১।
করিন্থ ভ্রমনের পথে এথেন্সের রাজা, আগিউস, রাজকুমারী এথেরাকে বিয়ে করে বসলেন। এথেরা ছিল বেল্লেরোফোনের** বাগদত্তা . কিন্তু তাঁর জন্য অপেক্ষার করতে করতে ক্রমশ বেল্লেরোফনের উপর এথেরার আগ্রহ মিইয়ে গেল।তাই এথেরাও রাজা আগিউসের বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলো সহজেই
এথেরার সাথে কিছুদিন আনন্দঘন মূহুর্ত কাটানোর পর এক সন্ধ্যায় আগিউস তাকে ডেকে বলল, "হে আমার প্রিয়া! আমি ভীত! আমাকে অবশ্যই চলে যেতে হবে। যদিও তোমার একটা সন্তান হয়েছে, কিন্তু আমার মতে ইহাই সর্বাধিক নিরাপদ হইবে । তুমি জনসম্মুখে বলবে এ সন্তান দেবতা পোসেডাইনের । আমি তোমাকে বিয়ে করেছি শুনলে আমার বড় ভাগ্নে তোমাকে খুন করবে। কারণ আমার পরে তারাই এথেস্নের সিংহাসনে বসার কথা। সুতরাং বিদায় হে প্রিয়া... ”
তারপর আগিউস আর কখনও এথেন্স ছেড়ে করিন্থে আসলেন না।
আগিউস ও রাণী এথেরা
২।
এদিকে এথেরার গর্ভে আগিউসের সন্তান। এথেরা তার সন্তানের নাম রাখল থিসিউস। তার চৌদ্দতম জন্মদিনে রাণী তাকে একটি পাথর দেখিয়ে বললেন,” তুমি কি ঐ বিশাল পাথরখানা সরাতে পারবে?” থিসিউস, শক্তিশালী সেই বালক পাথরটি তুলে দূরে নিক্ষেপ করল। পাথরের তলদেশে সে একটি তরবারী পেল, যার হাতল ছিল স্বর্প খচিত। অগ্নি যেনো ঠিকরে বেরুলো সে তরবারী থেকে। সে একজোড়া জুতাও পেল। "এগুলো তোমার পিতা রেখে গিয়েছেন হে বত্তস" এথেরা বলল। "তিনি আগিউস, এথেন্সের রাজা। এগুলো তাঁর নিকট নিয়ে যাও এবং বলবে এগুলো তুমি পাথরের নিচে পেয়েছো। কিন্তু মনে রেখ, একটা কথাও তার ভাগ্নাদেরকে বলবে না, তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়বে যদি জানতে পারে তুমিই এথেস্নের আসল উত্তরাধীকারী। তাদের কারণে এতদিন আমি বলে আসছি আগিউস নয়, পোসেডাইনেই তোমার বাবা।"
থিসিউস, সেই শক্তিশালী বালক
৩।
থিসিউস এথেস্ন উপকূলের রাস্তা ধরে হাটছিল। । প্রথমে দৈত্য সিনিসের সাথে তার দেখা হল। তার ছিল এক মারাত্মক ভয়ানক বদ অব্যাশ। সে দুটি পাইনগাছকে একত্রে বাঁধত, পথিমধ্যে কোন পথিক পেলে সে তাদের জোর করে ধরে নিয়ে আসত। হতভাগ্য পথিকদের হাতদুটো বৃক্ষদ্বয়ের সাথে বেধে গাছের বাঁধন খুলে দিত আর পথিকরা দুটুকরো হয়ে ছিড়ে যেত। থিসিউস তার সাথে কুস্তি লড়ল। সিনিসকে ভুমায়িত করে সে তাকে তার প্রতিদান বুঝিয়ে দিল যেমনটা সে লোকজনের সাথে করত।
সিনিস ও তার পাইন গাছ
অতঃপর, থিসিউস বিশাল চোয়াল ও ধারালো দন্ত বিশিষ্ট আরেক দানবের মুখোমুখি হল, তার নাম প্রোকাস্টেস। সে ছিল এক সরাইখানার মালিক। রাস্তার পাশেই ছিল তার সরাইখানাটি এবং সরাইখানায় ছিল একটি মাত্র খাট। কোন পথিক যদি খাটের তুলনায় বেটো হত তবে সে "র্যাক" নামক এক যন্ত্র দিয়ে নির্যাতনের পর নির্যাতন করে টেনে হিচঁড়ে তাদের লম্বা করে দিত, যদি অধিক লম্বা হত তবে সে পথিকের পাদুটো কেটে নিত আর যদি সমান হত তবে কম্বল আবৃত করে শ্বাসরোধ করে তাকে মেরে ফেলত। এমনি ছিল তার ভয়াবহতা। থিসিউস তাকেও পরাজিত করল। তাকে খাটের সাথে বেধে তার পা দুটো কেটে নিল; তবুও সে অধিক লম্বা হওয়ায় তার মাথাও কেটে ফেলল। পরে প্রোকাস্টেসের শরীর কম্বলাবৃত করে তাকে সাগরে নিক্ষেপ করল।
প্রোকাস্টাস ও তার খাট
৪।
কিং আগিউস ইতিমধ্যে মেডেয়া নামের এক জাদুকরকে দ্বিতীয় বিয়ে করলেন। থিসিউস তার বাবার বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানত নাহ। কিন্তু এথেন্সে তার আগমন সম্পর্কে জাদুকর মেডেয়া তার জাদুর গোলক দ্বারা সব জেনে ফেলল । মেডেয়া তার জাদুবলে জানল সে কে এবং কি তার উদ্দেশ্য। থিসিউসকে হত্যা করতে সে বদ্ধ পরিকল্প।
থিসিউস রাজা আগিউস ও মেডেয়ার সামনে।
মদে "ওলফব্যান”(বিষবৃক্ষের ফল) মিশিয়ে সে থিসিউসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। মেডেয়া একমাত্র ইচ্ছা তার ছেলেই হবে পরবর্তী এথেন্সের রাজা। সোভাগ্যজনকভাবে আগিউস থিসিউসেস তরবারীর হাতলে স্বর্পখচিত দেখল, এবং আন্দাজ করল থিসিউস তার পূত্র এবং তাকে আপ্যায়িত মদের পেয়ালা বিষযুক্ত হতে পারে। তিনি পেয়ালা মেঝেতে ছুড়ে মারলেন। সাথে সাথে সেখানে আগুন ধরে গেলো এবং এক বিশাল গর্ত হয়ে গেলো। রাণী মেডেয়া ধুম্রকুন্ডলীতে অদৃশ্য হয়ে পালিয়ে গেলেন। অতঃপর আগিউস তার ভুল বুঝতে পেরে করিন্থে এথেরাকে নিয়ে আসতে "থিসিউস আমার সন্তান এবং উত্তারাধিকারী" এই মর্মে ঘোষণা সহ একজন দূত প্রেরণ করলেন।
পরেরদিন আগিউসের ভাগ্নেরা থিসিউসকে তার মন্দিরে যাওয়ার পথে অজ্ঞান করার চেষ্টা করল, কিন্তু তারা ব্যার্থ হল। থিসিউস তাদের সাথে লড়াই করল। থিসিউসের শৈর্য বীর্যের কাছে কেওই টিকল না। সে তাদেরকে পরাজিত করল ও সবাইকে হত্যা করল।
৫।
কিছুকাল আগের ঘটনা।
রাজা মাইনসের পুত্র এন্ড্রুগেস এথেন্স ভ্রমনে এসেছিল এবং দৌড়, ঝাপ, চাকতি নিক্ষেপ, কুস্তিসহ অলিম্পিকের সব খেলায় সে জিতল। এ নিয়ে আগিউসের ঈর্ষান্বিত ভাগ্নেরা এন্ড্রুগেসের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ এনে তাকে হত্যা করল। মাইনস যখন অলিম্পিয়াসদের দরবারে এ নিয়ে নালিশ করল, তারা আগিউসকে আদেশ দিল যে প্রতি নয় বছর অন্তর অন্তর রাক্ষস ক্রিটান মাইনোটরের জন্য এথেন্স থেকে ৭ জন যুবক এবং ৭ জন যুবতী প্রেরণ করতে হবে। মাইনটর ছিল এমন এক দৈত্য যার অর্ধেক মানবশরীর বাকি অর্ধেক ষাঁড় যাকে মাইনস তার রাজ্যের মাঝখানে বন্দী করে রেখেছিল।
{আগামী পর্বে সমাপ্প}
** বেল্লেরোফনঃ সেই গ্রীক নায়ক যে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে অগ্নিশ্বাস দানব সিমেরাকে বধ করেছিল।
মিথলজির সক্ষিপ্ত ধারণা নিয়ে আমার আরেকটা পোস্ট যেখানে বাচ্ছাদের প্রবেশ না করতেই বলা হল ঃ
গ্রীক মিথলজির সক্ষিপ্ত পরিচিতি। (ছোটবাচ্চাপান নিজ দায়িত্বে ডুকবা)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৭:৪২