ছেলেটার কমলা সাইকেল । “সাইকেলের রঙ কখনও কমলা হয় ??” – বললেই মুখটায় একটা হাসি এনে বলে, “কেন ? সমস্যা কি ?”
“হ্যা, সমস্যা আবার কি? এই রাতের বেলাতেই যেভাবে কটকট করে তাকিয়ে আছে তোর এই কমলামুখো সাইকেল, না জানি দিনের আলোতে যখন এটাকে নিয়ে বের হইস কেমন লাগে !”
“একদম জ্বলজ্বল করে!!”-বলেই একটা বিকট হাসি ...
“হুহ, আইছে !...”
“আরেহ এটার একটা লাল-কালো কম্বিনেশনের মডেলও ছিলো ,ওইটা বেশি জোস । কিন্তু অইটা আউট অফ মার্কেট, তাই এটাই কিনলাম- এটাও তো সুন্দর ।”
“হ, সুন্দর, কইছে তোরে...”
“আরেহ তুমি সুন্দরের কি বুঝ ...”
নাহ, আমি সুন্দরের কিছুই বুঝি না । আচ্ছা, সুন্দর কি ? লাল জামার সাথে ম্যাচিং কানের দুল ? ওড়নার সাথে ম্যাচিং চুড়ি ? নাকি প্রত্যেকটা রেখাকে রঙ্গে ফুটিয়ে তোলা একটা ফর্সা মুখ ?
তোর বুঝি সুন্দর খুব ভালো লাগে ? লাগারই কথা । সুন্দর কার না ভালো লাগে... আমি নিজেই তো সুন্দরের দিকে অপলক চেয়ে থাকি । সে কিন্তু তোর ভালো লাগার মত সুন্দর না , আমার ভালো লাগার সুন্দর । ইশ , তুই যদি জানতি ...
আমার জানিস , সব কিছুই সুন্দর লাগে আজকাল । তোকে , তোর সাইকেলটাকে , তোর হাসি , তোর শার্টের অদ্ভুতদর্শন পকেট – সব । তোর নামের অক্ষর গুলোও খুব সুন্দর জানিস ? কতদিন যে শুধু তোর নামের অক্ষর গুলার দিকে তাকিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রিয়ে গেছে ... মাঝে মাঝে কি হয় জানিস ? ফেসবুকের সাইডবারে তোর নামের ঐ খুনি অক্ষরগুলোর পাশে সবুজ দেখে তোকে নক করার জন্য চ্যাট উইন্ডোও খুলি , কিন্তু তার পর সব ঝাপ্সা লাগে । কিছু বলার জন্য খুজে পাই না-বলার ভাষা খুজে পাই না । তখন ঐ দেড় স্কয়ার সেন্টিমিটারে তোর খোমাখানার দিকে তাকিয়ে থাকাই ভরসা । খোমাখানাও যে বড় সুন্দর ।
জানিস , মাঝে মাঝে নিজের মোবাইল খানা হাতে নিয়ে মেসেজ লিখি, “কি করো ? খুব ব্যস্ত ? চল না শিল্পকলায় গিয়ে নাটক দেখি? অথবা, চারুকলা গিয়ে অনেক গুলা রঙের কাচের চুড়ি কিনি ?” জানি না এই মেসেজ পাঠালে তোর রিপ্লাইতে, “না, আজকে একদম ব্যস্ত না, চল যাই।”- আসবে কিনা , কিন্তু ঝাঁসির রাজকুমারির আর সেন্ড বাটন প্রেস করার সাহস হয় না ।
তুই কি কখনো আমার কথা ভাবিস ? আমার জন্য মন কি দুরুদুরু কাঁপে ? কখনও আমার ছবি আঁকার চেষ্টা করিস ? ইচ্ছে করে না আমার হাত ভর্তি সবুজ রঙের কাঁচের চুড়ি কিনে দিতে ? কাঠের পুঁতির মালা ?- ধুর তুই একটা খ্যাত ! এত্তগুলা খ্যাত তুই !!
তোর সাথে একশ একটা আড়ি । কথা বলবি না আমার সাথে । তুই কথা বলতে আসলেও আমি বলবো না । মুখ ঘুরায়ে চলে যাবো । তাকাবো না তর দিকে । হাসবি না খবরদার আমার দিকে তাকায়ে , নাইলে আমিও ভুলে তোকে দেখে হেসে দেবো – আমার আড়ি ভেঙ্গে যাবে । যতই জোক্স বলিস না কেন, আমি হাস্তে হাস্তে ভুলে তোর সাথে কথা বলে ফেলব না তোর সাথে , হুহ । কিছু না বলে শুধু শুধু তাকায়েও থাকবি না , থাকলেও লাভ নাই । আমি ইচ্ছা করে খেয়াল করবো না
পুনশ্চঃ খবরদার যদি মাথার চুলগুলাতে আবার বাঁদর কাট দিস , মেরে ফেলবো একদম ! চুলগুলা বড় হলে তোর মাথার দুপাশে দুই ঝুটি করে দেবো, তুই প্রোফাইল পিকচার দিবি । না দিলে মাইর , হুহ ।
পুনঃপুনশ্চঃ সাইকেল বদলাতে হবে, এই সাইকেলের রঙ আমার পছন্দ হয় নাই ।