সিনিয়ারের চেম্বারে বসে ফাইল ঘাটছি । রেপিষ্টটার বায়োডাটা ও ঘটনার ফ্যাক্টগুলো পড়ছি । খুবই ইন্টারেষ্টিং । ভিক্টিমের বয়স মাত্র নয় !! স্যার রেপিষ্টটাকে যাবজ্জীবন খাটানোর প্রয়াসে একটি দুদার্ন্ত খসড়া করেছেন । ঠিকমত আদালতে সাবমিট করতে পারলেই কেল্লাফতে ।আমি সেটা ভালোভাবে পড়ছি । ঘন ঘন খুহ খুহ কাশির শব্দে মনোযোগের সুতা ছিড়ে গেলো । তাকালাম । চোখ আমার ছানাবড়া ! !
.
রেপিষ্টটা ঠিক আমার সামনেই ! ! স্যার বললেন - "এখানে কি করিস , হারামজাদা ?"
.
রেপিষ্টটার নাম "রকি" । সরাসরি কাজের কথায় চলে এলো । "স্যার ৫ লাখ পৌছে যাবে , হেরে যান" । স্যারের হাতে স্টাপলার ছিলো । ছুঁড়ে দিলেন । কিন্তু রকি বাঘের মত ক্ষিপ্ত । গায়ে লাগলো না । সরে গেলো । ছেলেটা ঠোঁট কামড়ে মিষ্টি করে হাসলো । বলল -"আমার টাকা আছে । আমারে কেউ কিছুই করতে পারবেন না। সব কিছু কিনে নেবো"
.
চলে গেলো । স্যার আবার কাজে গেলে গেলেন । এই ধরণের ঘটনা তার কাছে নতুন না তবে আমার জন্য ফাষ্ট টাইম । আমি বিমূঢ ভঙ্গিমায় কিছুক্ষণ বসে রইলাম । আমার সাথে স্যারের চোখাচোখি হলো । স্যার এতদিনে আমাকে ভালোভালোই চিনতে পেরেছে । জাষ্ট একটা কথা বললেন -"নো আনলফুল অ্যাক্ট"
.
.
রকি কোর্ট প্রাঙ্গণেই আছে । আমাকে দেখে হাসলো । জবাবেই আমিও হাসলাম । রতনে রতন চিনে শয়তানে শয়তান । রকির মত আমিও সোজা সুজি বলি -"২ লাখ দাও , ইনফরমেশন আজ বিকেলেই পৌছে যাবে" রকি ঘাড় নাড়ালো । অর্থ্যাৎ তথাস্তু । মানি ইজ এভরিং থিং । মানি ইজ গড ।
.
.
.
কর্ণফুলীর শাহ আমানত ব্রীজ । বাংলাদেশের একমাত্র অর্ধ ঝুলন্ত সেতু । এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে যেতে ব্রীজটি যেন ধনুকের মত বেঁকে গেছে । জায়গাটা আমাদের মিটিং জন্য ঠিক করেছি । তাছাড়া আরো নানান কারণে জায়গাটা আমার খুব পছন্দের । বিশেষ করে এই গরম পড়া বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই মুহুর্তগুলোতে । হু হু বাতাসে উত্তাপ ক্রমশ শীতল হতে শীতলতর হয়ে পড়ে । রকি কোথা থেকে যেন হুট করে উদয় হলো । সে হাসছে । হায়েনার মত নিষ্ঠুর সে হাসিখানি ।
.
- ভাই ইনফরমেশনের ফাইল কই ? মোবাইল দেখালাম । > "কোন দুনিয়াই আছো ! ইটস টু থাউজেন ফিফটিন ম্যান"
.
কাজের কথার আগে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা আমার স্বভাব । > "আচ্ছা রকি মেয়েটার সাথে এইটা করলে কেন ? বেশি মজা ছিল ?
আর এগুলো কখন থেকে শুরু করলে ?"
.
আধো আঁধারেই রকির দাঁত দেখা গেলো । টপিকটা তার মনমত । - "হা হা বহুত মাইয়া বড় ভাই , তবে সবার আগে আমার ঘরের বয়সী কাজের মাইয়া দিয়ে শুরু করি , জ্বালায় থাকতে না পাইরা একসময় মাইয়া পালাই গেলো কিন্তু নেশা তো রইয়া গেলো । এরপর টাকার বিনিময়ে শুরু করি , একসময় দেখি সব মালই একই , বাসি , মজা নাই আমরা দরকার টাটকা একদম ফ্রেশ । শুরু করি আনকমন টেষ্ট । ছোট ছোট কচি কচি মাইয়া । উফ কি যে টেষ্টি আপনারে বুঝান যাবে না । ধরলেই যেন গইল্লা যায় আর সেই কি চিল্লাচিল্লা । শরীরের ভিতরটা মোচড় মারি উঠে । চলেন ভাই একদিন আমরা দুজনে মিলে একটা রেপ করি । সমস্যা নেই সব রিস্ক আমার ।
.
মাথা চুলকিয়ে সহমত পোষণ করে বললাম - "চলেন , একদিন এক রাউন্ড হয়ে যাক । তার আগে আমার একটা রেপের গল্প বলি । শুনতে হবে কিন্তু "
.
- আপনিও রেপ করছেন নাকি ? আচ্ছা আচ্ছা বলেন । আগে আপনারটা শুনি
.
-"৫০৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান রাজা তরকুইনের ছেলের নাম ছিল সেক্সটাস । নামের মধ্যেই সেক্স ছিল বলেই বোধ হয় সেক্সটাস সেক্সে ভীষণ আসক্ত ছিল । একদিন সেক্সটাস ধর্ষণ করে এক নিরীহ অবলা সুন্দরী লুক্রেশিয়াকে। লুক্রেশিয়া এ আঘাত এই অপমান সহ্য করতে পারলো না । সে আত্মহত্যা করলো । সেক্সটাস ঘটনাটি চাপা দিতে পারেনি । সেক্সটাসই এক কাজিনের ব্রুটাসের বিবেকে বাধলো । কিন্তু রাজদরবারে বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে নিজের গলা কাটা । সে একটা জুয়া খেললো । জাতীয় প্যারেডের দিনে লুক্রেশিয়ার মৃতদেহ নিয়ে রাজদরবার সামনে প্যারেড করলো । মুহুর্তের মাঝে পুরো সেনাবাহিনী আর পুরো দেশ ঘটনাটি জেনে গেলো । আগুনের মত জ্বলে উঠলো পুরো রোম । রোমের সাধারণ মানুষ খেপে উঠল তারকুইনের ও সেক্সটাসের বিরুদ্ধে। তারকুইনকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় এবং পরে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাও করা হয়। রাজার সিংহাসন উল্টে গেল, প্রতিষ্ঠিত হলো রোমান প্রজাতন্ত্র। সেক্সটাস ধরা খেলো সেনাবাহিনীর হাতে । তবে ব্রুটাস সেক্সটাসকে হত্যা করতে দিলেন না , সে তাকে একটা লাইট হাউজের টপফ্লোরে নিয়ে গেলো । এই ঘটনা দীর্ঘদিন আমরা ভুলে গেলেও পরবর্তীতে উইলিয়াম শেক্সপিয়র এই সময়কে নিয়ে পরবর্তীতে লিখলেন একটি দীর্ঘ কবিতা । নাম - 'দ্য রেপ অফ লুক্রিস'।
.
রকি বোকা না হলে মাঝারি পরিমাণ মত বুদ্ধিমান । এতক্ষণে এ বুঝতে পারলো আমি আসলে তাকে নিয়ে খেলছিলাম ।
.
-"আমার থেকে কি চান ?" রকির গলার বিরক্তি ও অপ্রত্যাশিত আসন্ন বিপদের ছাপ ।
.
-তোমার ডানে দেখো বামে দেখো , এরা আমার গ্রুপের ম্যামবার । বহু বছর আগেই আমি একটা গ্রুপ বানিয়েছিলাম । নাম "খাসি করার গ্রুপ" । তোর মত জানোয়ারদের খাসি করাই আমাদের কাজ । তবে প্রমিস করছি তুই কষ্ট পাবি না । এই গ্রুপে এখন দুজন ডাক্তার আছে । তোকে অজ্ঞান করেই তোর মার্বেল দুটো নিয়ে ফেলবে । এরপর জারে ডুবিয়ে আবার তোকেই ফেরত দিবে । এরপর থেকে তুই দিন রাত কেবল মার্বেলই খেলবি।
.
আমার রহস্যময় হাসিতে রকি ভয় পেলো । আশে পাশে ভীত চোখে তাকালো । পুরো ব্রীজ সবাই যেন ওকে দেখছে । দুটো কারও দাড়িয়ে আছে তাকে তুলে নিবার জন্য । একজন তাকে দেখে মনে হয় হাত দেখালো । পুলিশের আশায় আসে পাশে তাকালো । ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম । বললাম - চিন্তা করিস আমাদের গ্রুপে ৩জন পুলিশও আছে । গ্রুপের অন্যরা যদি তোকে জবাই করতে চাইলে তারা বাধা দিবে । আফটার অল আমরা আইন হাতে তুলে নিবো না ।
.
রকি তার সকল আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ভেঙ্গে পড়লো । -ভাই আমাকে বাঁচান কত টাকা চান বলেন ? আমার সব টাকা দিয়ে দেবো । ওহ্ টাকার কথাতে আসল কথা মনে পড়লো । - তোর পকেটে আমার জন্য যে দু লাখ টাকা এনেছিলি সেটা দে ,তারপর অন্য কিছু ভাববো । রকির তখন মরণ দশা । সে এখন কোটি চাইলেও তাও দিবে ।
.
টাকাটা হাতে নিলাম । সেই গম্ভীর তবে তৃপ্তময় রহস্যের হাসি হাসলাম । - তোকে সেক্সটাসের গল্পটা বলা শেষ করিনি । সেক্সটাস যখন ধরা পড়ে ব্রুটাসের তখন তাকে এক বিশাল বড় বাতিঘরে নিয়ে আসে । সমুদ্র দেখিয়ে বলে যদি সেক্সটাস লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে বেঁচে যায় তাহলে ব্রুটাস তাকে মৃত ঘোষণা করে নতুন জীবন দিবে । আর যদি লাফ না দেয় তাহলে তাকে জনগণের হাতে তুলে দিবে । সেক্ষেত্রে তারা কি করবে সেটা কেবল তারই জানে । এই যুগে তো আর বাতিঘর নেই যে তোকে বাতিঘরে আনবো । তাই ব্রীজে এনেছি । চয়েজ ইজ ইউরস । হাতে কেবল ৩টে মিনিট । এরপরই তোকে খাসি বানানো প্রক্রিয়া শুরু হবে । নাউ ইন দিস মোমেন্ট মাই নেম ইজ ব্রুটাস এন্ড ইউ আর মাই সেক্সটাস
.
রকি কাঁদছে । তীক্ষদৃষ্টিতে দেখলাম , সেই কান্নার অশ্রুতে অনুতপ্ততা নেই । এখানে কেবল জীবন বাঁচানোর আকুল আকুতি ।
.
রকি কাঁপতে কাঁপতে রেলিং ধরে দাড়ালো । এরপর মুহুতের মধ্যেই যাযাবর পাখি ! ! মেবি ব্যালেন্স লসের কারণে হুট করে পড়ে গেলো । সে সেক্সটাসের মতই একই ভুল করেছে । পানিকে সে নরম তুলা ভেবেছে । ৩০-৪০ তলা সমান উচ্চতা থেকে যখন কেউ পানিতে স্বজোরে পড়ে তখন পানিও কংক্রিড হয়ে যায় । শরীর এই চাপ সইতে পারেনা বিধায় মুহর্তের মাঝে পুরো শরীর ফেটে রক্ত ছিটকে বেরিয়ে পড়ে । এই অবস্থায় ভিকটিম সচরাচর জ্ঞান হারায় । এবং আশে পাশে উদ্ধার করার কেউ না থাকলে সে ডুবে মারা যায় । জীবন তো আর সিনেমা নয় । তাছাড়া আশা করি স্রষ্টা এক রেপিষ্টের প্রতি সদয় হবেন না ।
.
ব্রীজটা এতটাই উঁচু যে , পানির সাথে সংর্ঘষের শব্দটা আসতে কিছুটা সময় নিলো । চারপাশ থেকে মানুষরা ছুটে এলো । সবাই জিজ্ঞাস করছে । কি হল কি হল ? চেহারায় বিস্মিত দৃষ্টি ফুটিয়ে বললাম
.
- জানি না , মানুষটা বোধ হয় পাগল হয়ে গেছে !!!
.
.
.
সমাপ্ত
.
বিঃদ্রঃ কিছু কাজ বাস্তবে করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না । সেগুলোকে এটলিষ্ট লিখাতে বাস্তব করে তোলার চেষ্টা করি । তৃপ্তিটা যৎসামান্য ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১