প্রতিদিনই এরকম শীত হয় না
দরজা খুললেই মনে হয় না এক পশলা মৃত বাতাস
ক্রুদ্ধ অপেক্ষার পর অস্থির দাঁড়িয়ে আছে
ছোট্ট একটা ঘরে কোথাও যে লুকোবো
সে উপায় নেই
তার সমস্ত আক্রোশ
কানের লতির পাশে অবিরাম আসা যাওয়া করে
ফিরতে কেন দেরী হল, কে কে ছিল গাড়ীতে
কেন, কি, কেন এটা, কে কি হল, কে সেটা, কী কী কীই?
জানালা দরজা খুলে দিলে তিনি যে সসম্মানে বেরিয়ে যাবেন তাও হয় না
তিনি বোঝেন না
তাকে বেরিয়ে যেতে বলা যায় না
তিনি যান না
এই যেমন বোতামের একটা ছোট্ট চাপেই অনুগত মরুভুমির মত
দাইকিন মুখ হা করে প্রবাহ শুরু করল
কিন্তু উষ্ণ হতে সেও অনন্তকাল দেরী
তাড়াহুড়ো করে ইলেকট্রিক কম্বলটা চালু করলাম
সেও ৫০০ পাতার উপন্যাসের মত
ক্লাইমেক্স আসতে আসতে তিনটি পুরুষজনম
এদিকে কবরের মত কালো বাতাসটা
সিংক থেকে খাটের কোণা অবধি,
অবাধে প্রবাহমান
বিরক্তি লুকিয়ে হাসিমুখে বসে থাকতে হয়
তিনি আসা যাওয়া করেন
এই ছোট্ট ঘরের প্রতিটি কোণায় তার নৃশংস আধিপত্য
তিনি সরু চোখে তাকিয়ে থাকেন
শার্টের কলারে ঘনিষ্ঠ ঘ্রাণ খোঁজেন
তার পরিবারের কথা জানতে চাইতে হয়
এমনকি তার সহমৃতদের কথাও জানতে চাইতে হয়
কার্টেসি
যদিও আমি যে এই আকালের দিনেও
কেন প্রায় হাঁটু পর্যন্ত একজোড়া টিম্বারল্যান্ড কিনি
বন্ধুরা বোঝেনা
আমার পা থেকে খুশকি অবধি যে প্রবল শীত
মেরুরজ্জুর কোণায় কোণায়
বন্ধুরা বোঝেনা।
তারা মশকরা করে
তারা মৃত বাতাসের মত মশকরা করে
সেই মশকরা আরো শীতল
মালবেরর নীভু নীভু আগুনে
আমার দৈনন্দিন প্রতিরোধ
এই যেমন একটা স্পর্শহীন দুনিয়ায়
স্নায়ুইন্দ্রিয় গুঁজে তর্ক তর্ক ব্যাখ্যা ব্যাখ্যা খেলি
সেও মৃত বাতাসের সহ্য হয় না
তিনি ডাকাতের মত ওঁত পেতে থাকেন
আর সুযোগ পেলেই ছুড়ে দেন
এক বোতল এসিড শীত
ঠান্ডায় আমার সর্বাঙ্গ পুড়ে যায়
মজ্জা জমে যায়
কান খুলে আসে, ঠোঁট ভেঙ্গে যায়, পাঁপড়ি জমে যায়
কিছু বলতে পারি না
এই যে এখন যেমন, আমার শ্রদ্ধেয় বস্তুগুলোকে জড়ো করে
বিছানাতে নির্মাণ করছি একটি গুহা
ধার করা কম্বল, কেনা লেপ, এডিডাসের কালো জ্যাকেটটা
ইউনিক্লর হিটটেক, যেব্রার ফ্লাস্ক, ন্যাশনালের রুম-হিটার
এগুলো প্রতিরোধ দেয়, আড়াল দেয়
এই যেমন কয়েকটা পেপারব্যাক, তিন বোতল ভোদকা
ধোঁয়া ওঠা রামেন, গরম গরম কারাগে
আর ল্যাপটপ!
আহ! ল্যাপটপের উষ্ণ বাতাস, তার কিবোর্ডের আলো নিয়ে
এই যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছি
তাও বন্ধুরা বোঝেনা
তারা তর্ক করে, তারা ব্যাখ্যা করে
সেই পশলা মৃত বাতাস আমার চারপাশে
নেকড়ের মত পায়চারি করে
চোখেচোখে রাখে, কিছু বলতে পারি না
বলতে গেলেই তিনি আবারো ছুঁড়ে দেবেন
এক বোতল এসিড শীত
মানুষ থাকে না
বস্তুরা থাকে
উষ্ণতা থাকে না
থাকে তাদের শীতল বংশধর
আর থাকে এক পশলা মৃত বাতাস।
শরৎ চৌধুরী
হিগাশি হিরোশিমা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪০