এই লেখা যখন লিখতে শুরু করেছি তখনো রায় ঘোষিত হয়নি। রায় প্রসঙ্গেই কয়েকটি কথা বলতে চাই।
গত ৫ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত যা ছিল প্রত্যাশা, সেদিন থেকে তা পরিণত হয়েছে দাবিতে। কাদের মোল্লাকে উপলক্ষ করে সকল রাজাকারের ফাঁসি এখন জনতার দাবি। আজকের রায়ে হয়ত আগের রায়ের মত অনাকাঙ্ক্ষিত সাজার ঘোষণা না-ও থাকতে পারে। ফাঁসি ছাড়া অন্য শাস্তি দেয়ার 'ঝুঁকি' হয়ত 'কেউ' নিতে চাইবেন না। সেটাই ভাল। তবে আমার মনে হয় না ফাঁসির রায় হলে আমি জাস্ট খুশি ছাড়া উল্লসিত হতে পারব। কারণ এদেশে রায় ঘোষণা করার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রায় কার্যকর করা। সেটি যদি সময়মত না হয়, আদেশ ফাঁসির হলেও আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার মত কোন সুযোগ নেই। বরং অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাই এতে প্রলম্বিত হবে। সরকার যদি দেশের হক মেটানোর চাইতে নির্বাচন-ঘনিষ্ঠ সময়ে নিজেদের স্বার্থপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের দিকেই বেশি মনোযোগী হয়, দেশের ভাগ্যে কি আছে তা অনুমান করতে গণক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
একটা জিনিস দেখে আমি একটু অবাক হচ্ছি- শাহবাগ থেকে যে ঘোষণাই দেয়া হচ্ছে, সরকারের প্রতি যে দাবিই জানানো হচ্ছে, তার প্রায় সবই অবিশ্বাস্য দ্রুততায় কবুল করা হচ্ছে! অথচ এর আগে বিভিন্ন সময়ে বেসরকারী শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবির বিভিন্ন আন্দোলন থেকে যে সমস্ত যুক্তিসঙ্গত দাবিদাওয়া পেশ করা হয়েছে বা পেশ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তার কয়টির প্রতি সরকার আন্তরিকতা দেখিয়েছে?
তাহলে কি ধরে নেয়া যায় না যে প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের প্রতি সরকারের এত আগ্রহ, এত সমীহের পেছনে মূলতঃ ভোটীয় উদ্দেশ্যই বিদ্যমান? এই আন্দোলন যদি আরো ৩ বছর আগে হত, এতটা আদর-কদর কি পেতাম আমরা? এই 'রহস্যের' আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে?
যা-ই হোক, রায় যদি ফাঁসিই হয়, তার আশু কার্যকারিতা দেখতে চাই। এটি যেন কোন রাজনৈতিক দলের আগামী মেয়াদে ক্ষমতা পাওয়ার মুলা হিসেবে ঝুলিয়ে রাখা না হয়। আর যদি যাবজ্জীবন বা এই জাতীয় কিছু হয়, তাহলে তো কিছু বলার নেই। বড়জোর একটা দীর্ঘশ্বাসই ফেলতে পারি!