প্রথম পর্ব
২য় পর্ব
পর্ব-৩
পর্ব-৪
১.
ইডেন এর সামনে দুপুর থেকে চরকির মত ঘুরছি,এত এত চুড়ি , কিন্তু পছন্দ মত চুড়ি পাওয়াই দায় ।কিছুই পছন্দ করতে পারছি না।রেশমী চুড়ি দেখব ? লাল চুড়ি না কি সবুজটা ? কাচেরগুলো ভাল লাগছে, কিন্তু শাড়ী সাথে জরির গুলো ভাল যায় , কি যে করব , কিন্তু শাড়ী পরবো কোনটা ? লাল-সবুজটা , নাকি সাদা জরিরটা ? ধুত বিরক্ত লাগছে । সারাটা দুপুর ধরে মার্কেটে ঘুরতে কারই বা ভাল লাগে । তাও এখনও শাড়ীও সিলেক্ট হয় নি ।
আচ্ছা তোর কি রঙ পছন্দ ? সাদা না লাল ? আমি কোনটা পরলে তোর ভালো লাগবে ? তোর কি হাতভর্তি চুড়ি পছন্দ ? নাকি ব্রেস্লেট পরা হাত ভাল লাগে ? সারাদিন তো রুবিনার সাথে গল্প করিস,ও তো ব্রেস্লেটই পরে ।পরুক,আমি চুড়িই কিনব।
২.
পরবো মাত্র ১২ তা কিন্তু চুড়ি কিনেছি ব্যাগ ভরতি । পছন্দ মত দুই ধরনেরই কানের দুলও যোগাড় হয়েছে । কিন্তু কিভাবে বুঝব যে কোনটা পরলে বেশি ভাল লাগে?এক কাজ করি , শাড়ীগুলোর সাথে চুড়িগুলো আর কানের দুল পাশে রেখে মিলিয়ে দেখি কোনটার combination বেশি ভাল লাগে আমার সাথে । নাকি একবার শাড়ী পরে trial দিয়ে দেখব ? কিন্তু কেউ যদি দেখে জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলব ? একা তো পরতেও পারি না । কাউকে কে ডাকব শাড়ী পরাতে ? কিন্তু যদি পরে পচায়?
“নীল,এই নীল,দরজা খোল।“ বাইরে তমাদির গলা, ”কি হল খুলিস না কেন?”
আয় হায় , এখন কি হবে ? তাড়াতাড়ি এগুলো লুকাতে হবে । ইস,দিদি যদি দেখে ফেলে তাহলে কি হবে ? জিজ্ঞেস করলে কি বলব ? তাড়াহুড়া করে শাড়ী আর চুড়ি গয়নাগুলো বাগে ভরে ট্রাঙ্কে তুললাম ।
“ওরে তুই ট্রাঙ্ক পরে লাগা” তমাদির বিরক্ত গলা ”আগে আমাকে ঢূকতে দে না বাপ ।”
আমি দরজা খুলে দিলাম ।“একা একা দরজা বন্ধ করে কি করিস সারাদিন?কোন দিন যে তুই একা ঘরে মরে পড়ে থাকবি আমরা কেউ কিছুই টের পাব না তখন বুঝবি মজা ।”
“দিদি কাল আউলাতে পুজায় যাবা না?”
“কি জানি রে,আমার এখনও থিসিসের কাজ শেষ হয় নি , জমা তো শনিবার,মা স্বরসতি গো , বাচাও আমাকে।” তম্নাদির ক্লান্ত গলা ,”কেন রে?”
“না এমনি ।”
“ও,আচ্ছা তুই ছবি এডিট করতে পারিস ? আমার থিসিসের স্লাইডে ছবি দিতে হবে,” দি pendrive বের করে দিল ।”কিন্তু বালির ছবি গুলো একটু এডিট করে ঠিকঠাক করে দে না ।”
“আচ্ছা দাও ।”
আমি হাত বাড়িয়ে নিলাম । দিদি খাটে উঠে বসল।
“ওরে খাইসে!” আমি বললাম , ”২১টা ছবি এডিট করতে হবে?”
“দাড়া দেখি ,কোনটার কি অবস্থা , সব তো দিব না ।যেটা যেটা দিব সেটা সেটা এডিট করবি ।”
দিদি বলে চলেছে,আর আমি এডিট করছি তার কথা মত ।আর মাথার মধ্যে ঘুরছিস তুই । ইস কত দিন তোর সাথে দেখা হয় না । দেখা না হোক । একবার ও কি ফোন করা যায় না? আনমনেই বলে উঠলাম , ”মহাবান্দর”
“কি?”দিদি বলল ,”কি হইসে?”
“না না,কিছু না ।”
তোর জন্য দেখি মানুষের মধ্যে বসে কাজ ও করা যাবে না,তুই সামনে থাকলেও জ্বালাইস,না থাকলেও জ্বালাইস , ফাজিল পোলা ।
“তোর পিসিতে গানটান কিছু নাই?”
“রেইনের গান শুনবা?”
“কোনটা ? সারাদিন খালি রেইন রেইন করিস কেন?”
“ব্যাড বয় ? শুনবা নতুন নামাইসি ।”
“নাহ,হোয়ায় ছাড়।”
রেইন চিৎকার করে চলেছে,
“Niga sarangi dwiji anh-kirul birosso
Nomanun jotdae-ro anigirul birosso
Non sarangi anil-kolrago sudo obshi
narul sogyo-wasso “
[I hoped that it would be a passing by fate
Because painful wounds will be left on me
But even when I know this, I am still greedy
It keeps getting me sad]
এক্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে ভাবলাম , রেইন ছেলেটা খালি আমার মনের কথাই বলে।
৩.
সকালের ঘুম যদি কোনদিন ফোনের আওয়াজে ভাঙ্গে সেদিনটা কেন জানি ভাল যায় না ।আজ এত্তসকালে কে ফোন করল?
“হ্যা,জয় ” ঘুম ঘুম আওয়াজে বললাম, “বল”
“কই তুই?”
“হলে ।”
“এখনও হলে কি করিস ? আমরা পুজার মন্ডপ সাজায়ে বসে আছি , দেবিরা এসে আমাদের ধন্য করেন ।”
“আসব রে , ঘন্টাখানেক পরে ।”
“দেরি করিস না ,রুবিনা-সাথি ওরা আস্তেছে , জলদি তুইও চলে আয় ।”
“আচ্ছা।”
শাড়ী পরতে হবে , দেখি তমাদি উঠেছে নাকি।
“দিদি?দরজা খোলো ।”
“কিরে সকাল সকাল তোর কি হইসে?”
“চল পুজায় যাই ।”
“আমি যাব না , আমার থিসিসের কাজ মেলা বাকি ।”
“চল না , এমন কর কেন ?”
“কইলাম না যামু না, তুই যা, তোর তো কোন কাজকাম নাই ।”
“না গেলে আমারে রেডি হইতে হেল্প কর ।”
“হেল্প করব মানে কি?দাত মাজায়ে দিব?”
“শারী পরায়ে দাও।”
“ওম্মা” দিদি চিৎকার করে উঠল ,”তুই শারী পরবি কেন?”
“শখ হইসে তাই ।”
“কই তোমার তো ব্লক বিদায়ে সবাই যখন পরল তখন তো শখ হয় নাই,আজ কি হইসে?”
“কি হবে ?”আমি লজ্জায় হেসে বললাম, “আজ ইচ্ছা করতেছে তাই ।”
“ঠিক কইরা ক তোর হইসে কি ? কালকের থেকে পুজায় যাবার জন্য পিছে লাগছিস ।” দিদি কান ধরে আমার মুখতা নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল ,”পুজায় কে আসবে?”
“কেউ না ।” আমি রাগের ভান করে বললাম , ”থাক,তোমার শাড়ী পরায়ে দেয়া লাগবে না ।”
৪.
“তুই এতক্ষনে আসলি?” জয়ের চোখ দিয়ে রাগ বের হচ্ছে ,”সবাই কতক্ষন আগে এসে গেসে ,তুমি ওই হল থেকে এই হলে আসতে এতক্ষন লাগাইছো ।”
“তাই ?” (মনে মনে জিজ্ঞেস করলাম,”ওউ কি চলে এসেছে” )” সবাই কে কে আসছে?”
“সাথিরা সবাই আমার রুমে,যিশু নিয়ে গেসে”
“তো তুই এখানে কি করিস ? তোর রুম কোন তলায়?”
“তুই না বললি আসতেছস ।” বিরক্তি নিয়ে জয় বলল,”এত টাইম লাগাবি জানলে দাড়ায়ে থাকতাম না ।আর রুম নিচতলায় ।”
“স্যরি, তুই দাড়ায়ে ওয়েট করবি বুঝি নাই ।”
“হু,হইসে,রাখ তোমার স্যরি”জয় বলে চললো, ”by the way,শাড়ী পরছিস ভাল দেখাচ্ছে ।”
“thanks”
“প্রসাদ নিবি না?,দাড়া,আমি নিয়ে আসি ।” বলে জয় চলে গেল।
মাঠের আমি এক অচেনা ভীড়ের মধ্যে দাড়িয়ে আছি । খুজছি আর খুজছি , খুজে তো পাই না , কেন পাই না ? কোথায় সে ? সে কি আসে নি ? এসেছে ? কোথায় ? এসে কি চলেও গেছে ? আমার সাথে একবারও কথা না বলে কিভাবে যায়?
“নে ধর ।”পেছন থেকে জয় এর গলা।
আমি নিলাম ।জয় বলে চলেছে , ”নাহ,তোরে আগে দেখতে এলিয়েন এর মত লাগত , আসলে তুই দেখতে অতো খারাপও না ।”
“লাত্থি মারুম তরে ।”
“দেখতে খারাপ না কইলাম তাই ? দুনিয়ায় ভাল লোকের কদর নাই ।”
“যা ভাগ ।”কথা বলতে বলতে এক টুকরো মিস্টি আমার শাড়ীতে পড়ল ,”হায় হায় , আমার শাড়ী …”
“চল , সামনে বাথ্রুমের ওইখানে বেসিন আছে, ধুয়ে ফেল ।” জয় হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল , ”এখনি ধুয়ে ফেললে দাগ থাকবে না ।“
৫.
দাগ ধুয়ে জয়ের রুমে আমি আর জয় ঢূকলাম।
”কিরে নীল,শাড়ী ভিজালি কেন ?” সাথি জিজ্ঞেস করল।
“আর বলিস না,ইনি পিচ্ছি ছেমড়ি তো এখনও , খাইতে গিয়ে জামা কাপড়কেও খাওয়ান ”জয় উত্তর দিল।
“তোর মাথা ।” আমি বললাম।
“তোরা সব এইখানে?” ও ঢূকলো রুমে , ”জয় তোরে কখন থেকে ফোন দিতেছি, ধরিস না কেন?”
“কই?”জয় বলল ,”ওহ,ফোন তো সাইলেন্ট করা ।”
আমার সর্বাংগ জ্বালিয়ে ওর পিছু পিছু ঘরে ঢূকলো রুবিনা । এই মেয়ে কেন ওর পিছু ছাড়ে না? ওরই বা এর সাথে এত্ত কি?
“তোরা কিন্তু সবাই দুপুরে এখানে খেয়ে যাবি, সবার জন্য খিচুরির ব্যবস্থা করা হইছে।”
“আউচ !!” রুবিনা হঠাত করে চিৎকার করে উথলো।
“কি হল?” বলে ও আবার পিছনে ফিরলো ।
“স্যান্ডাল এ পা মচকায়ে গেসে ।” রুবিনা বলল।
“দেখেশুনে চলবি না ।” ও রুবিনার হাত ধরে ঘরের ভেতরে আনলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ”চাপ তো,ওরে বসতে দে ।”
“হ্যা,ওরে বসা ।” আমি ঝট করে উঠে পড়লাম বিছানা থেকে, ”আমি এম্নিতেও এখন চলে যাব।”
“কি হইসে তোর?”ও বলল।
“কিছু না ।”
“কিন্তু আজ তো আমাদের সারাদিনের প্লান ছিলো।“জয় বলে উঠলো।
“তো কর তোদের সারাদিনের প্লান । আমি যাব গা ,আমার কাজ আছে ।”
“কি কাজ?” যিশু জিজ্ঞেস করলো ।
“বললাম তো ,জরুরি কাজ আছে ।“
“কি কাজ শুনি একবার ।”জয় বলল, “তুই কাল্কেও বলছিস যে সারাদিন কোন কাজ নাই,তুই থাকতে পারবি।”
“তখন ছিলো না,এখন পড়ছে।”
“এত ভাব ধরিস না তো,”জয় বলল,” সেই কাজ পরে করলেও হবে।”
“হবে না ।“ বলে ঘ্র থেকে ছুটে বেরিয়ে চলে এলাম ।চশমা দিয়ে ঝাপ্সা দেখছি , মনে হয় কাদছি , কি জানি , টিস্যু দরকার , ব্যাগ খুজে একটা তাড়াতাড়ি বের করলাম । তাড়াহুড়ায় ধাক্কা খেলাম তীর্থদার সাথে , ”কিরে আসলি কখন , কই যাস?”
“দাদা, পরে কথা হবে,এখন একটা জরুরি কাজে যাচ্ছি ।”
দাদাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাঠ দি