ঐ যে, কি যেন ছিল দিনটা
ঘুম থেকে উঠে
শুনতে পাওয়া দূরে মানুষের হইচই
শহরের কেন্দ্রে, কিসের যেন উৎসব কেঁপে ওঠে বুকটা
বাহাদুর বাজারে রিকশা আর মানুষের মিছিল
বাঁধানো একটা ছবি, গলায় জুতার মালা
গগন বিদারী চিৎকার, আকাশে ছোঁড়া ঢিল
আরো দূর, দূর এক রাজধানীতে পতন হয়েছে এক রাজার
সে এক ভীষণ স্বৈরাচার
গুলি করেছিল এক খোলা পিঠের কালো মানুষ
নূর হোসেন, কি ছিল দরকার
বিজয়ের পর সাদা সাদা শাড়ী-পাঞ্জাবীতে কোলাকুলি
তারা মিষ্টি মিষ্টি হাসেন
টেলিভিশন, বিটিভি
পত্রিকায় রক্তাক্ত জ্বলজ্বল
আরো এক শহীদ ডাক্তার মিলন
তখনো জিলা স্কুল অনেক দূরে
সকালের কাগজ বারোটায় ঢোকে শহরে
আট আনায় চা আর বেয়াল্লিশ টাকা কেজি গুরুর মাংস
বড়দের আহ্লাদে জীবনের অর্ধেক ধংস
তখন জাহানার ইমাম দূরে, স্মৃতি বইয়ের লেখিকা
কেমন একটা কাঁদো কাঁদো মা মা
থমকে যাওয়া খানিকটা
স্যাটেলাইট, নতুন চ্যানেল
শহরের চোলাচালানকারীর ছাদেই প্রথমবার
কালো তারের সে এক বিরাট কারবার
ডিডি ওয়ান, মেট্রোর পরে আরো চ্যানেল ছয়টা
ছাদে ছাদে জমা হল ওল্টানো কালো ডিশ
গুনে শেষ করা যায় না কয়টা
ভিডিও দোকানে দশ টাকায় ভাড়া পাওয়া
চোলি কা পিছে ক্যায়া হ্যায়
ফুনাই ভিসিপি, সনি ভিসিআর
আর যারা রিকশাওয়ালার কালো পিঠ দেখতে দেখতে
লোকসভায় যায়, মঞ্চটঞ্চ, আবৃত্তি টাবৃত্তি করে
তাদের কারো কারো কাছে ওয়াকম্যান
ম্যাডোনা, মাইকেল জ্যাকসন, জেমস, এলআরবি ঘুরে
তারা আবার একশত চল্লিশ টাকায় মুক্তির গানের ফ্যান
ঐখানে তারা আরো শিল্পীদের উত্তেজনা কষ্ট জানে
খুব কষ্টের সেই স্মৃতি খুব করে তাদের টানে
চোখ বুজলেই চারুকলায়, নাট্যকলায় ভর্তির স্বপ্ন
আজিজ মার্কেট, লিটল ম্যাগ
কবিতা লেখার যত্ন
নিয়ম করে শহীদ মিনারে দেয়া ফুল
আর তিনটাকার ঝালমুড়িতে
পাঁচ টাকার পিঁয়াজ মরিচ দাবী করে হুলুস্থুল
টিডিকে ক্যাসেটে বারোটা বাছাই করা গান
প্রেম নিবেদন করে
একটা চুমুর জন্য দুইমাস অপেক্ষা
তুত বাগানে স্বপ্নের খানখান
চটি পড়ে, বিডিআর এ সিনেমা দেখতে যাওয়া
কাজের মেয়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দেয়া
সেইসব কাজের মেয়ে, কোন এক মাঝি আর কষ্টের গল্প
তারা সিরিয়াস সাহিত্যে পড়ে
উত্তেজিত হয় অনেক, নিবেদিত হয় অল্প
সেই বিনীত কাজের মেয়েরা
তাদের ভেজাস্বপ্নে আসে
বুকে নিয়ে সমাজ বদল
ইলিয়াস আর মানিক ভাসে
উফ! বই বই সংস্কৃতি সংস্কৃতি
হুমায়ুন আর ইকবাল, মিলন আর গুণ
খেলারাম খেলে যা, বেড়ে ওঠার ঘূণ
সে এক সাংস্কৃতিক, বিরাট হইচই
চায়ের কাপে ধর্ম বিজ্ঞানের খই
সনি পেরিয়ে আরো এক সংস্কৃতির শুরু
সাতানব্বই
ক্রিকেটে খোঁজা হিরু
তারপর সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে
অনাধুনিক ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল
অনাধুনিক মানুষের দল পালে পাল
অনাধুনিক কবিদের দলে ভরে যাওয়া রাঢ়িখাল
রহমান আর ছফা সব দফারফা
আল মাহমুদ
উফ বিরাট অ-সাংস্কৃতিক
আর রবীন্দ্রনাথ
বিরাটতম
বিরাটের সাথে বিরাটের মারামারি
ইন্ডাস্ট্রীতে কম্পিটিশন
রাজাকারের গাড়ীতে দেশের পতাকা
রক্ত জমেছে সংস্কৃতিতে
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে
কিছু একটা করতে হবে
করতে হবে তাড়াতাড়ি
স্মৃতিবাজদের ঘুম নেই
দেশ জুড়ে অপ-সংস্কৃতি মাতম
আর তখনি আলোর উদয়
আর আসে আই
কেটে যায় অন্ধকার
আলোর কাটতি বাড়ে
সংস্কৃতি কোথা পাই
আর এনজিও হাসে, ইন্ডাস্ট্রী হাসে
নোবেল প্রাইজ হাসে
ম্যাগসেসেও হাসে
পাবলিক হাসে
প্রাইভেটও হাসে
জলপাইও হাসে
এরশাদও হাসে
ব্লগও হাসে
ফেইসবুকও হাসে
অনেক লড়াইয়ের পর সংস্কৃতি এল ফিরে
স্মৃতিতে অম্লান সবার ঘরে ঘরে
ঐ যে ঐ দিনটা
যে দিনটা ভুলায়া দিসিলো যে হাওয়া
ঐ যে ঐ রাতটা যে রাতটা ভুলায়া দিসিলো
ভবন
জগতের বোঝাপড়া মগবাজারে হোত যখন
স্মৃতিবাজরা নিয়া আসে ঐ দিন
স্মৃতিবাজরা নিয়া আসে তখন
আর পাবলিক হাসে
আর প্রাইভেট হাসে
আর স্মৃতিবাজরা আসে
আর স্মৃতি ইন্ডাস্ট্রী হাসে
ঐ যে, কি যেন ছিল দিনটা
বিকালে সবাই হুটহাট
বিরাট প্রতিবাদ
স্মৃতি ফাঁকি দিয়া নিরন্তর বোঝাপড়া
সেইদিন, সেইদিন সবার স্মৃতি ছিল খাড়া
সেইদিন সবাই কাজটাজ বাদ দিয়া
জমায়েতে দাড়ানো কষ্টের স্মৃতি নিয়া
সেইসব দিনে কেউ গিয়েছিল চাঁদে
তেতুলের আঠা ধরা পড়েছিল
বই পোড়ানোর ফাঁদে
সেইসবতো স্মৃতি এখন
সেইসব উঁকি মেরে দেখা ক্লিপ
জ্বী-বাংলা চেইঞ্জ করতে যেয়ে
নিউজ স্ক্রলের ফ্লিপ
এখন সুদিন, সুখেরও সময়
বিদেশের নানান স্মৃতি পুরষ্কার ঘরে আসে
স্মৃতিবাজদের অনেক কষ্টের পর
সংস্কৃতি খুশি খুশি মনে হাসে
এখন সুদিন, সুখেরও সময়
বিত্তে-শ্রেণীতে-লিঙ্গে-ধর্মে আর নেই কোন ভেদাভেদ
সেই এরশাদ, সেই ক্রিকেটে সবাই মেটায় খেদ
এখন সুদিন, সুখেরও সময়
স্মৃতি ইন্ডাস্ট্রীতে সবাই স্মৃতি শ্রমিক
ইন্ডাস্ট্রী ঠিক করে নতুন স্মৃতির দিক
এখন সুদিন, সুখেরও সময়
আমরা প্রতিদিন বিস্মৃতি খাই
দায়িত্ব দিয়েছি ইন্ডাস্ট্রীকে
শুধু ভেজাস্বপ্নটা চাই।
শরৎ চৌধুরী, হিগাশি হিরোশিমা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৬