ছোটবেলায় আমাদের পাশের বাড়িতে একটা মেয়ে থাকতো,মৌলী।ও কখন মাটিতে খেলতে নামত না।সবসময় রংবেরঙ্গের জামা পরে ঘুরে বেড়াতো।আর বারান্দায় বসে বসে পুতুলের জামা পরাতো,নাহয় রান্নাবাটি খেলত।আমি আর মোরশেদ তাকে বিশেষ পাত্তা দিতাম না।
লিচুর ঘটনার পর মোরশেদের নানাজান ঠিক করলেন আমাদের উচিত শিক্ষা দেবেন।এই উদ্দেশ্যে তিনি বাসায় বললেন যে আমার সাথে মোরশেদ এর বিয়ে দেয়ার মনস্থির করেছেন তিনি।()।মোরশেদ সেটা জানার পর বেশ খুশি খুশিই হয়ে গেল।কারন সে ভাবছে বিয়ে মানে ছিনেমাতে যেমন দেখেছে…ফুল বাগানে গানটান করা যায় আর কি…()।সে তো সেই খুশিতেই মগ্ন হয়ে গেলো।
এদিকে আমি তো কিছু জানি না।শুধু খেয়াল করছি যে মোরশেদ আর খেলতে আসে না।shirt এর বোতাম সব লাগায়ে পরে,মাথার চুলও সব দেখি আচড়ানো থাকে।আর আমি অবাক হতে থাকি।দেখি ডাকলেও খেলতে আসে না।
এইভাবে কিছুদিন চলল।একদিন আমি বারান্দায় বসে আছি।দেখি মোরশেদ আসছে।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,”কিরে,তুই ইদানিং এততো ঘাওড়া হয়ে গেছিস ক্যান?ডাকলেও খেলতে আসিস না…।”
সে আমার দিকে বিরস মুখে তাকিয়ে থেকে বলল,”নানাজান তোর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে।”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”বিয়ে ঠিক করছে মানে কি??বিয়ে হইলে কি হয়?”
মোরশেদ জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে বলল,”সিনেমাতে দেখিস নি যে বিয়ে হলে লাল জামা পরে তারপর ফুল বাগানে গান গায়?”
আমি মোরশেদের দিকে ভাল করে লক্ষ করলাম।ছেলেটার গায়ের রঙ হাড়ির তলার মত কাল,গায়ে সাতজনমের ময়লা তাকিয়ে আছে,মাথায় শরষের তেল চুপচুপ করছে,আর মুখের মানচিত্রে সামনের দুইটা দাত নাই।
এমন একটা খ্যাত ছেলের সাথে আমাকে ফুলবাগানে গান গাইতে হবে সেই ভয়তে আমি তখন অস্থির হয়ে গেলাম।ওকে চিতকার করে বললাম,’’তুই আর কোনদিন আমার সাথে খেলতে আসবি না।”
সে আমাকে নিরাবেগ ভাষায় জানাল,”আমিও তাই ভাবতেছিলাম,যে তোর সাথে খেলি দেখে নানাজান ভাবছে আমি তোরে বিয়ে করতে চাই,আসলে আমি তো মৌলীরে মনে মনে ভালোবাসি।” ()
আমি ওরে বললাম,”তুই এখান থেকে বের হো,যা… মৌলীর সাথে গিয়ে খেলগা।”
সেইদিন রাতে আমাদের বাসা থেকে মাইর এর আওয়াজ আর চিতকার করে কান্না শোনা গেল।পরদিন সকালে শুনলাম নানাজান মোরশেদকে কোপায়ে পিটাইছে।সে নাকি নানাজান কে বলছে যে সে মৌলীকে বিয়ে করতে চায়।
এরপর আমি আর কোনদিন মোরশেদ এর সাথে খেলিনি।
কিছুদিনের মধ্যে আব্বুর posting হল সিলেট।আমরা মোরশেদদের বাড়ি ছেড়ে সিলেট চলে গেলাম।