আমরা বাঙালীরা সত্যি অদ্ভূত । বিশ্বের সব জাতির মধ্যে কিছু ভালো কিছু মন্দ বৈশিষ্ট্য আছে । আর মানুষ হিসেবে এ বৈশিষ্ট্য থাকাটাই স্বাভাবিক । আমরা যেহেতু উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। এখানকার মানুষের অভাব অনটন অশিক্ষা কু শিক্ষা থাকাটও কিন্তু স্বাভাবিক । কিন্তু আমার কথাগুলো স্বাভাবিক অস্বাভাবিক ও বেস্বাভাবিক কে কেন্দ্র করে । লেখাটি বর্তমান প্রজন্ম সমাজব্যাবস্থা ও সার্বিক আচরন কে কেন্দ্র করে কিছু অতি সত্য তিক্ত মিষ্টি ও বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে ।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক লেখকগন বাঙালীদের নিয়ে হাস্যরস করেছেন কেউ কেউ আফসোস করেছেন কেউ কেউ প্রশংসাও করেছেন । য়েমন কবিগুরু বলেছেন: ’সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’।তবে বাঙালী বা বর্তমান বাংলাদেশীদের কিছু অসাধারন গুনও কিন্তু রয়েছে যেমন অতিথি পরায়ন, সহজ সরল স্বাভাবিক (যদিও বর্তমানে ইহা কমে গেছে), জীবন যোদ্ধা,বন্ধুসুলভ, সংসারী, ধার্মিক ইত্যাদি ইত্যাদি ….. । হুমম এবার কিছু মজার বাঙালীত্ব চরিত্র সমন্ধে কয়েকটি কথা বলছি .(বি:দ্র: বাঙালী বলতে আমি বাংলাদেশীদেরকেই বুঝাচ্ছি পশ্চিম বাংলার বন্ধুরা কিছু মনে করবেননা )
সাধরনীকরন : বাঙালীদের শিক্ষিত হার বাড়ার সাথে সাথে সাধরনীকরনের হারও বেড়ে গেছে যেমন নোয়াখালীর মানুষ অমুক বরিশালের মানুষ তমুক মিডিয়ার লোক এমন রাজনীতি বিদরারা এমন ইত্যাদি । হা তবে কিছুটা হলেও সত্য হয়তো অনেকটাই মিধ্যা আপনার বা লোকজনের সাধারনীকরন । কিন্তু একটু ভেবে দেখুন কয়েকজন বা কিছু মানুষের জন্য তো আপনি একটি জেলা একটি পেশা বা একটি সমপ্রদায়কে দোষারোপ করতে পরেননা। সাধারনীকরন করার জন্য অনেক পড়াশোনা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের প্রয়োজন হয় । বড় মাপের নির্ভূল গবেষনা করে কিছুটা বলা যায় যদিও সামাজিক বিজ্ঞান কখনো নিদিষ্ট বা নিভূলও নয় । তাই এসবের জন্য কাউকে ভালোবাসা বা ঘৃনা করাটা কাম্য নয় । তবে সীমাহীন ভাবে সাধারনী করন টা বর্তমানে কেন যেন সংস্কৃতি হয়ে গেছে । আর এটি বাংলাদেশীদের মধ্যে এখন প্রবল দেখছি অনেক সময় অনেক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । এ কারনে তাই এ ব্যাপারটি তে আমাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়া দরকার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিরম্বনা : বর্তমার প্রজন্ম হচেছ ইন্টারনেট ফেসবুক প্রজন্ম । আমরা প্রতিনিয়তই চালাই ফেসবুক নিয়মিত অনিয়মিত পোস্ট লাইক কমেন্টস করে থাকি বেশ ভালো, তবে আপনি কারো নাম গোষ্ঠী ধর্ম নিয়ে কটুক্তি কোন পেশা আকৃতি সৌন্দর্য প্রভৃতি নিয়েও পোস্ট বিদ্রুপ কমেন্টস ইচ্ছা অনিচ্ছায় যখন করেন তখন অনেক র্দূবল মনের মানুষ কষ্ট পেতেও পারে । যদিও কষ্ট পাওয়য়াটাও বোকামী । এমনকি মাঝে মাঝে অনেক জনপ্রিয় পেইজের পোস্ট এমন থাকে যে একটা কুৎসিত মোটা একট ছবি দিয়ে বলা হয় মেনশন করুন এমন কালো খোড়া অন্ধ,বোবা কে যে দেখতে এমন বা ওর সাথে বিয়ে দিতে চান । আরেক ধরনের পোস্ট হচ্ছে আরো সেনসেটিভ যেমন ছাগল গরু জবাই করে রক্তাত্ত্ব ভিডিও পোস্ট যা অনেক শিশু ও দূর্ব ল মনে প্রভাব পড়তে পারে । আর পোলাপাইন এগুলো পেয়ে লাইক কমেন্টস শেয়ারের বন্যা বসায় । এরকম টাইপের পোস্ট করা বা লাইক কমেন্টস করা বাঙালীদের বোকা মস্তিস্কের উর্বর প্রতিফলনই মনে হচ্ছে । এমন হাজারো উদাহরন আছে দিলে একটা বই আকৃতির পোস্টই হয়ে যাবে । আসলে আমরা প্রযুক্তির ঠিক ভাবে ব্যাবহারই করছিনা বেশীর ভাগই অপব্যাবহার হচ্ছে তবে হয়তো একদিন শিখে যাবে সবাই তখন নতুন কিছুর আর্বিভাব হবে । আর আমরা বাঙালীরা আবার ….
ব্যাক্তিত্ববান ও ব্যাক্ত্বিহীন : অনেক মানুষ হয়তো ব্যাক্ত্বি নিয়ে মাথায় ঘামায়না অনেকে বুঝেওনা কিন্তু আমার কথা হচ্ছে যারা বুঝেন তাদের নিয়ে । যেমন একজন খুব মিশুক আরেকজন কম মিশুক । মাঝে মাঝে প্রায়ই দেখি কম কথাবলা লোকটা বেশী বলা লোকটাকে বাচাল বলে বেড়াচ্ছেন আর অনেক সময় বেশী বলা লোকটাও কম বলা লোকটাকে একা চোরা বলে বেড়াচ্ছেন সবার কাছে আর মজার ব্যাপার হচ্ছে দুজনই দুজনকে ব্যাক্তিগত ভাবে ব্যাক্তি ত্বহীন মনে করছেন । তবে দুজনেরেই একটা লিমিট থাকলে ভালো হতো না থাকলেও মন্দ হতোনা তবে যতক্ষন না কোন ব্যাবহার একজনের অসুবিধা বা ক্ষতির কারন না হয় ততক্ষন কোন মন্তব্য না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ । এখন আমার কথা হচ্ছে ব্যাক্তিত্বহীন কি আসলে? আদতে ব্যাক্ত্বিহীন বলতে কিছুই আমি অনুবিক্ষন যন্ত্রের সাহায্যে খুজে পাইনি । আসলে ব্যাক্তিত্বহীন বলতে কিছুই নেই । আমরা কিন্তু সবাই ব্যাক্তিত্ববান তবে একেক জনের ব্যাক্তিত্ব একেক রকম হতে পারে । আর আমাদের সমাজের ব্যাক্তিত্ববানদের এটা বুঝতে অনেক সময় সমস্যা হয় । আর এ বেশিষ্ট্য টা অনেক অর্ধশিক্ষিত এমনকি কিছু উচ্চ শিক্ষিত মানুষের মানুষের মধ্যে প্রবল আকার ধারন করেছেন ।তবে আমি দৃঢ় ব্যাক্ত্বি পছন্দ করি । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে দৃঢ় হতে চাই, হয়তো পারছিনা । আমাদের সকলেরই চলাফেরা আচার আচরনে ভুল ত্রুপটি থাকা স্বাভাবিক । তাহার জন্য কাউকে সরাসরি অপমান না করে বন্ধুসুলভ ভাবে বুঝিয়ে দেয়াটা উত্তম ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক । আসলে আমরা কেউই পারফেক্ট নই তাই অন্যের দোষ ধরার আগে নিজে কতটুকু পারফেক্ট তা নিজেকে জিজ্ঞাসা করে নিলেই হয় । আর নিজেকে নিয়ে ভাবুন অন্যকে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন না পারলে করার দরকার নাই ।মজার ব্যাপার হচ্ছে সব ধরনের ব্যাক্তিত্ব সবার পছন্দনীয় নয় এটাই স্বাভাবিক । তবে তার মানে ঘৃনা বা অপছন্দ করার কিছুনা ব্যাপারটা । যেমন কিছু মানুষের কাছ আমি গাধা (লেজ ছাড়া) কারো কাছে হয়তো গ্রেট । (তবে আমাকে কেউ ঘৃনা করবেননা প্লিজ সবাই ভালোবাসবেন ।) এত হাসারওকিছু হয়নি, ব্যাক্ত্বিত্ব নিয়ে সামনে কিছু বলব আজকে বেশী বলবনা তাহলে আমার ব্যাক্তিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে .।
শ্রদ্ধাবোধ :
আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে, বা পৃথিবীতে সকল মানুষের রুচি অভ্যাস র্ধম আদর্শ প্রভৃতি বিষয়ে অমিল থাকাটা স্বাভাবিক জিনিষ । তবে আমার আদর্শ আমার চিন্তা ভাবনা শ্রেষ্ঠ দাবীতে আমি আপনার আর্দশচিন্তা ভাবনাকে হেয় বা ছোট করে কথা বলতে পারিনা। আর ধর্ম নিয়ে অযথাকাউকে ছোট করে তর্ক করে হানা হানিও করতে পারিনা । সব মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি, হেদায়েতের দাওয়াত ভালোভাবে দিতে হয় অস্ত্র বা বোমার মাঝে নয় । আর অমুসলিমদের বলছি ইসলাম নিয়ে কিছু বলারে আগে ভালোভাবে জানুন আর কোন ধর্মকে অপমান করলে নিজের ধর্মের আচরনও প্রকাশ পায় ।আগ বাড়িয়ে কারো পয়ে পা দিয়ে ঝগড়া করলে তার ফল আপনাকেই বহন করতে হবে । হয়রত মুহাম্মদ সা: বিদায় হজ্জের ভাষনে বলেছেন ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেনা’ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এতে জোড় জবরদস্তি নেই । আজকাল শ্রদ্ধাবোধের বড় অভাব এমনকি সাধারন সেন্স এরও কোন সেলিব্রেটি কাকে বিয়ে করবেন কোথায় ঘুরতে যাবে কি ড্রেস পরবে কখন বাচ্চা নিবে তাতে আপনার কষ্ট পাওয়ার প্রয়োজন নেই কারন তারা কেউ আপনার নিজের পরিবারের সদস্য নয় (আজকাল পরিবারকেও বলা যায়না অনেক ক্ষেত্রে) ।তাসকিন আহমেদ কেমন মেয়ে বিয়ে করলো তাতে কয়েকজনের আফসোস দেখে মনে হচ্ছে ওদের সব শেষ হয়ে গেছে । সাকিব আল হাসান কোথায় গেল কি করল ওর বউ কি করল তাতে আপনাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই । তাহসান মিথিলাকে ডিভোর্স দিলে এতেও আপনার কান্না করার কিছু নেই আর এ নিয়ে মাতামাতিরও কিছু নেই । আমরা বাঙালীরা এ বিষয়ে খুবই র্দূবল নিজেকে শৃদ্ধা করুন আপনি অনেক বড় তবে কাউকে ছোট ভাববেন না তাহলে আপনি তার থেকেও ছোট হয়ে যেতে পারেন ।
শ্রেষ্ঠত্ব অশ্রেষ্ঠত্ব : আপনি ফর্সা তাই বলে কালো মানুষগুলো অসুন্দর একবারেই ভাববেন না । আপনি লম্বা খাটো মানুষ মানেই ছোট না । আপনি ধনী গরীব বলেই মর্যাদাহীন নয় । আপনি শিক্ষিত অশিক্ষিত মানেই অজ্ঞানী নয় । আপনি মুসলিম অমুসলিম মানেই অমানুষ নয়, আপনি অমুসলিম মুসলিম মানেই আপনার শত্রু নয় । আপনি তথাকথিত বংশের তাই বলে অন্য্য বংশের মানুষ অশ্রেষ্ঠ নয় । তাই মানুষ কে মানুষ হিসেবেই মর্যাদা দিন তার গায়ের রং ধর্ম বর্ন গোত্র আভিজাত্য প্রভৃতি দিয়ে নয় ।
লেখাটা এমনিতেই বড় হয়ে গেছে তাই আর বকবক করবনা ইতিমধ্যে যারা বিরক্ত হয়ে গেছেন তাদের জন্য একরাশ সমবেদনা । সবাই ভালো থাকুন । ভালোবাসুন ভালো রাখুন । আল্লাহ হাফেজ ।
আমার আর লেখা গল্প কবিতা নিয়মিত পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন বাঙালীর স্বয়ংক্রিয় আচরন নামা
ধন্যবাদ ।।