আমিরুল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ ক্ষমতা গ্রহনের পূর্বে পাইকারী কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি ব্যবসায়ী মানুষ তাঁর ইনকাম ভালো, এতে করে পরিবার পরিজনও সাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতো। খাবার দাবার ,পোষাক আশাক ও অন্যান্য চলাফেরায় খুব পরিপাটি ছিলেন। কিন্তু যেদিন থেকে মুসলমানদের শাসক অর্থাৎ আমীর হলেন সেদিন থেকেই তো ব্যবসা বন্ধ। তাঁর জন্য বায়তুল মাল থেকে মাসিক ভাতা নির্ধারিত হলো।
একদিন ফার্ষ্ট লেডি অর্থাৎ আমিরুল মুমেনিন রাঃ এর স্ত্রী বললেন, হে ওমর রাঃ আপনিও আমীর হলেন আমাদের দিনকাল ও খারাপ হতে লাগলো। কতদিন ভালো খাবার খাইনা বলতে পারেন? কতদিন ভালো পোষাক পরিনা। হযরত ওমর রাঃ তখন অর্ধ পৃথিবীর শাসক, তিনি উত্তর করলেন বিবি এর চেয়ে বেশী করার কিংবা দেবার সামর্থ্য আমার নাই।
ওমর রাঃ বললেন দূরবর্তী নদী তীরে একটি চর্মরোগ গ্রস্থ ছাগল যদি মালিশ করার মতো তেলের অভাবে কষ্ট পায়, কিংবা আফ্রিকার কোন ভাঙ্গা রাস্তায় চলতে গিয়ে একটি ঘোড়াও যদি সামান্য আঘাত পায় তাহলে শেষ দিবসে ওমর কে আল্লাহর দরবারে আসামী হিসাবে দাঁড়াতে হবে।
অনেক দিন পর ওমর রাঃ এর স্ত্রী বহুদিন পর ঘরে ভালো খাবার দাবারের আয়োজন করলেন, অতঃপর তা আমিরুল মুমেনিন রাঃ এর সামনে পরিবেশন করলেন। ওমর রাঃ স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন এ খাবার কোথায় পেয়েছো, বায়তুল মাল থেকে আবার টাকা আনাওনি তো? স্ত্রী বললেন হে আমিরুল মুমেনিন আমি আপনার স্ত্রী হতে পারি কিন্তু যে সব লোক আপনি বায়তুল মাল পাহারা দেবার জন্য রেখেছেন তাদের কাছে আমার আলাদা কোন মূল্য নেই,তাদের কাছে মূল্য শুধু সততার। আমি প্রতি মাসের খরচ হতে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে কয়েক মাস পর আজকে খাবারের আয়োজন করতে পেরেছি।
ওমর রাঃ আর খাবার মুখে নিলেন না, দৌড়ে গেলেন মসজিদে নববীর দিকে। মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দিলেন আজান দাও, সকাল ৮ টার দিকে মুয়াজ্জিন আজান দেয়ার মানে হলো খলিফার জরুরি তলব। সবাই আজান শুনে উপস্থিত হলো, ওমর রাঃ বললেন হে পরিষদের নেতৃবৃন্দ আমি আপনদের তখনই বলেছি আমার মাসিক ভাতা বেশী হয়ে যাচ্ছে, এখন দেখুন আমার স্ত্রী ভাতা থেকে জমাতে পারছে এমন কি তা দিয়ে আমাদের জন্য ভালো খাবার পর্যন্ত তৈরী করেছে, এখন হয় আমার ভাতা কমাও না হয় আমি ইস্তফা দিবো।
আমিরুল মুমেনিন হযরত ওমর রাঃ আজ বড্ড বেশী মনে পড়ছে, মনকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে সে আদর্শ, শাসক গোষ্টির আয়েশি জীবন যাপন খুব বেশী করে কষ্ট দিচ্ছে।
হে আকাশের রব, আমরা বড্ড ক্লান্ত, অন্যায় অবিচার অনাচার আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। হে মেহেরবান, আমাদের জন্য একজন ওমর পাঠাও।