যে কোন প্রকার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত, সেই সাম্প্রদায়িক। এ পৃথিবীতে অসংখ্য সম্প্রদায় আছে। এর মধ্যে মানব সম্প্রদায় হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। এসব সম্প্রদায়িক ভাগ গুলো বিভিন্ন কিছুর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ধর্ম গত, জাতি গত, স্থান গত, অঞ্চলগত, আদি নিবাস অথবা স্বভাব ও বৈশিষ্ঠ সহ আরও অনেক কিছুর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। মানব সমাজের আদি সভ্যতা থেকেই সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার সৃষ্টি। এর সৃষ্টি হয়েছিল হয়তো ভাল ভাবে চেনার জন্য, জানার জন্য। সর্বোপরি সাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনা গুলো তৈরি হয়েছিল ভাল কিছু ভাবনা থেকেই। কিন্তু বাংলাদেশ সহ তথা বিশ্বের কিছু কিছু দেশে এখন সাম্প্রদায়িক কথাটাই অস্ত্রের মত ব্যবহার করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা অস্ত্রের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। কারন একটি অস্ত্র দিয়ে হয়তো একই সময়ে একটি জায়গাতে আঘাত করা যায়। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার দাবানল মাঝে মাঝে পুরো বিশ্বমানবতাকেই হুমকির মুখোমুখি করে দেয়। এক সময় মানুষ হয়তো নিজের জন্যই তৈরি করেছিল সাম্পদায়িকতা। আর আজ এই সাম্প্রদায়িকতার দাবানলে মানুষ নিজেই পুড়ে ছাই হচ্ছে। সম্প্রদায় শব্দটি যদি এতই খারাপ হত তবে কেন আমরা প্রথমেই তৈরি করলাম মানব সম্প্রদায়? তারপর আরও কত কি! চাকমা,সাওতাল, গারো, রাখাইন এগুলো বাংলাদেশের কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়। এরকম সারা বিশ্বেই বিভিন্ন সম্প্রদায় আছে। তারা কখনোও বলে না যে, আমাদেরকে আলাদা কোন সম্প্রদায়ে ফেলা যাবে না। কারন সম্প্রদায় মানে আত্ন পরিচয়, সম্প্রদায় মানে বৈশিষ্ঠ্য, সম্প্রদায় মানে ইতিহাস, সম্প্রদায় মানে আদি পুরুষ।
কিন্তু বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতে সাম্প্রদায়িক মানে একটা গালাগাল, বকাবাজি, বাজে কথা। কিন্তু আমি সম্পূর্ন আত্নবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, আমি সাম্প্রদায়িক, আমি সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। আমি প্রথমে মানব সম্প্রদায়ে বিভক্ত। তারপর আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের। এবং আমার আশেপাশের অনেক বন্ধু মহল হিন্দু সম্প্রদায়ের। আমরা সবাই এক সাথে চলি। তারা আদাব দেয়, নমস্কার দেয়। আমরা সালাম দেই। সালাম দেয়াটা আমার সম্প্রদায়ের নিয়ম, এটা সাম্প্রদায়িকতা নয়, এটা আমার পরিচয়। আমরা তাদেরকে পাশে নিয়ে চলাফেরা করি। তারা তাদের সম্প্রদায় নিয়ে গর্বিত। আমরাও। আমি কখনও অসাম্প্রদায়িক হতে পারি না, কারন আমি মানুষ হিসেবে পশুর সাথে মিশতে চাইনা। তাইতো নিজেকে মানব সম্প্রদায় হিসেবে আগেই আলাদা করে ফেলেছি। আমি মানব সম্প্রদায়ের, এর মানে আমি পশু সম্প্রদায়ের কেউ নই, পাখি সম্প্রদায়ের কেউ নই। এখন যদি সকল পশু পাখি এসে বলে তুমি সাম্প্রদায়িক, তুমি আমাদেরকে আলাদা সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে দিয়েছো। তাহলে মানুষ হিসেবে আমার কি করার আছে। আমি যদি মানব সম্প্রদায়ের কথা বলতে দ্বিধাবোধ না করি তবে, আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের, এটা বলতে আমার কেন এত ভয়, দ্বিধা, শংকা? আমি মুসলিম সাম্প্রদায়িক, এর মানে এই নয় যে, আমি অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি অবিবেচক। যে সত্যিকারে সাম্প্রদায়িক, সে সব সময় সম্প্রদায়কে সম্মান দিয়ে চলে। সে কখনও সকল সম্প্রদায়ের খিচুড়ি পাকাতে চায় না। কারন পত্যেক সম্প্রদায়েরই আলাদা বৈশিষ্ঠ, আলাদা মর্যাদা আছে। অথচ এই বাংলাদেশে এখন যদি আমি বলি, আমি সাম্প্রদায়ীক, আমাকে অনেক অস্রাব্য গালিগালাজ শুনতে হবে। মুসলিম হলে জঙ্গিও বলতে পারে। এমনই যদি হয়, তবে আমি নিজেকে মানব সম্প্রদায় বলেও আজ আর আলাদা করতে চাই না। আমি, বানর, বাঘ, সাপ, টিকটিকি, টিয়া পাখি, টুনটুনি পাখি সবই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে চাই। আমার মানুষ হিসেবে একটা নাম ছিল,তারও আর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর তেমনটা যদি সম্ভব নাই হয়, তবে আমি নিজেকে সাম্প্রদায়িক পরিচয়েই পরিচয় দিতে চাই।
(এই লিখাটি লেখকের মনের ভাবনার বহিঃ প্রকাশ মাত্র। এর সাথে অনেকের চিন্তার অমিল থাকতেই পারে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮