somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: মাই নেম ইজ ব্রুটাস এন্ড ইউ আর মাই সেক্সটাস

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিনিয়ারের চেম্বারে বসে ফাইল ঘাটছি । রেপিষ্টটার বায়োডাটা ও ঘটনার ফ্যাক্টগুলো পড়ছি । খুবই ইন্টারেষ্টিং । ভিক্টিমের বয়স মাত্র নয় !! স্যার রেপিষ্টটাকে যাবজ্জীবন খাটানোর প্রয়াসে একটি দুদার্ন্ত খসড়া করেছেন । ঠিকমত আদালতে সাবমিট করতে পারলেই কেল্লাফতে ।আমি সেটা ভালোভাবে পড়ছি । ঘন ঘন খুহ খুহ কাশির শব্দে মনোযোগের সুতা ছিড়ে গেলো । তাকালাম । চোখ আমার ছানাবড়া ! !
.
রেপিষ্টটা ঠিক আমার সামনেই ! ! স্যার বললেন - "এখানে কি করিস , হারামজাদা ?"
.
রেপিষ্টটার নাম "রকি" । সরাসরি কাজের কথায় চলে এলো । "স্যার ৫ লাখ পৌছে যাবে , হেরে যান" । স্যারের হাতে স্টাপলার ছিলো । ছুঁড়ে দিলেন । কিন্তু রকি বাঘের মত ক্ষিপ্ত । গায়ে লাগলো না । সরে গেলো । ছেলেটা ঠোঁট কামড়ে মিষ্টি করে হাসলো । বলল -"আমার টাকা আছে । আমারে কেউ কিছুই করতে পারবেন না। সব কিছু কিনে নেবো"
.
চলে গেলো । স্যার আবার কাজে গেলে গেলেন । এই ধরণের ঘটনা তার কাছে নতুন না তবে আমার জন্য ফাষ্ট টাইম । আমি বিমূঢ ভঙ্গিমায় কিছুক্ষণ বসে রইলাম । আমার সাথে স্যারের চোখাচোখি হলো । স্যার এতদিনে আমাকে ভালোভালোই চিনতে পেরেছে । জাষ্ট একটা কথা বললেন -"নো আনলফুল অ্যাক্ট"
.
.
রকি কোর্ট প্রাঙ্গণেই আছে । আমাকে দেখে হাসলো । জবাবেই আমিও হাসলাম । রতনে রতন চিনে শয়তানে শয়তান । রকির মত আমিও সোজা সুজি বলি -"২ লাখ দাও , ইনফরমেশন আজ বিকেলেই পৌছে যাবে" রকি ঘাড় নাড়ালো । অর্থ্যাৎ তথাস্তু । মানি ইজ এভরিং থিং । মানি ইজ গড ।
.
.
.
কর্ণফুলীর শাহ আমানত ব্রীজ । বাংলাদেশের একমাত্র অর্ধ ঝুলন্ত সেতু । এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে যেতে ব্রীজটি যেন ধনুকের মত বেঁকে গেছে । জায়গাটা আমাদের মিটিং জন্য ঠিক করেছি । তাছাড়া আরো নানান কারণে জায়গাটা আমার খুব পছন্দের । বিশেষ করে এই গরম পড়া বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই মুহুর্তগুলোতে । হু হু বাতাসে উত্তাপ ক্রমশ শীতল হতে শীতলতর হয়ে পড়ে । রকি কোথা থেকে যেন হুট করে উদয় হলো । সে হাসছে । হায়েনার মত নিষ্ঠুর সে হাসিখানি ।
.
- ভাই ইনফরমেশনের ফাইল কই ? মোবাইল দেখালাম । > "কোন দুনিয়াই আছো ! ইটস টু থাউজেন ফিফটিন ম্যান"
.
কাজের কথার আগে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা আমার স্বভাব । > "আচ্ছা রকি মেয়েটার সাথে এইটা করলে কেন ? বেশি মজা ছিল ?
আর এগুলো কখন থেকে শুরু করলে ?"
.
আধো আঁধারেই রকির দাঁত দেখা গেলো । টপিকটা তার মনমত । - "হা হা বহুত মাইয়া বড় ভাই , তবে সবার আগে আমার ঘরের বয়সী কাজের মাইয়া দিয়ে শুরু করি , জ্বালায় থাকতে না পাইরা একসময় মাইয়া পালাই গেলো কিন্তু নেশা তো রইয়া গেলো । এরপর টাকার বিনিময়ে শুরু করি , একসময় দেখি সব মালই একই , বাসি , মজা নাই আমরা দরকার টাটকা একদম ফ্রেশ । শুরু করি আনকমন টেষ্ট । ছোট ছোট কচি কচি মাইয়া । উফ কি যে টেষ্টি আপনারে বুঝান যাবে না । ধরলেই যেন গইল্লা যায় আর সেই কি চিল্লাচিল্লা । শরীরের ভিতরটা মোচড় মারি উঠে । চলেন ভাই একদিন আমরা দুজনে মিলে একটা রেপ করি । সমস্যা নেই সব রিস্ক আমার ।
.
মাথা চুলকিয়ে সহমত পোষণ করে বললাম - "চলেন , একদিন এক রাউন্ড হয়ে যাক । তার আগে আমার একটা রেপের গল্প বলি । শুনতে হবে কিন্তু "
.
- আপনিও রেপ করছেন নাকি ? আচ্ছা আচ্ছা বলেন । আগে আপনারটা শুনি
.
-"৫০৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান রাজা তরকুইনের ছেলের নাম ছিল সেক্সটাস । নামের মধ্যেই সেক্স ছিল বলেই বোধ হয় সেক্সটাস সেক্সে ভীষণ আসক্ত ছিল । একদিন সেক্সটাস ধর্ষণ করে এক নিরীহ অবলা সুন্দরী লুক্রেশিয়াকে। লুক্রেশিয়া এ আঘাত এই অপমান সহ্য করতে পারলো না । সে আত্মহত্যা করলো । সেক্সটাস ঘটনাটি চাপা দিতে পারেনি । সেক্সটাসই এক কাজিনের ব্রুটাসের বিবেকে বাধলো । কিন্তু রাজদরবারে বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে নিজের গলা কাটা । সে একটা জুয়া খেললো । জাতীয় প্যারেডের দিনে লুক্রেশিয়ার মৃতদেহ নিয়ে রাজদরবার সামনে প্যারেড করলো । মুহুর্তের মাঝে পুরো সেনাবাহিনী আর পুরো দেশ ঘটনাটি জেনে গেলো । আগুনের মত জ্বলে উঠলো পুরো রোম । রোমের সাধারণ মানুষ খেপে উঠল তারকুইনের ও সেক্সটাসের বিরুদ্ধে। তারকুইনকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় এবং পরে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাও করা হয়। রাজার সিংহাসন উল্টে গেল, প্রতিষ্ঠিত হলো রোমান প্রজাতন্ত্র। সেক্সটাস ধরা খেলো সেনাবাহিনীর হাতে । তবে ব্রুটাস সেক্সটাসকে হত্যা করতে দিলেন না , সে তাকে একটা লাইট হাউজের টপফ্লোরে নিয়ে গেলো । এই ঘটনা দীর্ঘদিন আমরা ভুলে গেলেও পরবর্তীতে উইলিয়াম শেক্সপিয়র এই সময়কে নিয়ে পরবর্তীতে লিখলেন একটি দীর্ঘ কবিতা । নাম - 'দ্য রেপ অফ লুক্রিস'।
.


রকি বোকা না হলে মাঝারি পরিমাণ মত বুদ্ধিমান । এতক্ষণে এ বুঝতে পারলো আমি আসলে তাকে নিয়ে খেলছিলাম ।
.
-"আমার থেকে কি চান ?" রকির গলার বিরক্তি ও অপ্রত্যাশিত আসন্ন বিপদের ছাপ ।
.
-তোমার ডানে দেখো বামে দেখো , এরা আমার গ্রুপের ম্যামবার । বহু বছর আগেই আমি একটা গ্রুপ বানিয়েছিলাম । নাম "খাসি করার গ্রুপ" । তোর মত জানোয়ারদের খাসি করাই আমাদের কাজ । তবে প্রমিস করছি তুই কষ্ট পাবি না । এই গ্রুপে এখন দুজন ডাক্তার আছে । তোকে অজ্ঞান করেই তোর মার্বেল দুটো নিয়ে ফেলবে । এরপর জারে ডুবিয়ে আবার তোকেই ফেরত দিবে । এরপর থেকে তুই দিন রাত কেবল মার্বেলই খেলবি।
.
আমার রহস্যময় হাসিতে রকি ভয় পেলো । আশে পাশে ভীত চোখে তাকালো । পুরো ব্রীজ সবাই যেন ওকে দেখছে । দুটো কারও দাড়িয়ে আছে তাকে তুলে নিবার জন্য । একজন তাকে দেখে মনে হয় হাত দেখালো । পুলিশের আশায় আসে পাশে তাকালো । ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম । বললাম - চিন্তা করিস আমাদের গ্রুপে ৩জন পুলিশও আছে । গ্রুপের অন্যরা যদি তোকে জবাই করতে চাইলে তারা বাধা দিবে । আফটার অল আমরা আইন হাতে তুলে নিবো না ।
.
রকি তার সকল আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ভেঙ্গে পড়লো । -ভাই আমাকে বাঁচান কত টাকা চান বলেন ? আমার সব টাকা দিয়ে দেবো । ওহ্ টাকার কথাতে আসল কথা মনে পড়লো । - তোর পকেটে আমার জন্য যে দু লাখ টাকা এনেছিলি সেটা দে ,তারপর অন্য কিছু ভাববো । রকির তখন মরণ দশা । সে এখন কোটি চাইলেও তাও দিবে ।
.

টাকাটা হাতে নিলাম । সেই গম্ভীর তবে তৃপ্তময় রহস্যের হাসি হাসলাম । - তোকে সেক্সটাসের গল্পটা বলা শেষ করিনি । সেক্সটাস যখন ধরা পড়ে ব্রুটাসের তখন তাকে এক বিশাল বড় বাতিঘরে নিয়ে আসে । সমুদ্র দেখিয়ে বলে যদি সেক্সটাস লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে বেঁচে যায় তাহলে ব্রুটাস তাকে মৃত ঘোষণা করে নতুন জীবন দিবে । আর যদি লাফ না দেয় তাহলে তাকে জনগণের হাতে তুলে দিবে । সেক্ষেত্রে তারা কি করবে সেটা কেবল তারই জানে । এই যুগে তো আর বাতিঘর নেই যে তোকে বাতিঘরে আনবো । তাই ব্রীজে এনেছি । চয়েজ ইজ ইউরস । হাতে কেবল ৩টে মিনিট । এরপরই তোকে খাসি বানানো প্রক্রিয়া শুরু হবে । নাউ ইন দিস মোমেন্ট মাই নেম ইজ ব্রুটাস এন্ড ইউ আর মাই সেক্সটাস
.
রকি কাঁদছে । তীক্ষদৃষ্টিতে দেখলাম , সেই কান্নার অশ্রুতে অনুতপ্ততা নেই । এখানে কেবল জীবন বাঁচানোর আকুল আকুতি ।
.
রকি কাঁপতে কাঁপতে রেলিং ধরে দাড়ালো । এরপর মুহুতের মধ্যেই যাযাবর পাখি ! ! মেবি ব্যালেন্স লসের কারণে হুট করে পড়ে গেলো । সে সেক্সটাসের মতই একই ভুল করেছে । পানিকে সে নরম তুলা ভেবেছে । ৩০-৪০ তলা সমান উচ্চতা থেকে যখন কেউ পানিতে স্বজোরে পড়ে তখন পানিও কংক্রিড হয়ে যায় । শরীর এই চাপ সইতে পারেনা বিধায় মুহর্তের মাঝে পুরো শরীর ফেটে রক্ত ছিটকে বেরিয়ে পড়ে । এই অবস্থায় ভিকটিম সচরাচর জ্ঞান হারায় । এবং আশে পাশে উদ্ধার করার কেউ না থাকলে সে ডুবে মারা যায় । জীবন তো আর সিনেমা নয় । তাছাড়া আশা করি স্রষ্টা এক রেপিষ্টের প্রতি সদয় হবেন না ।
.
ব্রীজটা এতটাই উঁচু যে , পানির সাথে সংর্ঘষের শব্দটা আসতে কিছুটা সময় নিলো । চারপাশ থেকে মানুষরা ছুটে এলো । সবাই জিজ্ঞাস করছে । কি হল কি হল ? চেহারায় বিস্মিত দৃষ্টি ফুটিয়ে বললাম
.
- জানি না , মানুষটা বোধ হয় পাগল হয়ে গেছে !!!
.
.
.
সমাপ্ত
.
বিঃদ্রঃ কিছু কাজ বাস্তবে করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না । সেগুলোকে এটলিষ্ট লিখাতে বাস্তব করে তোলার চেষ্টা করি । তৃপ্তিটা যৎসামান্য ।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×