প্রসঙ্গঃ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার--- প্রচার? নাকি অপপ্রচার? ছবি না দেখে আমি এই পোষ্টটি করেছিলাম। আমার এই পোষ্টটি নিয়ে তুলকালাম হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল আমি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবির পক্ষে লিখেছি। প্রচুর মাইনাচ উপহার পেয়েছিলাম। হয়তো অনেকেই লেখা না পড়েই আমাকে মাইনাচ দিয়েছিল।
এই পোষ্টে আশা করি সবাই পড়ে কমেন্ট করবেন।
আগেই বলেছিলাম থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি দেখে পোষ্ট দেব। সেই কথা রাখার জন্য এই পোষ্ট।
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল যে, অনেকেই মনে করে মোস্তফা সয়রার ফারুকী একজন আর্ট ফ্লিম নির্মাতা। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, মোস্তফা সয়রার ফারুকী একজন বানিজ্যিক ছবির নির্মাতা। ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার সহ কোনটা তে কোন শিল্পগুন আছে বলে আমর অন্তত মনে হয় না। বানিজ্যিক ছবিগুলোর মধ্যে ফারুকী একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে মাত্র। আমারদের দেশের বাণিজ্যিক ছবিগুলো সাধারণত একই কাহিনী বার বার পাবলিক কে খাওয়ানো হয়। যেমন ধনী গরিবের প্রেম, বাবার হত্যাকারীকে খুঁজে ফেরা, ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া ও পরে ১৪ বছর বা ২০ বছর পর ফিরে পাওয়া, বড় ভাই চোট ভাইকে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করানো অতপর ছোটভাই বেইমানী করা ও ছবির শেষ দিকে তার ভুল বুঝতে পারা ইত্যাদি। এই ছবিগুলোর কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে থাকবে বুক ঝাঁকানো কোমর দোলানো নাচ, ২/৪ টি ধর্ষণ দৃশ্য, আর কিছু মারপিট। ফারুকী এই ধারাটি থেকে সরে এসে ভিন্ন ধারার কিছু বাণিজ্যিক ছবি বানিয়েছে তাই অনেকেই ভাবে এগুলো বুঝি আর্ট ফ্লিম।
এই ছবিটি নিয়ে অনেকেই বলেছে এটি পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখতে গেলে বিব্রত হতে হবে? আমি যদি প্রশ্ন করি বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক ছবির নাম বলুন যে ছবিটি দেখতে গেলে বিব্রত হতে হবে না? বলতে পারবেন? আপনারা অনেকেই জানেন একুশে টিভিতে ললিতা নামে একটি ধারাবাহিক চলছে। নাটকটির প্রথম দিকের পর্বগুলো নিয়মিত দেখতাম। ভালই লাগত। কিন্তু যখন পতিতা ও পতিতালয়ের ব্যপারগুলো আসল নাটকটি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ সবার সামনে বিব্রত বোধ করতাম। একটি নাটকেই যদি বিব্রত হতে হয় তাহলে একটি বাণিজ্যিক ছবিতে আরো বেশী বিব্রত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। আর একটি ভাল কাহিনীতে বিব্রত হওয়ার গল্প থাকতে পারবেনা এটাও কোন কথা হতে পারেনা। পোকামাকয়ের ঘর বসতি নামের সরকারী অনুদানের একটি ছবি দেখেছিলাম। যেটি বেশ কিছু জাতীয় চলচিত্র পুরুষ্কার পেয়েছিল। সেই ছবিতেও একটি দৃশ্য দেখে সবার সামনে বিব্রত বোধ করেছিলাম। তাই বলে আমি বলতে পারব না যে ছবিটি অশ্লীল ছিল। তেমনি এই ছবিতে কিছু দৃশ্য আছে যে গুলো সবার সাথে দেখতে গেলে আপনাকে বিব্রত হতে হবে কিন্তু দৃশ্য গুলো অশ্লীল নয়।
এইবার আশা যাক ছবিতে কি দেখলাম তাতে। ছবিটি খুব সুন্দর একটি গল্প দিয়ে শুরু হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই সুন্দরটি ধরে রাখতে পারেনি। ছবির কাহিনী এতো দিনে সবার জানা হয়ে গেছে আশা করি। তাই কাহিনীতে গেলাম না।
দৃশ্য ১. রাতের বেলায় রাস্তায় একটি মেয়ে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এক লোক তাকে পতিতা ভেবে তার সাথে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানায়। এটি একটি বাস্তব ব্যাপার। এই দৃশ্যটির জন্য কেউ যদি বিব্রত হয় তার জন্য ছবির নির্মাতাদের আমি দোষ দিতে রাজি নই।
দৃশ্য ২. আবুল হায়াত যা করে একমন লোক আমাদের পাড়া মহল্লায় শত শত আছে। অনেক বুড়া বদমাশকে আমি দেখেছি মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলতে। সুতরাং এটিও কোন অবাস্তব দৃশ্য নয়।
দৃশ্য ৩. ছবির প্রথম দিকেই মোশাররফ করিমের বাবা তার ছেলের কর্মকান্ডের জন্য তাকে বকা দেয়। ছেলে নিজেকে নাস্তিক দাবী করেছিল এর জন্য ছেলেকে কতল না করে ভুল করেছে এমন অনুশোচনাও করতে দেখো গেছে। একজন নাস্তিক যে পথ ভ্রষ্ট ছাড়া আর কিছু নয় এই ছবি তার উকৃষ্ট প্রমান। ধর্ম না মানা, মদ খাওয়া, মদের আড্ডয় গিয়ে খুনখুনিতে জড়িয়ে পড়া, ধর্মীয় মতে বিয়ে না করে ফস্তানোসহ অনেক গুলো ব্যপার থেকে এগুলো থেকে বুঝা গেল নাস্তিকতার কোন ভিত্তি নাই। নাস্তিকতা কাউকে কোন সুখ দিতে পারেনা। মোশাররফ করিম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক ফোটা সুখের মুখ দেখতে পারেনি।
দৃশ্য ৪. এই ছবির লিভটুগেদার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তার আগে জানা দরকার লিভটুগেদার কি? লিভটুগেদার বলতে আমি বুঝি কোন নর নারী বিয়ে না করে শারীরিক চাহিদা পুরণের জন্য এক সাথে বসাবাস করা। তপুর সাথে তৃষা একই ঘরে ছিল কিন্তু সেটিকে ঠিক লিভটুগেদার বলা যাবে না। কারণ তারা শারীরিক কারনে নয়, প্রয়োজনে এক ঘরের নিচে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। এবং তাদের মধ্যে কোন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি।
দৃশ্য৫. দুজন এক ঘরে থাকলে যা হয় তৃষা ও তপুর ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। জৈবিক কারণে তপু তৃষার দরজায় টোকা দেয়। তৃষা সব বুঝতে পারে কিন্তু এড়িয়ে যায়। এক সময় রাজি হয় কিন্তু বিবেকের তাড়নায় সে পথ থেকে ফিরে আসে। শেষে তপু তৃষাকে পরিষ্কার করে বলে দেয় যে, সে তৃষার জন্য যা করেছে তার জন্য তৃষাকে কোন প্রতিদান দিতে হবে না। সে কোন প্রতিদানের জন্য তার উপকার করেনি। বন্ধুর জন্য সে যা করার করেছে।
দৃশ্য৬. এই ছবির সবচে অপ্রয়োজনীয় ও নিন্দনীয় দৃশ্য ছিল তপুর কন্ডম কিনে আনা ও তা ছুঁড়ে পেলা পর্যন্ত পুরোটুকু। এই দৃশ্যের কোন প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। এটা খুবই বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। তৃষা তপুকে ডাক দিয়েছে তপু এসে দেখে তৃষার দরজা বন্ধ এই টুকু হলেই হতো। এত বাড়াবাড়ির কোন দরকার ছিল না। আর এই দৃশ্যে জন্য কেউ বিব্রত হলে সেই দোষটি নির্মাতাদের উপরই পড়বে।
দৃশ্য ৭. শেষ দৃশ্যে এসে কিছুটা গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে গেলাম। তুষা ও মোশাররফ করিম তাদের জৈবিক চাহিদা পুরণ করার জন্য নয়, তাদের প্রয়োজনে এক সাথে থাকতে বাধ্য হয়। তখন তারা একে অন্যকে বন্ধু হিসেবে দেখে। তপু তো আগে থেকেই বন্ধু। তপু তৃষাকে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানায়। তখন তৃষা মোশাররফ করিমকেও সাথে নিতে চায়। তপুও রাজি হয়। তিন জনই এক সাথে ঘুরতে যায়। এখানে তপু তৃষা যদি লিভটুগেদার কারতেই যেত তাহলে মোশাররফ করিমকে নিয়ে যাওয়ার কথা না। তপুও মোশারফ করিমকে নিয়ে যেতে রাজি হতো বলে মনে হয় না।
সব শেষ কথা হলো ফারুকীর ছবিগুলোকে আমার কেন জানি ছবি বলতে ভাল লাগেলা। ছবি হবে বিশাল ব্যানভাসে, বিশাল কাহিনী নিয়ে। কিন্তু তার ছবিগুলো বিশেষ করে থার্ড পারশন সিংগুলার নাম্বার এর কাহিনী দু' মিনিটে বলে শেষ করার মতো। তার ছবিগুলোকে আমার নাটকই মনে হয়। শুধু বড় পর্দায় দেখানো হয় বলে ছবি বলতে হয়।
আর যারা অশ্লীলতার প্রতিবাদ করেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। আমরা অশ্লীল কিছু চাই না। কিন্তু মনে রাখতে হবে অশ্লীল ছবির জন্য শুধু ফারুকীরে দায়ী করলে হবে না। ফারুকীর থেকে হাজার গুন বেশী অশ্লীল ছবির নির্মাতা দেশে আছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৪৩