৭১ এর অনেক অনেক পরে আমার জন্ম। ছোটমামা, আম্মু, ছোটখালার মুখে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের বিভীষিকাময় দিনের গল্প শুনেছি। এই সেদিন, মোল্লার রায়ের দিন, ঘোষিত রায় শুনে ছোটখালা এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে তাঁকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। কথায় কথায় তিনি ফিরে গেলেন একাত্তরের দিনগুলোতে। আরো একবার আমার গা শিউরে উঠল তাঁর গল্প শুনে। কি সময়টাই না গেছে তাদের!!
আজ প্রজন্ম চত্বরে যারা সমবেত, তাদের মধ্যে আমার মত অনেকেই আছেন যারা বাবা, মা বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা অনুভব করতে শিখেছেন। এই অনুভূতি অর্জন করতে গিয়ে একই সময় তাদের মনে জন্ম নিয়েছে রাজাকারের প্রতি তীব্র ঘৃণা। আর এই ঘৃণার ফসল চার দিন ধরে দিন-রাত এক করে রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে প্রজন্ম চত্বর আঁকড়ে থাকা।
সাম্প্রতিক এবং বিগত সময়ে সরকারী ও বিরোধী দলের যে নোংরামো আমরা দেখেছি, যে আবর্জনার ভেতর দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত হেঁটেছি, তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে কিন্তু কখনোই আমরা দাঁড়াতে পারিনি। আমার খুব আফসোস হত যে '৫২, '৬৯, '৭১ এর মত একতা আর আমাদের মধ্যে নেই। যদি থাকত তাহলে হয়ত আরব বসন্তের অনেক আগেই বাংলাদেশ বসন্ত দেখত বিশ্ব। আজকের এই মহাসমাবেশ আমাকে আবারো আশাবাদী করেছে, বাঙ্গালী এখনো ভুলে যায়নি- একতাই বল।
এই ঐক্যের বন্ধন থেকে আমাদের আর বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না। সামনে হয়ত আরো কঠিন সময় আসবে। দেশ ও মানুষের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক অনেক কিছুই অনেকে করার চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। কাউকে ভোটও দেব না। এদের ক্ষমতায় যাওয়া আর বিরোধী দলে থাকার মধ্যে খুব বেশি তফাত নেই। দেশের নামে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের নিয়ত নিয়েই এদের সকাল হয়, রাত নামে। তাদের সবার জেনে নেয়ার সময় হয়েছে- মানুষ জাগছে! প্রজন্ম চত্বরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে প্রজন্ম। নতুন প্রজন্ম, যারা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
এই প্রজন্মকে আন্দোলন করার মত ইস্যু না দেয়াটাই তাদের জন্য মঙ্গল!