সাহিত্য, সঙ্গীত, ক্রিড়াসহ বিভিন্ন অঙ্গনের কিছু মানুষ আছেন যারা কখনো তাদের প্রতিভার মূল্য সঠিক ভাবে পায় না। বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে তেমনি একটি নাম রেশাদ মাহমুদ। তিনি এমন সময়ে এমন ধরার গান করতেন যখন সেই ধারার গানগুলো বাংলাদেশে মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। বাংলাদেশে পশ্চিমা ধাচের মিউজিকের উত্থান মূলত আযম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ-দের হাত ধরে। কিন্তু সেই গানগুলো পপ ধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ধীরে ধীরে সফটরক, রক ধারার আগমন। ৯০ এর দশকের আগে পর্যন্ত তেমনি চলেছে। কিন্তু রেশাদ মাহমুদ তখনই হার্ডরক ধাচের গান করতেন। যদিও এই ধারাটি তখন পর্যন্ত খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। সে তখন যে গানগুলো করেছিল সেগুলো যদি এখন করতেন আমি নিশ্চিত সে এই সময়ের বাংলাদেশের রকস্টারদের একজন হতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা অনেকেই তার নামটি পর্যন্ত জানি না।
তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যান্ড-এ গান করেছেন। ’৮৪ সালে রেশাদ ‘করচা’ ব্যান্ডের সদস্য হয়ে ব্যান্ড গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর গান করেছেন ওয়ারফেইজ, আর্ক, কেয়ব, দি কিউ সর্বশেষ ফিডব্যাক ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে। ফিডব্যাক এর ২০০২ এ্যালবামটির মূল ভোকাল ছিলেন রেশাদ। সেই এ্যালবামের জনপ্রিয় একটি গান হলো ''আবার মেলা''। যার প্রথম লাইনটি হলো ''বাঙ্গালী কন্যা সাজে নব বরষে''
এছাড়া রেশাদের বেশ কয়েকটি একক এ্যালবামও ছিল। গ্রহান্তরী ভালবাসা (১৯৯২), জন্ম (১৯৯৪)। এরপর আরো একটি এ্যালবাম বের হয়েছিল যেটির নাম এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।
এছাড়াও তিনি টিভি বিজ্ঞাপনের জন্য প্রচুর জিঙ্গেল করেছেন।
৮৮ সালে তিনি প্রথম ‘উইন কেডস’ ও ‘বিআরবি কেবলস এর জিঙ্গেল দিয়ে শুরু করেন। পরে পরে আরো বহু সংখ্যক জিঙ্গেলে কন্ঠ দিয়েছেন। যেমন ‘কোকোলা’, ‘লীজান মেহেদী’, ‘টার্গেট ওয়াশিং পাউডার’, ‘মুন্নু সিরামিক’ ও ‘ফোকো শার্ট’ ইত্যাদি।
তিনি এখনো নিয়মিত জিঙ্গেল করেন বলে জানি।
আমি তার খুব পাগল ধরনের একজন ভক্ত ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আজ আমার কাছে তার একটি গানও নাই। কারণ তার গ্যানের এ্যালবাম গুলো সব ছিল ক্যাসেট এ। তখনও দেশে সিডির আগমন হয়নি। এখন সেই ক্যাসেটও নাই, ক্যাসেট প্ল্যায়ারও নাই। তাই তার গানও শোন হয় না অনেকদিন। নেটে অনেক খুঁজেও তার কোন গান পাইনি। এর দ্বারা প্রমান হলো তাকে আসলে কেউ মনে রাখেনি।
রেশাদের গানকে অনেক মিস করছি তাই তাকে সম্মান জানিয়ে এই পোষ্ট রেশাদকে উৎসর্গ করছি।