somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা -- সখা আমার,বন্ধু আমার

১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরু করবো একটা মজার গল্প দিয়ে। অনেকদিন পর আব্বা দেশে আসলেন কিছুদিন আগে। আমি আর বাবা মিলে বাজার করতে গেলাম শান্তিনগরে। আগেই বলে নেয়া ভালো বাবার সাথে আমার চেহারার মিল প্রায় ৯৮%। কেউ কেউ বলে আমার মুখে দাঁড়ি লাগিয়ে দিলেই বাবার মতো দেখা যাবে। তো যাই হোক আমরা একটা মাছের দোকানে গেলাম। বাবা মাছ মুলামুলি করছে। মাছওয়ালা আমাকে দেখিয়ে বলছে আপনার এই ছোট ভাই তো কোনদিন মুলামুলি করেনা,আপনি করছেন ক্যান? বাবা ও মজা নিয়ে বলছে কিরে ভাইয়া তুই মুলাস না কেন?

আসলে মাছ ওয়ালার দোষ নেই আমার বাবার সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটাই বন্ধুত্বের। আমি একদিন বাবার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম এক আন্টি পাশে দাঁড়ানো ছিলো। কিছু পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলে? আমি বললাম না বাবার সাথে। তিনি তো দারুন অবাক। কি করে আমি বাবাকে বললাম "আরে ধুর মিয়া রাখেন তো এই আলাপ" কিংবা তুমি যাইয়া নিয়া আসো আমি পারুম না" এই টাইপ আলাপ।

আমার বাবা একজন প্রতিথযশা আলেমে দ্বীন। তাঁর লেখা হাজারো তাফসীরের বই। তবুও ধর্ম বিষয়ে আধুনিক যুগের কিছু সংস্কার নিয়ে আমরা বাবা ছেলে তুমুল তর্কে লিপ্ত হই। অনেক সময় বাবা জিতে যান কখনো আমার যুক্তিতে হেরে গেলে চুপ করে মিটি মিটি হাসে। কিন্তু এর আগে ঘরে গমগম পরিবেশ তৈরী হয়।

আমি বিএনপি করি বলেই হয়তো বাবা আওয়ামীলিগ পছন্দ করেন। কিংবা আমার সাথে রাজনৈতিক যুদ্ধ জমাতেই বাবা হাসিনার উলটা পালটা প্রসংশা করতে থাকেন। এমনো হলো বাবা আমার সাথে টিকতে না পেরে দুপুরে ভাত না খেয়ে শুয়ে রইলো( অপেক্ষা করে আমি কখন সেধে নিয়ে যাবো)

রাতের বেলা বাবা আমার রুমে এসে গল্প জুড়ে দেবেন,রাত গভীর হয় বাবার গল্প বাড়তে থাকে। এমনকি ভোর কখনো ভোর হয়ে যায়।

বাবা নিজে ইনসুলিন নিতে পারেনা, সকাল বেলা তাঁর খুদা লাগে, তাই খুব ভোরে আমাকে ইনসুলিনের জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে। আমি বিরক্ত হই,বাবা মিট মিট হাসে। আর বলে বেটা দেখলি আমি কত্তো ভি আই পি এমবি বি এস ডাক্তার ছাড়া ইনসুলিন নেইনা। আমিও তখন বাবার সাথে হাসি।

প্রায় ২৩ বছর যাবত আমার বাবা মরু শশীর দেশে দূর আরবে পড়ে আছেন। শূন্য থেকে শুরু করে বাবা আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বাবার অধ্যবসায় আর শ্রম বাবাকে এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে।

গত শুক্রবার ১৮ তম বারের মতো বাবাকে এয়ারপোর্টে বিদায় দিতে গেলাম। আমি তখন প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে। বাবা আমাকে বিদায় বলতে এসে নার্ভাস বোধ করছেন তাই আওয়ামীলিগের প্রসংশা করে বলছে "দেখলি কি নাইস এয়ারপোর্ট" এটা এই সরকারের অবদান। আমি কিছু উত্তর করছিনা। বাবা এবার আর নিজেকে মানাতে পারলেন না। বাবার চোখের অশ্রুতে সিক্ত হলো আমার গাল,আর আমার অশ্রু বাবার কপাল ভিজিয়ে দিলো। বিমানে উঠে বসেই আমাকে ফোন দিলেন,রানওয়ে থেকে বিমান দূরআকাশে পাড়ি দিচ্ছে আমাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,বাবা শেষ বলে উঠলেন বিদায়। আমাকে জ্বরের ঘোরে রেখে বাবা এবারের মতো আবারো পাড়ি দিলেন দূরদেশে।

আমি আবার প্রতিক্ষায় আছি। কখন বাবা আবার দেশে ফেরত আসবেন। কখন আবার বাবা এসে আমার সাথে তর্ক যুদ্ধ করবেন, কখন এসে রাতের পর রাত আমাকে মজার কৌতুক শুনাবেন।

বাবা স্রষ্টার অপরুপ সৃষ্টি, বাবা স্রষ্টার মহান দান। বাবা আনন্দ,বাবা হাসি, বাবা দুঃখ ভুলে থাকার অবলম্বন।

" রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানি সাগীরা"

উৎসর্গঃ সে সকল বন্ধুদের যারা বাবা নামক স্রষ্টার মহান নিয়ামতকে হারিয়ে ফেলেছে,আল্লাহ আমাদের বন্ধুদের বাবাদের তুমি জান্নাতুল ফেরদাউসের উচু স্থান দান করো।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×