সকাল ৯ টা ।রুপালী তাড়াহুড়ো করে বের হয়।দেরি হয়ে গেলে বাস মিস করবে।বাসের কথা মনে পরলেই রুপালীর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বাস উঠতে গেলে সিট তো পাওয়া যায়ই না, বরং মানুষের গাঁয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকতে হয়।কি যে বিচ্ছিরি ব্যাপার । তাই সে চেষ্টা করে গাঁ বাঁচিয়ে চলার ।
বাস আসতেই দেখা গেল বাস অনেকটা খালি।মনে মনে খুশি হলও রুপালী।মহিলা সিটগুলো খালি নেই। পিছনের দিকে বসতে গিয়ে দেখল যে অনেক রোদ লাগছে মুখে ,তাই পাশের রো তে গিয়ে জানালার কাছে বসে। কোলে রাখা কালো ব্যাগ থেকে এম পি থ্রী বের করে হেড ফোন টি কানে দিলো । ঘোমটা টা ঠিক করে মাথায় দিলো।
কিছুক্ষন পরেই বাস এ তিনটি মেয়ে উথল।তাদের দেখেই রুপালীর চোখে বিরক্তি প্রকাশ পায়। পোশাক টাও কি ঠিক মতো পরতে পারেনা এরা ? এদের দিক এ আমি ই ভালো নজরে টাকাতে পারিনা ,ছেলেরা কিভাবে এদের সম্মান এর চোখে দেখবে ।কপাল কুচকে যায় ওর এসব চিন্তা করতে করতে ।
হঠাৎ পাশের সিট এ একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে বসলো। লোকটা এত মোটাসোটা যে রুপালীর গায়ের সাথে একদম ঘেঁসে বসেছে ।সে চেষ্টা করলো একদম জানালার সাথে ঘেঁষে বসার কিন্তু কোন লাভ হলনা।কি আর করা চুপচাপ বসে ভাবছে এমন অনেক ছেলে আছে যারা পাশে বসার পর পুরো সিট এ না বসে এক পা বাইরের দিক এ দিয়ে বসে , যাতে ধাক্কা না লাগে আমার সাথে। কিন্তু এই লোক তো কিছুই করছেনা । উল্টো আরাম করে পুরো সিট জুড়ে তো বশে আছেই পারলে আমার সিট এ এসে পরে। পরখনেই ভাবে লোকটার ই বা কি দোষ লোকটা তো মোটাসোটা । আড় চোখে লোক তাকে দেখে বোঝার চেষ্টা করে রুপালী লোকটার কোন মতলব নেই ত?খুব সাবধান এ থাকে রুপালী সবসময় আইসব লোকদের কাছ থেকে । নাহ লোকটাকে একটু বোকাসোকা ই মন এ হচ্ছে ।যাই হোক মা কেন এতটুকু জ্ঞান তো থাকা উচিত মানুষের!আইসব ভাবতে ভাবতে আসে পাশে তাকিয়ে সিট খুঁজতে থাকে, যদি পাওা যেত হাফ ছেড়ে বাঁচত । কিন্তু পেলনা অন্ন যাত্রীরা দাড়িয়ে আছে ।রুপালী কেমন জেনো খুব অস্বস্তি লাগে।বার বার লোকটির দিকে তাকাচ্ছে । খেয়াল করলো লোকটির হাতের কনুই তার পেটে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। সে খুব ঈতস্ত করে বলেই ফেলল “একটু সরে বসবেন প্লিজ” লোকটি সরার ভান করলো কিন্তু সরলনা । রুপালী ক্রমশ জানালার দিক এ চাপতে থাকে আর নিজেকেই বকটে থাকে মনে মনে কেন আমি এখানে এসে বসলাম । মন টা একটু খারাপ হয়।
হঠাৎ কি জেনো মন এ হোল। সাথে সাথে কোলের ব্যাগটি দুহাত এ করে উপরে উঠিয়ে নিয়ে দেখে তার হাঁটুর উপর লোকটির এ হাত ! নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে ! এ কি! লোকটির মুখের দিক এ তাকিয়ে লোকটির কোন প্রতিক্রিয়া ও দেখা গেলনা ! হাত শুধু আস্তে করে সরিয়ে নিলো ! জেনো কিছুই হয়নি ! রুপালী কি করবে কি বলবে বুঝতেই পারেনা। রেগে গেলে সে কথা বলতে পারেনা,চোখে পানি এসে পরে। ইচ্ছে করছে লোকটাকে দুটো কষে থাপ্পর মারতে । কিন্তু সে পারেনা ।বাস থেকে নামার সময় শুধু রাগের শরে বল্ল “উঠে দারান আমাকে নামতে দিন” ।
নেমেই University এর দিকে হাঁটতে থাকে দ্রুত । হঠাৎ করে নিজের উপর খুব রাগ হতে থাকে ।কেন সে লোকটাকে কিচ্ছু বল্লনা ?কেন প্রতিবাদ করলনা ? কেন? কেন কষে দুটো থাপ্পর দিলনা ?নিজেকে চরম ভাবে ধিক্কার দিতে থাকে ।হাঁটতে হাঁটতে মুঠো ফোনটি বের করে একটি এসএমএস লিখে এক বন্ধুকে “দোস্ত , মন টা ভীষণ খারপ লাগছে । কেন আমার সাথে এমন হোল ? আমি তো ওই মেয়েগুলার মতো অশ্লীল পোশাক পরে ও ঘুরিনা তাহলে আমার কি দোষ ?”চোখে পানি এসে পরে ওর। হঠাৎ একটা মোটর বাইক তার গাঁ ঘেঁষে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিয়ে গেলো । চমকে ওঠে কোনরকম ধাক্কা সামলিয়ে পিছন থেকে মোটর বাইকের ছেলেগুলার বাঙ্গাত্তক হাসি শুনতে পেলেও । পিছনে ঘুরে রুপালী নির্বাক চোখে ধুলা উঠা বাইকের দিক এ তাকিয়ে রইল ।