ঢাকার জীবন একবারে নিরানন্দ। যারা ঢাকায় আছে আমি মনে করি তার বাধ্য হয়েই ঢাকায় আছেন। কারণ চাকরি। সংসার। জীবন। এসব বাদ দিয়ে তো গ্রামে গিয়ে কিছুই হবে না। গ্রামে গেলে চাকরি পেয়ে তারপর যেতে হবে। তাও ছোট চাকরিতে ভাল্লাগবে না। ফার্স্টক্লাস জব ছাড়া গ্রামে যাওয়া এক প্রকার বোকামি।
ইদানিং গ্রামের কথা খুবই মনে পড়ে। সেই '৯৫-'৯৬ সালের দিনগুলো চোখের সামনে আজও স্পষ্ট। মনে পড়ে ১৯৯৬ সালে আমি মাত্র ক্লাস সিক্সে ভতি হয়েছি। কিন্তু বয়স একবারে অল্প ছিল বলে তখনও হাফপ্যান্ট ছাড়তে পারিনি। সবাই কত আদর করতো। কতো শিক্ষক ক্লাসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। শিক্ষকদের কাছে আমি খুবই প্রিয় ছিলাম।
বাড়ি থেকে হেঁটে দেলুয়াবাড়ির মাঠ পেরিয়ে স্কুলে আসতাম। স্কুলের নাম দেলুয়াবাড়ি হাইস্কুল। স্কুললের বিশাল মাঠ ছিল। এখনও আছে। তবে স্কুলের জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করতে হতো। এখন আর সে অবস্থা নেই। নতুন নতুন বিল্ডিং উঠেছে। তবে সেই প্রধান শিক্ষক আবদুল স্যার অাছেন। বাড়িতে গেলে স্যারের সঙ্গে এখনও কথা হয়। সেই একই এক্সপ্রেশন কেমন আছিস। কোথায় থাকিস। কি করছিস। সেই অমায়িক হাসি। স্যারকে আমার খুবই ভালো লাগে। তবে যারা ক্লাসে পড়া পারে না তাদের কাছে স্যার যমের মতো।
সেই সময়েও স্কুলের ছেলে মেয়েরা প্রেম-প্রীতিতে দারুণ অভ্যস্ত ছিল। কিন্ত আমি ছিলাম ব্যতিক্রম। হয়তো সুযোগ পেলে আমিও একই কাজ করতাম। কিন্তু আমি তার কোনো চেষ্টাই করিনি। কেউ ইরোটিক গল্প করার সময় আমি যদি সেখানে যেতাম তাহলে গল্প বন্ধ হয়ে যেত। কেন তা আমি জানি না। শান্ত শিষ্ট ছিলাম বলে আমাকে হয়তো পীর ভাবতো সবাই। হয়তো আমাকে সবাই ভাল মনে করতো। কিন্তু আমি আদৌ তা ছিলাম। সুযোগ পেলে সবাই খারাপ হয়- এটা চিরন্তন সত্য। আমি হয়তো সে সুযোগ পায়নি। খারাপ বলতে নারী-পুরুষের যে চিরন্তন আকর্ষণকে বুঝিয়েছি। এটা আসলে কোনো খারাপ বিষয় না। কিন্তু মানুষ লুকিয়ে লুকিয়ে করতে চায়।
হাইস্কুলে বন্ধুদের মধ্যে ছিল হাবিবুর, জামাল, শফিক, মফিজ, মাহাবুর, রাজু, মিলন, কবির, শিলা, শেফালি, মহিমা, নার্গিস (অনেকের নাম মনে নেই)। এরা কোথায় আছে জানি না। কয়েকজনের কথা জানি। রাজু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসিতে অনার্স মাস্টার্স করে গাজীপুর একটা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে। এছাড়া আর কারো কথা জানি না। তবে মেয়েরা সবাই বড় বড় সন্তানের মা হয়ে গিয়েছিল আমার অনার্স শেষ হোয়ার আগেই।
স্কুল জীবনে হেড স্যার আব্দুল আজিজ ছাড়া অনেকেই আমার প্রিয় স্যার ছিলেন। সিদ্দিক স্যার, ডলি ম্যাডাম, কুলসুম ম্যাডাম, হুজুর স্যার (আশরাফ), ইন্তাজ স্যার, অশোক স্যার, জলিল স্যার, প্রভাশ স্যার, সুধীর স্যার অনেকেই। ইন্তাজ স্যারের কাছ থেকে বাংলা গ্রামারের হাতি খড়ি বলা যায়। অশোক স্যার পড়াতেন বাংলা সাহিত্য। জলিল স্যার ইংরেজি পড়াতেন। তবে অনেকেই স্যারের পড়ানো পদ্ধতির সমালোচনা করতো। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩