আজ সকাল বেলা মাওয়া ফেরিঘাট থেকে ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হচ্ছিল ১৬ বছরের পুরনো লঞ্চ পিনাক ০০৭ । ঈদ মৌসুম তাই ১ ঘন্টায়ই ২৫০ জন যাত্রী হয়ে গেল । যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে হঠাৎ করেই দেখা গেল খুব দ্রুত গতিতে ৫ জন পুলিশ সহ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাজির । নির্দেশ দেওয়া হল লঞ্চের যাত্রা থামানোর জন্য । আশ্চর্য ব্যাপার ফেরিঘাট থেকে পুলিশ স্টেশন প্রায় ২০ কিলো মিটার দূর, সচরাচর এখানে পুলিশও আসে না । কিন্তু আজ এত দ্রুত পুলিশ এসে হাজির কেন ? নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে নির্দেশ দিলেন ১৫০ জন যাত্রী নেমে যাওয়ার জন্য , লাইসেন্স বিহীন চালককে গ্রেপ্তারর করা হল সাথে সাথেই । আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ফোন আসল বৈরি আবহাওয়ার জন্য যাতে আরো ১ ঘন্টা পরে লঞ্চ ছাড়া হয় । লঞ্চ কতৃপক্ষকে জরিমানা করা হল ৫০,০০০ টাকা , শীগ্রই লাইসেন্স সহ একজন দক্ষ চালককে দায়িত্ব দেওয়া হল ১ ঘন্টা পর যাত্রা শুরু করার জন্য । ১০ মিনিটের ভিতরেই ঘটে গেল এইসব ঘটনা । তারপর সময়মতই যাত্রা শুরু করল পিনাক ০০৭ ।
কিন্তু এত দ্রুত কিভাবে ঘটল এইসব ঘটনা । গত ২ মাস আগে মুন্সীগঞ্জে একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনার পর সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপের কারণেই সম্ভব হয়েছে সব কিছু । দেশের প্রত্যেকটি লঞ্চ এবং জাহাজে একটি বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে । এই ধরনের ডিভাইস লিফ্টেও ব্যবহার করা হয়, কোন লিফ্টে যদি নির্ধারিত সংখ্যক যাত্রীর চেয়ে বেশী যাত্রী উঠে সেক্ষেত্রে লিফ্টটি বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিফ্ট কন্ট্রোল স্টেশনে এলার্ম বাজতে থাকে, অতিরিক্ত যাত্রী নামার পর লিফ্ট আবার চলতে শুরু করে এবং কতৃপক্ষও এই বিষয়ে অবগত হয় ।
পিনাক ০০৭ এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১০০ জন । এই ডিভাইসটি ব্যবহার করার ফলে অতিরিক্ত যাত্রী উঠার সাথে সাথে সংশ্লিস্ট কন্ট্রোল স্টেশন, পার্শ্ববর্তী পুলিশ স্টেশন এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরে লঞ্চটির লোকেশন এবং ডিটেইলস সহ একটি এসএমএস চলে গেল আর সাথে সাথে তিনটি স্টেশনেই অবিরাম বিপদ সংকেত রেড এলার্ম বজতে শুরু করল । একজন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে রওয়ানা হওয়ার জন্য, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কন্ট্রোল স্টেশন থেকে পুলিশকে আরো বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হল । তাই অতি দ্রুত পুলিশ ফেরিঘাটে হাজির । লঞ্চে আরেকটি ফেইস ডিটেকটর ডিভাইস ছিল, যেটি লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রত্যেকটি চালকের চেহারা আইডেন্টিফাই করতে পারে, লাইসেন্সবিহীন ফেইস ডিটেক্ট করতে পারলেই রেড এলার্ম । পিনাক ০০৭ এ লাইসেন্সবিহীন চালকের ফেইস ডিটেক্ট করার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় রেড এলার্ম বেজে উঠে তিনটি স্টেশনেই , তাই পুলিশ সহজেই গ্রেপ্তার করল ভূয়া চালককে ।
আর মুন্সীগঞ্জের দূর্ঘটনার পরই সরকার চলমান সম্প্রচার নীতিমালার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল নৌ-পরিবহণ চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালায় এবং যা কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়, ফলে সহজেই ৫০,০০০ টাকা জরিমানা এবং তা কর্যকর করার পদক্ষেপ নিতে পারল প্রশাসন ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর মুন্সীগঞ্জের দূর্ঘটনার পর থেকে সচেতন হওয়ায়, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অবহাওয়া সংক্রান্ত সকল খবর যাথে খুব দ্রুত প্রতিটি লঞ্চ-জাহাজে পৌছায় সেই উদ্যোগ নিয়েছিল । আর যেসব লঞ্চ ঝুকিপূর্ণ বৈরী আবহাওয়ার শিকার হতে পারে, কোন পূর্বাবাস পাওয়ার সাথে সাথে সেইসব লঞ্চে সরাসরি ফোন চলে যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এবং সকল ধরণের দিক নির্দেশনা সহ সতর্ক করা হয় লঞ্চ কতৃপক্ষকে । এইসব পদক্ষেপের কারণেই দূর্ঘটনার শিকার হতে যাওয়া পিনাক ০০৭ রক্ষা পেল ।
প্রশাসন এবং সংশ্লিস্ট কতৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে ইতোপূর্বে আরো কয়েকটি লঞ্চকে জরিমানা সহ ভূয়া চালকদের বিভিন্ন শাস্তি দেওয়ায় যাত্রী এবং লঞ্চ কতৃপক্ষ সবাই ই সচেতন হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে নৌ-দূর্ঘটনার সম্ভাবনা হ্রাস পাচ্ছে ।
[ পিনাক ০০৭ এবং এই গল্প পুরোটাই কাল্পনিক, গল্পটিকে বাস্তব রুপ দেওয়া কিন্তু অসম্ভবের কিছু নয় । আর ২ মাস পর আগামী ঈদে এই ধরণের সংবাদ যদি পত্রিকায় পড়তে পারতাম .........
না- ফিরার দেশে হারিয়ে যাওয়া পিনাক-৬ এর যাত্রীদের আত্নার মাগফিরাত কামনা করছি ]
ফেইসবুকে এক বড় ভাইয়ের কমেন্ট.....