নাগরিক সভ্যতা আর জীবন জীবিকার টানাপোড়নে আমার সঙ্গে আমার মায়ের জাগতিক দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিঃমিঃ। তার ঘুম পাড়ানি গান,আদর,ভালোবাসা আর বকুনি গুলো এখন শুধু দেয়ালে টাঙানো সাদাকালো অতীত। তবুও আমার কাছে আমার মা কোন কোন সময় টলমল অশ্রু বিন্দু আবার কোন কোন সময় বনফুলের পাপড়ি। আমার মতো যারা মা থেকে অনেক দূরে অথবা মা হীন এই শহরে এক জীর্ণ ঘরে বসে মায়ের কথা ভাবছেন অথবা যাদের মা শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে তাদের দুঃখের অংশীদার হয়ে আর পৃথিবীর সমস্ত মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার এই লেখা……………
মা একটি শব্দ,একটি বীজ,একটি গাছ,একটি মন্ত্র, যে মন্ত্রে মুগ্ধ প্রতিটা সন্তান। ঠিক একই ভাবে মায়ের পৃথিবীর সুখ-দুঃখের নক্ষত্র গুলো আবর্তিত হয় তার প্রিয় সন্তান গুলোকে কেন্দ্র করে। মা এই মানুষটি, তীক্ষ্ণ বাজপাখিটির চোখ থেকে অসহায় মা পাখিটি যেমন তার বাচ্চাকে রক্ষা করে,ঠিক তেমনি মা তার সন্তানকে যেন যমদূতের হাত থেকেও আড়াল করতে চাই। রূপ যার জীবিকা বাঁচার তাগিতে রোজ যিনি হাত বদলান সস্তা নোটের মতো,সেই নারীও দিন শেষে একজন মা। তিনিও চান পৃথিবীর অন্য সমস্ত মায়েদের মতো নিজের সন্তানকে আগলে রাখতে। জীর্ণ জীবনকে আলিঙ্গন করে আলোহীন এই খাঁচায় বসবাস করা ঐ মা ও পৃথিবীর সব জাগায়াতে স্বার্থপর হলেও একটা জায়গাতে তারা পৃথিবীর অন্য দশটা সভ্য মায়েদের মতো, নিজে ধূলিমলিন হলেও তারাও চাই তার সন্তানকে চকচকে পয়সার মতো পরিষ্কার রাখতে।
ভোরের আলো ফুটছে তার লালচে আলো এসে লাগে শহরের এই কংক্রিটের দেয়ালে প্রথম ভালোবাসার স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গে প্রকৃতির। আর ঘুম ভাঙ্গে মৃতপ্রায় এই হৃদয়টার জীবিকার টানে হাঁটতে শুরু করে শহরের এই জনাকীর্ণ রাস্তায়। আর টেবিলের ফাঁকে পড়ে থাকে সাদাকালো ফ্রেমে বন্দী সেই মলিন মুখ খানি। দিনের পর দিন আর রাতের পর রাত এসে স্বামী-স্ত্রী আর অ্যালছেশিয়ানদের সংসারে মস্ত ফ্লাটে জায়গা হয় না ছবির মানুষটার। ছবিটাকে নিয়ে যায় শহরের কনো এক অজানা ডাস্টবিনে। কিন্তু ঐ ডাস্টবিন থেকে কনো এক প্রার্থনা এসে ভারী করে দেয় সমস্ত পৃথিবীর আকাশ বাতাসকে “ভালো থাকিস খোকা”
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১:০৮