর করতো প্রচুর। অনেকেই যোগাযোগ করতে শুরু করে। ছাত্রদল শিবির ছাত্রলীগের বড় ভাইরা তখন যারা যার কর্মসূচিতে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালাতে থাকে। একারণে মিছিল মিটিং সভা ইত্যাদি বিষয়ে তখনই সজাগ হতে শুরু করি। পরবর্তীতে এক সময় রাজনীতিতে অবশ্যই জড়িয়ে পড়ি। এসএসসি পাশের পর চলার গণ্ডি বেড়ে গেল। ভর্তি হলাম মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজে। বিশাল ক্যাম্পাস বলা যায়। জড়িয়ে পড়লাম রাজনীতিতে। একটা খাতা নিয়ে ক্লাসে যেতাম। বৃষ্টির সময় জানালা দিয়ে কোথায় যেন মন চলে যেত। একদিন বাংলা স্যার আমার উদাসিনতা ঠিকই ধরে ফেললেন। বললেন, প্রিয়জনের কথা মনে পড়েছে তাইনা?
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬