কানাডার ভ্যানকুভার ইউনিভার্সিটি থেকে ডাঃ মেগান আসলেন সেমিনারে বক্তব্য রাখতে। অনুষ্ঠান চলছে পিজি হাসপাতালের ডাঃ মিলন হলে। বক্তব্য শেষে তিনি লক্ষ্য করলেন তার ল্যাপটপ ও অন্যান্য দরকারী জিনিসপত্র সহ রাখা ব্যাগটি তিনি খুজে পাচ্ছেন না। আমরা সবাই হন্যে হয়ে খুঁজলাম এবং বুঝতে পারলাম যে এই ব্যগটি চুরি হয়ে গেছে। লজ্জায় আমাদের সবার মাথা হেট হয়ে আসছিলো। ছি ছি কি বাজে দেশেই না আমাদের জন্ম হয়েছে। আমরা আমাদের অথিতিদের সামান্য ব্যগের নিরাপত্তাও দিতে পারিনা
অনুষ্ঠান শেষ করে সিএনজিতে করে বাসায় ফিরছি। পিজি হাসপাতালের শিশু অনকোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ আফিকুল ইসলাম ও আমি এক সিএনজিতে করে বাসায় ফিরছি। ডাঃ আফিকুল ইসলাম তাঁর ল্যাপটপ সহ ব্যাগটি আমার হাতে দিলেন নিরাপদে রাখার জন্য। আমি ব্যাগটি সিএনজি এর পেছনে রাখলাম। সিএনজিকে গুলশানের একটি রেষ্টুরেন্টে থামিয়ে আমরা সেখানে খেতে বসলাম। খাবার শেষ হবার কিছু আগে মনে হলো আমি উক্ত ব্যগটি না নিয়ে নেমে পড়েছি। এর অর্থ দাঁড়ায় আমরা আর ঐ ল্যাপটপটি ফেরত পাচ্ছিনা। যে দেশে চোখের সামনে ব্যাগ নিয়ে যায় সে দেশে এ ব্যাগ আর ফেরত আসবে হতেই পারেনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো ঐ ল্যাপটপে সারা দেশের সমস্ত ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের ডাটা ছিলো যা বহু কষ্টে সংগ্রহ করা হয়েছে।
যাই হোক আমরা মলিন মুখে বাসায় ফিরে আসছি। ডাঃ আফিকুল ইসলাম আমাকে অত্যান্ত স্নেহ করেন তাই কিছু বলছেন না। কিন্তু আমি জানি আমার সামান্য ভুলের জন্য কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। তবু ও কোন এক আশায় আমি রেষ্টুরেন্টে আমার ফোন নাম্বার দিয়ে আসি যদি কখনো ফেরত পাই সে আশায়।
আমি বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে আছি। হঠাত রেষ্টুরেন্ট থেকে ফোন। স্যার ঐ সিএনজি ওয়ালা ফেরত এসেছে। আমি তো অবাক এও কি সম্ভব। দৌড়ে ছুটে গেলাম।গিয়ে দেখী আমার সব ধারনাকে মিথ্যে প্রমান করে দিয়ে সিএনজি ড্রাইভার সত্যি সেই ল্যাপটপের ব্যগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুশিতে আমার কান্না পেয়ে গেলো। আমি অবাক নয়নে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছি।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ নিয়ে আমার যে মূল্যায়ন ছিলো তার জন্য নিজের কাছে লজ্জা লাগছে। সত্যিই আমরা দরিদ্র হতে পারি আমাদের অর্থকড়ী কম থাকতে পারে কিন্তু আমাদের সোনার মানুষগুলো এখনো বেঁচে আছে আর আছে বলেই এ শত প্রতিকুলতার মধ্যে আমরা আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।
ছবিঃ আমার সাথে সেই সিএনজি ড্রাইভার