আপনাদের কতজন ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান ?
২ জন ছাড়া ৩০ জনের ২৮ জনই উপরে হাত তুলল । আমি অবাক, কোথায় এসে পড়লামরে বাবা, আদিকালে কি এই ভূখন্ডের পূর্বসুরীরা সবাই শিক্ষক ছিল ? কিছুক্ষণ পর উত্তর পেয়ে গেলাম....
গত শুক্রবর লন্ডন প্রবাসী শফিক ভাইয়ের অমন্ত্রনে দু-চারটা মটিভেশনাল কথা-বার্ত শেয়ার করতে গিয়েছিলাম দয়ামীর , ভদ্রলোক প্রায় ১৫-২০ বছর যাবৎ লন্ডনে আছেন । আর ১০ জন প্রবাসীর মত সেখানকার সাদা চামড়ার হাই পপস মার্কা কালচার, রকিং স্টাইল এবং আভিজাত্য তার খুব বেশি একটা পছন্দের না । মাটির টানে নিজের গ্রাম আর দেশ তাকে খুব ভাবায় । লন্ডনের শিক্ষার্থীদের একটা বিষয় তার মাথায় ভালভাবেই ঘুরপাক খায় " ইংল্যান্ডে কলেজ-ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য লেবেলের শিক্ষার্থীরা বছরে একটা নির্দিষ্ট সময়ের (winter/summer) জন্য দীর্ঘ দিনের ছুটি পায় । ঐ ছুটির একটা নির্দিষ্ট সময় তারা ভাগ করে নেয় ফ্রীতে কমিউনিটি ডেভলাপমেন্ট / দরিদ্র মানুষদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য সেবা দেওয়ার জন্য "
চিন্তায় পড়লেন শফিক ভাই, আমাদের দেশেতো এই সিস্টেম চালু নেই । কিন্তু শিক্ষার্থীদের কিভাবে সেচ্ছাসেবী কাজে লাগানো যায় । অনেক চিন্তা-ভাবনার পর নিজের এলাকা ওসমানী নগরের থেকেই শুরু করলেন একটি প্রকল্প " কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৩০ জন ছাত্রীদের নিয়ে নিজ এলাকার দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার আলোয় জ্বলে উঠার সু-ব্যবস্থা করে দিলেন । প্রতি শুক্রবারে এই ৩০ জন সেচ্ছাসেবী চার টি দলে বিভক্ত হয়ে চলে যান দয়ামীর আ: সুবহান, সুরারগাও, দৌলতপুর এবং ঘোষগাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লাস নেয় তারা দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রীদের । প্রতি শুক্রবারেই চলে তাদের এই কার্যক্রম, তাদের ৩০ জনের কেউই সামান্যতম সম্মানী ও নেয় না । তবে তাদের যাতায়ত ভাতা, নাস্তা এবং মাঝে মধ্যে ট্রেইনিং এর আয়োজন করা হয়, পুরু ব্যায় বহন করেন শফিক ভাই । তাদের জন্য নিয়মিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি । ‘’
দয়ামীর গ্রামের হত দরিদ্র ৩ জন প্রতিবন্ধীর উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ব্যায় বহন করার দায়িত্ব নিয়েছেন এই ভদ্রলোক, আনন্দের বিষয়, ইতোমধ্যেই এই তিন জনের একজন এস.এস.সি পাশ করে চাকরি পেয়েছেন । নিজ উদ্যোগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রয়াস সেচ্ছাসেবী সংগঠন যার মাধ্যমে চলছে আরো বিভিন্ন সেবামূলক কাজ । এবং সবকিছুই তিনি স্থানীয় কয়েকজন সেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে পরিচালনা করছেন লন্ডনে বসেই ।
তার এই প্রচেষ্ঠা আলোকিত করছে হাজারো দরিদ্র শিশুদের জীবন সাথে সাথে শিক্ষা এবং সেবায় নিয়োজিত থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সম্ভাবনাময় তরুণীদের ।
স্যালুট জানাই শিক্ষা অনুরাগী এই প্রবাসী ভাইকে । বিদেশীদের চকচকে বিলাসিতা অনুসরণ না করে তাদের ভাল দিকগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেও যে দেশের জন্য কিছু করা যায়, তারই উদাহারণ এই মানুষটি ।
বাংলাদেশর প্রতিটা গ্রামে জন্ম হউক একটা করে শফিক ভাইয়ের... আগামীর বাংলাদেশ হউক আরো সম্ভাবনাময়.....
[ দু:খিত নেতিবাচক শিরোনামের জন্য, কিন্তু প্রবাসী হিসাবে বিলাসিতার চেয়ে উল্টো সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন..যেটিকে কান্ডই বলা যায়]