আমাদের সবারই একটা বাড়ী আছে। সেই বাড়ীটা জন্মানোর সাথে সাথেই আমাদের কাছে পরিচিত হতে শুরু করে এবং অবশ্যই এরও পূর্বে। আমরা মায়ের গর্ভে যখন থাকি তখনও একটা বাড়ীতেই তো থাকি। সেই বাড়ী থেকে বেরিয়ে আমরা আর একটা বাড়ী পাই। সেই বাড়ীটার নাম হয় পরিবার, পাড়া, দেশ, পৃথিবী। আবার কারো সেরকম পরিচিত বাড়ী থাকেনা কিন্তু তার মত করে একটা বাড়ী সে খুঁজতে থাকে। কখনো মানুষ, কখনো ভাষা, কখনো বিশ্বাস, কখনো বস্তু, কখনো চিন্তা, কখনো অবিশ্বাস, কখনো অনুভূতি আমাদের এক একটা বাড়ী হয়ে ওঠে।
এই যে ঈদে, পূঁজোয়, উৎসবে আমরা বাড়ী যাই সেই বাড়ীর শেকড় খুব গভীরে। এই যে অন্য দেশে হাঁটতে হাঁটতে আমরা ডুকরে উঠি সেটাও বাড়ীর টানে। যে বা যা বাড়ীটাকে ধারণ করে তারা হারিয়ে গেলে মুষড়ে পড়ি। বাড়ীর জন্য মানুষ করতে পারেনা এমন কিছু নেই। দুজন মানুষের ছবি চোখে ভাসছে; একজনকে হাত পা বেঁধে স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে, আবৃত এবং রক্তাক্ত। আরেকজন বিষন্ন এবং আনন্দিত মুখে তার সন্তানের পাশে শুয়ে আছেন। দু জনাই এই পৃথিবীতে বাড়ীর খোঁজ পাননি। কাছাকাছি আরেকটা ছবিতে দাউদাউ আগুনে জ্বলছে একটা কারখানা আর তার ভেতরে জীবন্ত অঙ্গার হয়েছেন বাড়ী ফিরতে না আস্ত মানুষ।
মানুষের মূলত দুটো বাড়ী, একটি ভেতরের আরেকটি তার বাইরের। এরমধ্যে মূল বাড়ীটার কোনটাই তার নিজের তৈরি করা নয়, এই মহাবিশ্ব আর তার অন্তঃস্থ জগত। আর বাইরেরটি নিজের ও অন্য মানুষের তৈরি। তবে এই দুটো বাড়ী দখল করা নিয়েই অন্য সব বাড়ীওলার কিংবা বাড়ী বিতারিত-র মারামারি। তারা বন, শরীর, রাষ্ট্র, মন, নতুন গ্রহ সব সব দখল করতে চায়। এরা মনে করে সব বাড়ী হবে তাদের মতই তাদের অধিনস্ত। কিন্তু এইগুলোতো নাম, শ্রেফ নাম আর অক্ষর। কয়েকশ বছরে আগেই ছিলনা। হাস্যকর। দখলের শেষ হতে পারে কিন্তু দখলের ক্ষুধার তো শেষ নেই।
কেউ আবার মনে করেন তিনি বড় বাড়ীটাকেই নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, একদম পুরোটা। নিয়ন্ত্রণের হয়ত শেষ আছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণের ক্ষুধার তো শেষ নেই। তিনি ভুলেও যান এই বাড়ীটা কেবল তার একার নয় আর তিনি কখনোই সেটার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবেন না। কেউই পায়নি, মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণ কেউ পায়? সম্ভবত এই গোত্রেরও নিজের বাড়ী নেই। অথবা অন্য বাড়ীদের ধমক দিলেই নিজের বাড়ী রক্ষা হয় এটাই মনে করেন। বাড়ীর জন্য মানুষ করতে পারেনা এমন কিছু নেই। জগতের সকল মহত্ত্বম কাজ এবং হীনতম কাজও সে অবলিলায় করতে পারে। আর অবিরাম সেটাই করে যাচ্ছে।
মানুষ বাড়ীর খোঁজ করবেই এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য হল নিজের বাড়ীর জন্য সে তার সর্বোচ্চটা দেবে, জানবাজি করবে। আর যদি সবাইকে প্রশ্ন করেন, দেখবেন তারা সবাই মূলত তার বাড়ীটাতে আরামে আনন্দে থাকতে চায়। তাহলে এত হানাহানি, মিথ্যা, প্রতারণা, বিভ্রান্তি আর যুদ্ধ কেন? সম্ভবত আমাদের মূল বাড়ীটি ভুলভাবে চলছে এবং সম্ভবত মূল বাড়ীটিতে নিজের বাড়ী খুঁজে নেয়া আমরা শিখিনি। যুদ্ধ কিংবা উৎসব পরিস্থিত যাই হোক বাড়ী তাহলে কেউই ফিরতে পারছে না। আফসোস।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮