এই ধরনের পোস্ট লিখার কোন ইচ্ছাই আমার কখনো ছিল না । কারন, নিজের নামের পাশে বাঙ্গালী অথবা বাংলাদেশ থাকার পরও অন্য কারো আক্রমনাত্বক আচরনের প্রতিউত্তরে কেন অঞ্চলিক পরিচয় সিলেটি হিসেবে গর্বিত এই ধরনের পোস্ট লিখতে হবে এর গুরুত্ব কখনো উপলব্দি করতে পারি নি । নোটটি লিখার মূল উদ্দ্যেশ্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্চ পদ্বতিতে পরীক্ষা নেওয়াকে কেন্দ্র করে ‘সচেতন সিলেটবাসী’ নামক একটি স্বার্থান্বেসী মহলের কিছু অযৌক্তিক দাবি এবং গুচ্চ পরীক্ষা স্তগিত করার প্রতিবাদে ; যারা সমস্ত সিলেটবাসীদের প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, যারা সিলেটিদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যারা সিলেটিদের ফগা প্রমাণ করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যায় করে ফেইসবুকের স্ট্যটাস রচনা করেচেন, তাদের উদ্দ্যেশে লিখা ।
সচেতন সিলেটবাসী, ৫০% কোটা এবং তাদের সমর্থকঃ
সচেতন সিলেটবাসী নামধারী এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ৩৭ জন, যেখানে বাম-ডান, উপর-নীচ সব ধরনের রাজনৈতিক দলের কতিপয় সদস্য বিদ্যমান । গুচ্চ পদ্বতির পরীক্ষা সম্পর্কে যাদের ধারনা সম্পূর্ন উল্টো, তাদের ধারনা অনুযায়ী এই পদ্বতিতে পরীক্ষা হলে একই মেরিট লিস্টে যশোরের অনেক ছেলে মেয়ে সাস্টে চান্স পেয়ে যাবে এবং সিলেটের অনেক ছেলে মেয়েকে যশোরে পড়া লেখা করতে হবে । যেটা তাদের অনেকেই মেনে নিতে পারবেন না [ভুল ধারনা, গুচ্চ পদ্বতির খুটিনাটি জানতে এই লিংকটিতে দেখতে পারেন https://www.facebook.com/combinedadmission]
সিলেট মদন মোহন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল আতাউর রহমান পীর, ঐ সভায় তার বক্তব্যে বলেছিলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক লোকজন নিহত ও আহত হয়েছেন। তাই শাবিতে সিলেটী শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ভাগ কোটা চালু করার দাবী ছিল তার, যা স্মারকলিপিতে অথবা লিখিত কোন দাবী ছিল না । আর এই নিউজটি http://www.campuslive24.com নামক একটি অনলাইন মিডিয়া খুব ফলাও করে প্রচার করেছে । কিন্ত তাদের মুল দাবী সমন্বিত বা গুচ্চ পদ্বতির পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে [ আর এই কোটা নিয়ে সিলেটিদের হেয় করতে বেলে নাচে মেতে উটেছিল কতিপয় ফেইসবুকবাসী ] ।আর তাদের যারা সমর্থক রয়েছেন তাদেরকেও গুচ্চ পদ্বতির ভুল ব্যখ্যা বুঝিয়েই সমর্থনে আনা হয়েছে । সবশেষে গতকাল রাতে (২৭.১১.২০৩) জাফর স্যারের বাসার সামনে এবং ক্যম্পাসে কয়েকটি ককটেল ফাটানোর বিষয়টি বিশ্লেষন করলেই বুঝা যায় কি উদ্দ্যেশ্যে এই স্বার্থান্বেসী মহল আন্দোলন করছে এবং তাদের অযৌক্তিক দাবী।অতএব বিষয়টি স্পষ্ট সমস্ত সিলেটবাসীর সমর্থন তাদের প্রতি নেই ।
ফেইসবুক, সোসাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ভাবে সিলেট বিদ্বেষী ঝড়ঃ
এই নিউজটি ছড়ানোর পর থেকেই গত তিন দিন যাবৎ অনেকেই ঢালওভাবে প্রচার করা শুরু করেছেন সিলেটিরা অশিক্ষিত, মূর্খ, ফগা, অনগ্রসর জাতি, এদের কোটাই প্রয়োজন, কেউ কেউ আবার সিলেটকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার পক্ষপাতিত্ব করেছেন । কেউ কেউ আবাদি-গবাদির ঝর তুলে সিলেটি গবাদীরা কত বাজে, তা প্রমাণ করার আপ্রান চেষ্টা করেছেন । কারো কারো মতে এরা সিলটি ফগা লন্ডনী, লন্ডন গিয়া রেস্টুরেন্টে কাজ করে ।অনেকেই সিলেটকে রস+আলোর ক্যানভাস বানিয়েছেন । এক কথায় সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিছুই এদের হাত থেকে রেহাই পায় নি [যারা শুধু ঐ নামধারী সচেতন সিলেটবাসীদের উদ্দ্যেশে বলেছেন, তাদের কিছু বলার নেই; কিন্তু ঢালওভাবে যারা সমস্ত সিলেটিদের অপমানে সিদ্বহস্ত ছিলেন, তাদের মন-মানষিকতা আসলেই প্রশ্নসাপেক্ষ]
কেন সিলেটি হিসেবে গর্বিত ?
একটি বেসরকারী পরিসংখ্যান বলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০% ছাত্র-ছাত্রী সিলেট বিভাগের । যারা সবাই ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মেধার পরীক্ষা দিয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে । বিগত ৪ বছর ধরে কোন না কোন ইউনিটে সিলেটী ছাত্র-ছাত্রীরা ১ম, ২য় হয়ে আসছে এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেই সিলেটী স্টুডেন্টরা ১ স্থান দখল করে আছে, নাহ, এই গুলো কোটার জন্য নয় নিজেদের মেধার জন্য, আমি যে ডিপার্টম্যান্ট (লোক প্রশাসন) এ পড়ছি, আমার ব্যচেও ১ম, ২য় দুইজন সিলেটি । আর শুধু শাবিপ্রবিতেই নয় দেশের অন্যান্য নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যায়নরত আছে হাজার হাজার সিলেটি ছাত্রছাত্রী ।জ্বী, এই সিলেটিদের ইতিহাস একটু নাড়া-ছাড়া করলেই পেয়ে যাবেন অতীত থেকে এখন পর্যন্ত সিলেটিরা কিভাবে মেধার পরিচয় দিয়ে আসছে-
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, যার নেতৃত্বে এই দেশে নয় মাস মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনী অস্ত্র চালিয়েছিল সেই এম এ জি ওসমানী ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে৷ সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন৷ এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এম. এ. জি. ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে ।
জাতিসংঘের প্রথম এশিয়া বিষয়ক Executive Secretary General শাহ এম এস কিবরিয়ার মত অর্থমন্ত্রী সিলেটেরই সন্তান; যার জীবনে কখনোই কোন ক্লাসে প্রথম থেকে ২ য় হন নি ।
ব্রিটিশ নাইট উপাধি লাভ করার পর যার হাস্যোজ্জল চেহারা দেখে আপনারাও হাসেন, সেই মেধাবী ব্র্যাক-এর প্রতিষ্টাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদও সিলেটেরই সন্তান ।
যাদের গান গেয়ে আপনারা দেশ বিদেশের মঞ্চ কাঁপান, সেই অধ্যাত্বিক মেধাবী হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, শেখ ভানু শাহ, এই সিলেটেরই সন্তান ।
এশিয়ার নোবেল খ্যাত ম্যগাসাস এওয়ার্ড প্রাপ্ত পরিবেশ আইনজীবি রেজওয়ানা হাসান সিলেটেরই সন্তান, মেধার পরিচয় দিয়েই তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেছেন ।
নিত্য নতুন রন্ধন কৌশলের প্রতিভা দেখিয়ে যিনি ‘ব্রিটিশ সেলিব্রিটির’ খেতাব পেয়েছেন, সেই টমি মিয়া সিলেটেরই সন্তান ।
অসাধারণ কূটনৈতিক প্রতিভার অধিকারী স্পিকার হুমায়ুন রশীদ সিলেটেরই সন্তান, যিনি তার কূটনৈতিক পারদর্শীতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রতি ৪০ টি দেশের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিলেন ।
ক্রিকেট মাঠে টেলেন্টের পরিচয় দেওয়া সেই তাপস বষ্য, অলক কপালী, রাজিন সালেহ, নাজমুল হোসেন, এই সিলেটেরই প্রতিভা ।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হাস্যোজ্জল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি রোশনারা আলী এম পি সিলেটেরই বংশদ্ভুত ।
যার ফেইসবুক স্ট্যটাস দেওয়ার পর টেকনাফ-তেতুলিঁয়া বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কমেন্টে লিখে We are proud of u; যার কথায় ১০ লক্ষ তরুণ স্বপ্ন দেখতে শিখছে উদ্যোক্তা হওয়ার সেই সাবিরুল ইসলাম সিলেটেরই বংশদ্ভুত ।
এইভাবে বলতে থাকলে শেষ করা দুঃসাধ্য কাজ হয়ে যাবে । সবশেষে সাস্টের একজন তরুণ বিজ্ঞানীর কথা দিয়েই শেষ করি, যিনি অত্যাধুনিক লোকেশন ট্র্যাকার, ইন্টিলিজেন্স লেজার, অন্ধদের জন্য বিশেষ যন্ত্র আবিস্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষনা ক্ষেত্রকে । সেই রেজওয়ানুল হক নাবিল সিলেটেরই সন্তান ।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বহাল এবং সিলেটি সাস্টিয়ান:
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বহাল এর আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী ৩০০০ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উল্ল্যেকযোগ্য অংশ ছিল সিলেটি সাস্টিয়ানরা । অর্থাৎ তারা যে এই সমন্বিত পদ্বতির বিরুদ্ধে নেই এবং তথাকথিত ভুয়াঁ কোটার পক্ষপাতী নয় তারই প্রমান ।
সবশেষেঃ
আমার মত অনেক সিলেটিরাই যারা অন্যদের বিব্রতকর মন্তব্যে আঘাত পেয়েছেন, তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছি, ‘একটা বিশেষ প্রাণী তার কাজ করিয়াছে, কামড় দিয়েছে ভাই, তাই বলে কি ঐ প্রাণীকে কামড় দেয়া আমাদের শুভা পায়’ । আর যারা এইসব করেছেন তাদের উদ্দ্যেশে বলছি, ভাই অন্যদের সম্মান করতে শিখুন আপনিও সম্মান পাবেন । কারো বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে, ভাত খাওয়ার পর, ঐ ভাতের প্লেইটই ছিদ্র করে দেওয়ার মধ্যে মহত্ব বা শ্রেষ্টত্বের কিছু নেই বরং নিজের আঞ্চলিক ভদ্রতাকে ছোট করা আর হীন-মানষিকতার পরিচয় দেওয়ারই নামান্তর ।
অবশেষে সবার উদ্দ্যশ্যে বলছি, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন ; এই উস্কানীমুলক মন্তব্য এবং কথা-বার্তা পরিহার করে আমাদের সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে যেন শেষ পর্যন্ত এই সমন্বিত পদ্বতিতেই ভর্তি পরীক্ষা হয় ।
ফেইসবুকে আমি: https://www.facebook.com/sust.sharif
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৯