somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারখানা শ্রমিক পরিবার থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট: পুতিনের গল্প

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির সুপার সেনসেশন, একমেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থার অপ্রতিরোধ্য মোড়ল আমেরিকা থেকে শুরু করে ন্যটো কিংবা জাতিসংঘ, কাউকে তোয়াক্কা না করা এক বিশ্বনেতা, যার দূরদর্শী নেতৃত্বে সোভিয়েত পরবর্তী বিপর্যস্থ রাশিয়া আজ ক্ষমতাধর একটি রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যার বিচক্ষন পদক্ষেপ বাঘা বাঘা কূটনীতিবিদ এবং রাজনীতি বিশ্লেষকদেরও অবাক করে দেয় । তিনি ভ্লাদিমির পুতিন ।

সম্প্রতি সিরিয়ায় আইএস নির্মূলে সফল অভিযান, আইএস এর পৃষ্ঠপোষকদের মুখোশ উন্মোচন, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ, জি-৮ থেকে বহিস্কৃত হয়েও অথর্নীতির চাকা সচল রখাসহ আরো অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সারা বিশ্বে হৈ ছৈ ফেলে দিয়েছেন এই বিশ্বনেতা ।

১৯৫২ সালের ৭ই অক্টোবর একজন কারখানা শ্রমিক মা ও বাধ্যতামূলকভাবে সোভিয়েত নেভিতে নিয়োজিত হতদরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম নেন পুতিন । ১১ বছর বয়সে ৪৫ জন স্কুলের সহপাঠীদের মধ্যে হাতে গুনা যেকজন পাইওনিয়ার অর্গনাইজেশনে (স্কাউটের মতো সংগঠন) উশৃঙ্খলতার জন্য সদস্য হতে পারেনি, তাদের মধ্যে পুতিন ছিলেন অন্যতম ।১২ বছর বয়স থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ জন্মায় এবং তিনি একজন দক্ষ জুডো খেলোয়াড় হিসাবেই নিজেকে গড়ে তুলেন । গোয়েন্ধাগিরির প্রতি প্রবল আগ্রহের জন্যই স্পাই রিলেটেড সোভিয়েত সিনেমা দেখতেন এবং সবসময়ই নিজেকে স্পাই হিসাবে কল্পনা করতেন। ১৯৭৫ সালে লেনিনগার্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন ।তার ফাইনাল থিসিসের বিষয় ছিল “The Most Favored Nation Trading Principle in International Law" । বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায়ই কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঐ দলের সদস্য ছিলেন ।

১৯৭৫ সালে পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি: রাশিয়ান ভাষায়- কমিটেট গোসুদারস্তভেনয় বেজোপাসনস্তি। ইংরেজিতে: কমিটি ফর স্টেট সিকিউরিটিতে যোগদান করেন ।কর্মক্ষেত্র হিসাবে জার্মানিতেও তিনি কেজিবির হয়ে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন । কর্তব্যরত অবস্থায় পশ্চিমাদের নজরদারীসহ অনেক বিষয়েই অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন তিনি ।
বার্লিন দেয়াল পতনের সময় সিভিল রাইটস এক্টিভিস্টরা যখন কেজিবির বিল্ডিং ওড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল । পুতিন বিচক্ষনতার সাথে তাৎক্ষনিকভাবে কেজিবির অফিসে থাকা সকল ধরনের ইন্টিলিজেন্স ফাইল এবং ডকুমেন্ট পুড়িয়ে ফেলেন এবং কঠোরভাবে তার উর্ধ্ধতনদের জানিয়ে দেন এইসব ব্যপারে যেন বলা হয় ‘মস্কো ইজ সাইলেন্ট’ ।

১৯৯১ সালে সিক্রেট সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহন করে সেইন্ট পেটিসবার্গের মেয়র অফিসে Committee for External Relations এর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি ।১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেইন্ট পেটিসবার্গে আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৫-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আওয়ার হোম ইজ রাশিয়া নামক রাজনৈতিক দলে সক্রিয় একজন নেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন ।১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মস্কোতে প্রেসিডেনশিয়াল স্টাফ এর চিফ অফিসার, এফএসবি এর প্রধান এবং সিকিউরিটি কাউনসিল অব রাশিয়ান ফেডারেশনের সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালন করেন ।

১৯৯৯ সালে পুতিন প্রেসিডেন্ট বুরিস ইয়েলটিনের রিকমেন্ডেশনে রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন, পরবর্তীতে পধানমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন ।পুতিন রাজনীতিবীদ হিসাবে খুব বেশি পরিচিতি ছিল না, তিনি মন্ত্রীত্বর চেয়ে প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেমকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন । বিরোধীরা যখন তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে অপসারনের জন্য ক্যম্পেইন করতে থাকলো, তখন ল্য এন্ড অর্ডার ইমেজ এবং দ্বিতীয় চেচনিয়া যুদ্ধ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি’ তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে শুরু করলো এবং তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনাইটেড পার্টিতে যোগ দেন । এই দলটিই এখন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ । ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুতিন । সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতায় টানা তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারেননি।রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন পুতিন । ২০১২ সালে ৬৩.৬% ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাশিয়ার এই ভাগ্যবিধাতা ।

২০১২ সালের মে মাসে মস্কোতে পুতিন বিরোধী প্রচারনা এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা তুঙ্গে ওঠলে, নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইনঅগরাল প্রোগ্রমে প্রথম দিনেই ১৪ টি প্রেসিডেনশিয়াল আদেশ জারি করেন যেখানে মিডিয়া, অর্থনীতি, শিক্ষা, হাউসিং, শ্রমিক প্রশিক্ষন, ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা সহ পুতিনের নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত ছিল । নির্বাচনী প্রচারনায় পত্রিকায় কলাম লেখা সহ রাজনৈতিক বক্তৃতায় বিগত দশকে রাশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষৎ রাশিয়া নিয়ে পুরো পরিকল্পনা জনগনের সামনে উপস্থাপন করেন পুতিন ।

এই পুতিনের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের পরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকভাবে রাশিয়ার যে দুরাবস্থা ছিল তার আমুল পরিবর্তন ঘটে, জিডিপি ৭২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, গড় বেতন ৮০ ডলার থেকে ৬৪০ ডালারে উন্নীত হয়, দারিদ্রের পরিমান ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় পরিনত হয় রাশিয়া, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্র, এনার্জি সুপার পাওয়ারে রুপান্তর, পররাষ্ট্র নীতি, শিল্পায়ন, ধর্মীয় নীতিসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আছে পুতিনের উল্লেখযোগ্য অবদান । ২০০৭ সালে টাইম ম্যগাজিনের পার্সন অব দ্যা ইয়ার ঘোষিত হন সাবেক এই কেজিবি স্পাই ।

রাশিয়ার ক্ষমতার মসনদে আসার পর থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে আলোচিত এবং সমালোচিত এই ভ্লাদিমির পুতিন । স্ত্রীকে পেঠানো থেকে শুরু করে নারীদের প্রতি আসক্তি, ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর অর্থের মালিকানা, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টাসহ অনেক অভিযোগ আছে এই নেতার বিরুদ্ধে ।

[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/sharif9bd/sharif9bd-1444583633-9836a41_xlarge.jpg
[ছবি: ময়ের সাথে পুতিন, ১৯৫৮ ]

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×