প্রথম পর্ব
২য় পর্ব
পর্ব-৩
পর্ব-৪
১.
দুপুর ২:৩০ এর মতো হবে হয়তো।লাইব্রেরিতে এই সময়টাতে ভীড় একটু কমই থাকে।একটানা কোশ্চেন সল্ভ করে চলেছি,আজ শনিবার,মঙ্গলবার পরীক্ষা,ইস,হাতে একদমই সময় নেই,এখনো একটা বই থেকে একটা চ্যাপ্টার পড়তে হবে।
mp3তে বেজে চলেছে বাপ্পার “তুমি কি বলো আসবে”।আর মাঝে মাঝেই আড়চোখে তাকাচ্ছি লাইব্রেরির দরজায়,এখনো এলো না…আজ কি তবে আসবে না??হঠাত চুলের ঝুটিতে হালকা টান লাগলো।অবশেষে…প্রচন্ড খুশিতে মনটা ভরে গেলো,তবুও মুখভার করার মেকি অভিনয় করে পিছনে ফিরলাম,”পড়ার মধ্যে ঝামেলা করবি না তো !!”
“শুধু একাই সব পড়ে ফেলবি নাকি??” আমার বইগুলকে ধাক্কা মেরে বলল,”ওই আতেল,নীলখেত এর আর কোন বই বাকি আসে কেনা তোর??”
“যা তো,ভাগ এখান থেকে .”
“ইয়ে,মানে হইসে কি,কাল রাতে শাফি অনেক জালাইসে,রুমে বইয়া মুভি দেখছে,জোরে জোরে…”
“তো?”
“আমিও দেখছি অর লগে”
“তো?”
“এখন induction motor পড়ায়ে দে।”
“মানে???”
“মানে induction motor পড়া হয় নাই এখনও।”
“তুই কি জানিস এখান থেকে ৭০ এর বেশি থাকবে?”
“জানি তো,হের লেগ্যাই না পড়তে আসলাম…তুই পইড়া ফেলসস না?এখন আমারে বুঝায়ে দে…ইয়ে মানে একটু দাগায়েও দিস...চ্যাপ্টার এর সব তো পড়া লাগবেনা,তাই না?” ফাকিবাজতা দাত বের করে হাস্তেছে…
“শুধু এই বই এ না।।চ্যাপমান ও আছে induction motor এ ।“
“কইস কি !!!তাকায়ে তাকায়ে কি দেখতেছিস।।দাগা !!!”
আমি যেন এর জন্যই প্রতিক্ষা করছিলাম,ইস্,এত পরে কেন এলি,তুই কি জানিস,তোর জন্য সেই গতকাল থেকে আমি লাইব্রেরির দরজায় চেয়ে আছি,তুই ফাকিবাজ আমার থেকে দাগায়ে নিতে আসবি প্রতি পরীক্ষার মত…
“কিরে অঙ্ক গুলোর দিকে তাকায়ে আছিস কেন?” চিৎকার শুনে সম্বিত ফিরল…মুখে বললাম, ”তোরে এখন সব দাগায়ে দিলেই করতে পারবি নাকি??এর চেয়ে প্রত্যেক নিয়মের একটা করে দাগায়ে দি ।”
“তাই দে ।”
একটা একটা করে অঙ্ক দাগিয়ে চলছি…আমি তোর বইতে দাগাচ্ছি,আমার চিহ্ন রেখে যাচ্ছি…আচ্ছা,তুই যখন পড়বি,অঙ্কের উপরে আমার দাগ গুলোকে তোর আঙ্গুলে একবারও কি ছুয়ে দেখবি?পরীক্ষার পরদিন কি আমার চিহ্নওয়ালা এই বইটাকে নীলখেতে ছুড়ে ফেলবি ?
“শেষ ।“
“শেষ?” বোকার মত হেসে বলল , “ইয়ে মানে induction motor starting এ tourque নিয়ে প্যাচে পড়ে গেসি…একটু ধরায়ে দে…হালকা…”
আমি জোরে হেসে উথলাম ,”তোকে নিয়ে আর পারা গেলো না ।”
“পারবি পারবি,try তো কর ।“
তুই চলে যাচ্ছিস , তোর পথের দিকে আমি একমনে তাকিয়ে আছি ।আজও তুই বুঝলি না…তোর জন্য আমার কষ্ট হয় , তুই কেন বুঝিস না … তোর কাছে আমার মন কি puschein এর বই এর মত অবোধ্য নাকি class lecture এর মতো অবহেলিত?তুই কি কোন দিনই আমাকে বুঝবি না?
২.
দিয়ে এলাম machine exam…উফফ…কি tired লাগছে…এত্ত ইজি কোশ্চেন কেন হইসে…exam দিয়ে কোনো মজা পেলাম না…আচ্ছা ফাকিবাজটার সাথে তো দেখা হল না … ওর কেমন হল কে জানে, ফোন করব ? না থাক । বিকালে পলাশী গেলেই দেখা হবে হয়ত … ওহ না , আজ তো মঙ্গলবার । ওর তো টিউশনি আছে … ৫টার সময় চলে যায় … কি করি ?
৫টর কাছাকাছি বাজে ।এখনও কেন বের হয় না ? আজ কি তাহলে আগে চলে গেল ? নাকি টিউশনিতে যাবেই না ? ধুত, এক বাদাম কেনার বাহানায় কতক্ষন রাস্তায় দাড়ায়ে থাকা যায় ? ওই যে , ওই তো আসছে … আচ্ছা এই মহাবান্দরটা কি জানে , এই অফহোয়াইট শার্টে ওকে কত handsome লাগে?
ওমা । একি ? আমার সামনে দিয়ে আমাকে না দেখে চলে গেল ? ওর পিছনে গিয়ে আলতো করে ধাক্কা দিলাম…
“কীরে, পরীক্ষা খুব ভালো দিছিস বুঝলাম,তাই বলে রাস্তাঘাটে মানুষের গায়ে পড়ে এটা জানাইতে হবে?”
“তরে কইসে,সবাইরে নিজের মত ভাব্লে হইব? সবাই তর মত আতেল না ।”
”কেমন দিলি?পারছিস ত? দাগায়া দিসিলাম ত সবই ।”
“আরে লিখছি লিখছি, টেনশন নিস কেন এত?”
”আচ্ছা নেব না,যাহ।“ আর কথা বাড়ানর কিছু পেলাম না … তবুও বানিয়ে বললাম, ” ৮ নম্বর টা পুরা করছিস?আমার পুরা মিলে নাই ।“
জবাবে যা বলল আমার মাথায়ে যেন পুরো আকাশটা ভেঙ্গে পড়ল, “এক্সাম স্ট্র্যাটেজী বৈলা এক্টা কথা আসে, জানিসনা ত, সারাদিন খালি আতেলের মত পড়লেই এইগুলান শিখা যায় না বুঝলি। লিমিটেড রিসোর্স এর মোস্ট ইফিসিয়েন্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে জানতে হয়। তুই কঠিন ম্যাথ করতে গেছিস ক্যান ? ৮ করলে নম্বর বেশী দিবে? আমি তো ৫,৬,৭ করসি একটা ত হবেই,আর ২টা তে পার্শিয়াল ১০ পাব, শিউর।”
ছাগলটা বলেই চলেছে , “থাক থাক, এখন দুঃখ কইরা লাভ নাই । বুঝলি তো না, চাইলেই আমি ফোর পাইতে পারি,শুধু আমি তোদের মত এত আতেল না বলে রক্ষে, নাইলে তোরা বেইল পাইতি?”
আমার অভিব্যক্তিহীন মুখশ্রী দেখে বলল, “কিরে, একটু বেশী হয়া গেল না, আমি না হয় তোর মত টিচার ফাইটার নাহ, তাই বইলা আমাদের কি কিছু পারতে নাই, এত অবাক হবার কি আসে? ভাব তো দেইখা মনে হইতেছে ফেল করবি।মাইয়া মানুষের যত্তসব নখরা”
“গাধা তুই একটা ! তাফালিং করার আর জায়গা পাশ না না ? ৮ নং কম্পলসারি ছিল । তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না … তুই আসলেই একটা বলদ … তুই আমার থেকে দাগায়ে এই পরীক্ষা দিলি ? আর কোনোদিন আমার কাছে কিছু বুঝতে আসবি না,আসলে এক লাত্থি দিয়ে জানে মেরে ফেলব ! ”
ও যদি ফেল করে এই ভাবনায় আমি আর নিজের রাগটাকে আটকাতে পারছি না… “ তুই কি জীবনেও শুধ্রাবি নাহ ? ভাবিস কী সারাক্ষণ ? চুপ করে আছিস ক্যান ? ”কেন জানি অনেক কান্না পেল,খুব তাড়াতাড়ি পালানো দরকার, ” ল্যাগ খেয়ে জুনিয়রের সাথে ক্লাস কর , আমার কি?”
আমার চোখের পানি দেখে ফেলেনি তো ? না দেখুক , কিছুই কি বোঝে না ? কেন আমাকে এত কষ্ট দেয়?
মনে হল, আবার ছুটে যাই ওর দিকে,শার্টের কলার চেপে ধরে বলি , ”তুই কোন সাহসে খারাপ পরীক্ষা দিস ?তুই ফেল করলে আমার কি হবে ? তুই ফেল করতে পারবি না , তুই আমার সাথে ক্লাশ করবি , ক্লাশের কোনার বেঞ্চে বসে ক্লাশের মাঝে শয়তানি করবি , আমি আড়চোখে দেখব , ক্লাশ শেষে আমার সাথে চা খেতে ক্যাফেটেরিয়ায় যাবি , ক্লাশ টেস্টের আগের দিন আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইব্রেরিতে আটকে রাখবি , আর কোনো এক গোলাপি গোধুলিতে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করবি , ”তুই কি আমার তুমি হবি”, বল, করবি না?
বি:দ্র: ইহা একটি আতেল,কল্পনাপ্রবণ মেয়ের ডায়েরি থেকে সংগ্রহকৃত