ছোটবেলা আমরা যখন Aim in life রচনা লিখতাম আমরা লিখতাম ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। বড় হবার পথে আরও কিছু বিষয়ের খুব চাহিদা লক্ষ করলাম- যেমন কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মেসি, টেলিকম, বায়োটেকনোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাদি। এছাড়াও সবসময়ই বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্রের দাম(!) তুলনামূলক বেশী ই থাকে।
সাধারণত বিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে আশা ছাত্র/ছাত্রী তুলনামুলকভাবে একটু মেধাবি হয়। নুন্যতম মার্কস না থাকলে বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এজন্যই সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সবচেয়ে মেধাবিরাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে।
কিছুদিন পড়ার পরেই সেই মেধাবি(!) বুঝতে পারে যে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে, এবং গ্রাজুয়েশন এর শেষের দিকে অনেকেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যায় কারণ ততদিনে তার বিষয়ের বাজারদর সম্পর্কে সে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েই যায়।
একথাটাও বলা প্রয়োজন যে, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার চাপ অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশী। কোর্স, ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব ক্লাস এবং সর্বোপরি কঠিন সব বিষয় পড়তে গিয়ে অনেকেরই নাভিশ্বাস ওঠে।
এত কষ্টের পর একটি ছাত্র পড়াশুনা শেষ করে চাকরি ক্ষেত্রে গিয়ে দেখে যে তার মেধার কোন মূল্যায়ন ই হয় না। কিছু কিছু বিষয়ের তো বাংলাদেশে কোন সুযোগই নেই, যেমন বায়োটেকনোলজি। এটি বিজ্ঞান বিষয়ের একটি অন্যতম Subject হওয়া সত্ত্বেও পাশ করার পর বাংলাদেশে তেমন কিছুই করার থাকে না। আর বিদেশে গিয়ে ভালো কিছু করাও যথেষ্ট কঠিন ব্যাপার।
কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মেসি, টেলিকম, বায়োকেমিস্ট্রি এই প্রত্যেকটা বিষয়ই যথেষ্ট ভালো। কিন্তু বর্তমানে এর সবকটি বিষয়কেই মৃতপ্রায় করে ফেলা হচ্ছে কিছু মানুষের লোভের কারনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বেশী পরিমানে ছাত্র ভরতি করা হচ্ছে এবং দেশটাকে ভরে ফেলা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার/ টেকনিক্যাল person দিয়ে (আমি নিজেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র)। পড়াশুনা শেষ করার পর তাঁদের রঙ্গিন স্বপ্নের বেলুন ফুটো হয়ে যায়।
বর্তমানে যে হারে ছাত্র বের হচ্ছে তাঁদের দেবার মত ভালো চাকরীর সুযোগ কিন্তু সৃষ্টি হচ্ছে না। সম্মানজনক একটা চাকরি পাওয়াই অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। আর পেলেও Starting Salary বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ২০০০০ এর নীচে হয়। চাকরীর Growth ও অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় অনেক কম হয়। (ভাই ব্যাবসা এর কথা বইলেন না, ব্যাবসা এত সোজা না )
আমার নিজের অবস্থাই যদি বলি, আমি ফার্মেসির ছাত্র ছিলাম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। পড়াশুনার চাপ ছিল প্রচণ্ড, ২ বছর দুপুরে ভাত খাই নাই! সন্ধ্যাবেলা ক্লাস/ল্যাব শেষ হলে বাসায় এসে খেতাম। এত কষ্ট করে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর আমি Interny ই পাই না! হাহাহা!!
আমার কোন প্রভাবশালী মামা/চাচা না থাকায় ভালোই বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত চাকরি পাওয়া তেমন কোন সমস্যা হয়নি। নিজের যোগ্যতায়ই ৩ টা চাকরি পেয়ে যাই! : তবে আমার অনেক বন্ধুই কিন্তু এখনও কিছুই করছে না।
একই কথা প্রযোজ্য প্রায় যেকোনো বিজ্ঞান বিষয়ের ক্ষেত্রে। কম্পিউটার সায়েন্স পড়া আমার বন্ধু অনেক কষ্টে একটা ১২০০০ টাকার চাকরি পেয়েছিল! পরে রাগ করে আর চাকরি ই করলনা !
আর্কিটেকচার পড়া আমার এক বন্ধু এখন চাকরি তে সুবিধা করতে না পেরে একটা ফার্ম খুলে বসেছে। সেও তার প্রাপ্যটা পায়নি চাকরি থেকে।
একজন ডাক্তার দেশের অন্যতম একজন মেধাবি মানুষ। কিন্তু MBBS পাশ করার পর তাঁরা যে Income টা করতে পারেন আমার মনে হয় সেটাও তাঁর মেধার তুলনায় অপ্রতুল।
অথচ বিজনেস স্টাডিজ পড়া একটা ছাত্র অনেক কিছুই করতে পারে। সেখানে তাঁর মেধার মূল্যায়ন টাও হয়ে যায় বলেই মনে হয়। আপনারা বলতে পারেন দেশে বিবিএ পাশ ছেলের তো অভাব নেই, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে বিবিএ এর সুযোগ ও অনেক বেশী। যেকোনো কোম্পানি বা Organization এ বিবিএ পাশ ছেলে দরকার। তাছাড়া যারা প্রকৃত মেধাবি, তাঁদের জন্য কখনোই সুযোগের অভাব হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে আমাকে কিছু General কোর্স করতে হয়েছে, যেগুলো ছিল Combined অর্থাৎ সব বিষয়ের ছাত্রকেই করতে হতো। সেই কোর্সে আমার যে বন্ধুকে আমি নিজে পড়িয়েছি, সেই বন্ধুই আজকে আমার দ্বিগুণ Income করছে। অথচ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার অর্ধেক ও খাটতে হয়নি । আমি যদি আমার বন্ধুর বিষয়ে পড়তাম তাহলে অন্তত তাঁর সমান Income করতে পারতাম। আফসোস বড়ই আফসোস!!
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার মানে মেধার অপচয় করা। তাই আসেন ভাই আমরা সব নির্যাতিত ভাই-বোন মিলে একটা মানববন্ধন করি! আর আপনারা যাই করেন, আমি আমার পরবর্তী প্রজন্মকে বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে পড়াব না।