আইজকা আর ত্যানা প্যাচামু না, একদম সক্কাল বেলা সবাই ঘুম থেকে উঠে বোচকা বাচকি গোছানো শুরু করেছি, টার্গেট যত তারাতারি সম্ভব বড় পাথরে পৌছান।সেখানেই ক্যাম্পিং হবে। তবে তাড়াহুড়ার মাঝখানে এক আকাম হইয়া গেসে। যুথী ভাবী টুথপেস্ট দিয়া দাঁত মাঝতে গিয়া ঘুমের ঘোরে মশা নিবারক ওডোমস দিয়া দাঁত মাজা শুরু করে দিসে
এই সেই মহান অডোমস।
এরপর মুনাব ভাইয়ের মদিনা হোটেলে ডাল পরোটা খেয়ে ধুপধাপ (সত্যি সত্যি ধুপধাপ করে বসা যাবে না, নৌকা ভেঙ্গে পরবে)সব নৌকার উপরে বসে পড়লাম।
আগের পোস্ট গুলোর লিঙ্ক এখানে
Click This Link
Click This Link
সে যে কি গরম, একদম চামড়া কামড়ানি গরম। এরি মধ্যে নৌকা ছুটে চলেছে পাথুরে সাঙ্গু কেটে কেটে। নভেম্বরের শুরুতে বান্দরবানে বৃষ্টি ভালোই হয়েছে, তাই নদীর পানি এখন ঘোলা। তবে শীতে সাঙ্গুর পানি অসম্ভব সুন্দর লাগে, কিছুটা নীলচে। পাথর দেখা যায় নদীর তলাতে।
ছবিঃ শীতকালে সাঙ্গু নদী।এগুলা তোলা হয়েছিল ২০০৮ এর মদক ট্রিপে।
তীব্র স্রোতের মধ্যে নদীতে নৌকা ঠেলতে ঠেলতে চলে এসেছি তিন্দু। এখানে দুপুরে ভাত খাব। এক ঘন্টার ভিতরে ভাত তৈরি। গরম গরম মুরগীর ডিমের ঝোল আর ভাত খাইতে যে কি মজা, কঠিন। ভাত খাওয়া শেষ করে পাড়া বেড়াতে বের হলাম। তিন্দু পারার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে অসম্ভব সুন্দর এক্টা ঝিরি। ঝিরির চেহারাখানা দেখে ভরা পেটেই সবাই ঝাপ দিলাম পানিতে।
তিন্দু ঝিরি
ঘন্টা খানেক দাপাদাপির পর আমরা রওনা হলাম বড় পাথরের উদ্দেশ্যে। আজকে ওখানেই ক্যাম্প করার ইচ্ছা। সাঙ্গু বেয়ে বেয়ে যত সামনে যাচ্ছি,টের পাচ্ছি নদীও গ্রাজুয়েলি উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। বড় পাথরে সাঙ্গুর উচ্চতা পেয়েছিলাম ২২০ ফুট, সেই একই নদী বড় মদকে ৩৫০ ফুটের মত উঠে গিয়েছে, যা কিনা আমাদের বসুন্ধরা সিটি থেকেও উচ্চতর, চিন্তা করেন তাইলে কই আছি।
যাউক গা, বড় পাথরে যাবার আগে সিরিয়াস বিপদ। বর্ষাকালে সাধারনত এই জায়গাটা বেশ রিস্কি, গত বছর বেশ কিছু নৌকাডূবির ঘটনা ঘটে। আমরা ভেবেছিলাম এবারো তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, কারণ আমাদের নৌকাটা প্রচন্ড বেগে পাক খাওয়া শুরু করে। আমাদের মাঝি (নাম কওন যাইবো না, অর ব্যাবসার ক্ষতি হইতে পারে) সাহেবেরও স্ক্রু ছিল কিছুটা ঢিলা, সেই ব্যাটা নৌকা চালাবে কি, আরেক মাঝির সাথে ঝগড়া লাগাইয়া দিছে।পুরা জার্নিতে এই ব্যাটা বহুত তাং ফাং করছে। অরে বিড়ি না খাইতে দিলে নৌকা চালানো বন্ধ কইরা দেয়।রাইতের বেলা আবার টিফিনও ( বাংলা) খাইতে চায়। কিন্তু আমাদের ট্রিপে টিফিনস আর নট এলাউড, খাইলে বিড়ি খাইবা।
আমাদের অপর দুই মাঝি মফিজ আর আবুল ( আসলেই ওদের নাম মফিজ আর আবুল) অনেক ভালো ছিল।
এদিকে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। পাহারে সন্ধ্যা হলে সব ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে যায়। এই ঘুটঘুটা অন্ধকারে আমরা হাচ্রে পাচ্রে বড় পাথরের শেষ মাথায় নৌকা ভেড়ালাম। যায়গাটা কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর। চারিদিকে সবুজ পাহারের দেয়াল, নিচ দিয়ে সর সর শব্দে বয়ে চলেছে নদী, আর যেখানেই তাকাই, বিশাল বিশাল পাথর। ঠিক করা হল এখানেই ক্যাম্প করা হবে।
আমরা কাছা বাইন্ধা তাম্বু খাটানো আর রান্না বারি শুরু করে দিলাম।মজার কথা হচ্ছে সে দিনটি ছিল বছরের সবচাইতে ঘোর অমাবস্যা, কিন্তু আকাশে এত তারা জ্বলছিল, যে চাদের প্রয়োজন ছিল না বললেই চলে। আমরা পাথরে বানানো চুলার চার পাশে গল্প করতে বসে গেলাম। টিংকু ভাই, চন্দন ভাই, আমি ও মাঝিরা সবাই রান্নাবান্না নিয়ে দৌড়াদৌরি করছি, আর যূথী ভাবি আমাদের ফটোসেশন করছে
ছবিঃ আমাদের কেম্পু
একটু পরেই দেখতে পেলাম রাতের অন্ধকারের মাঝেই কোত্থেকে মেঘ এসে তারাগুলো ঢেকে দিল। আমরাও কাজ শেষ করে তাবুর ভিতরে ঘুম। সেই রাতটা অদ্ভুত ছিল, নদীর গর্জন, ঠান্ডা বাতাস, আর জঙ্গলের ভিতর থেকে একটু পর পর তক্ষকের ডাক।
পরদিন সকালে উঠে দেখি অদ্ভুত দৃশ্য। আমি কিছুই বলব না, নিজেরাই দেখে নেন।
দেখতে দেখতে কিভাবে সময় কেটে গেল, পৌছে গেলাম রেমাক্রি।
ছবিঃ বড় পাথর
রেমাক্রী খালের শেষ মাথা, যেটা সাংগুর সাথে এসে মিলেছে
ইহা অইত্যাদিক ক্ষুদার এক্সপ্রেশন
এই রেমাক্রি খাল ধরেই আমরা চলে যাব নাফাখুম। এই পথেই চলতে চলতে ভাগ্যক্রমে আমরা একজনের দেখা পেয়ে গেলাম, যে ৮ বছর আগে একটা ঝরনায় গিয়েছিল, দেখতে নাকি অনেকটা নাফাখুমের মতই, কিন্তু আরো সুন্দর, দুর্গম আর বুনো। পরের পর্বে থাকবে সেই আমিয়াখুম আর সাত ভাই খুম ডিসকভারির কাহিনি