পূর্বের পর্বগুলো
বার্লিনের ডায়েরি ১, ১৭ ঘন্টা ফ্লাইট, প্রথম ডিনার, বুন্ডেসটাগ
বার্লিনের ডায়েরি ২, বিদেশে বাংলাদেশ এবং মিটিং মিনিটস (ছবি কম কথা বেশি)
বার্লিনের ডায়েরি ৩, স্পৃ তে রিভার ক্রুজ, দুটো চমৎকার রেঁস্তোরা এবং প্রায় ঝিমানো মনোলগ
প্রথম বিদ্রোহ
“জগতের সকল নির্যাতিত মানুষ এক হও লড়াই কর”, “আমরা এই অন্যায় মানিনা মানবো না।“... না না না এমন সিরিয়াস কিছু তখনো ঘটেনি। আমার যে প্যালেস্টাইনি বন্ধু জিয়াদের কথা আগেই বলেছি সে সুযোগ পেলেই এ ধরণের কথা সমানে আরবীতে বলতে থাকে। তার আরবী জানা অডিয়েন্সেরও অভাব নেই, জর্ডানের আল মোমানি, তিউনেশিয়ার দৌহা, ইজিপ্টের আহমেদ নাগি, এঙ্গোলার ক্যাডি সবাই আরবী জানে। অন্যদিকে আজারবাইজানের আরজু, বেলারুশের ভিটালি, রাশিয়ার দিমিত্র ও ইরিনা এরা আবার রাশান জানে। ক্যামনে কি? ওরা যখন কথা বলে তখন আমি কিছু বুঝিনা। বিষটা খুব খারাপ, কিন্তু আমি যখনি মাইনোরিটি বোধ করা শুরু করি তখনি সমানে বাংলায় কথা বলতে শুরু করি ত্রিশিয়ার সাথে আর চামে দিয়ে হিন্দী; ইন্ডিয়ার সারোজের সাথে। এইবার বুঝ ঠ্যালা। আমাদের ভাষা বুঝো এখন। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়ং আর চায়নার চং যখন নিজেরা কথা বলে সেটাও ইংলিশ। হাঙ্গেরীর এ্যাগেনিস ও আর রুমানিয়ার আন্দ্রেইও তাই। আর শ্রীলংকার দিনিদু হিন্দী জানেনা, তার আশ্রয় ইংরেজি। যদিও এরপরও সাউথ এশিয়ান কোরাম বেশ পাকাপোক্তভাবেই তার কাজ করতে থাকে । বাকীরাও বোঝে এদেরও নিজেদের ভাষা আছে। বাঙালী বুদ্ধি বলে কথা।
সকাল সাড়ে আটটা আর আমরা বাচ্চাদের মত রেডি।
কিন্তু যে কথা বলার জন্য এত ভণিতা সেই কথাটা হল, জিয়াদের কথা না বুঝলেও বক্তব্যের অর্থ আমি ঠিকই বুঝতাম। এর মধ্যে এক মজার ঘটনা ঘটলো। সেবাস্টিয়ানের কথা তো আগেই বলেছি, আমাদের মত আর্ন্তজাতিক শয়তানদের বেবি-সিটার হবার দায়িত্বটা সেই বেচারারই। এটা শাস্তি নাকি সৌভাগ্য সেটা ওই ভালো বলতে পারবে। জার্মানরা সিরিয়াস এবং আন্তুরিক এবং আনফর্চুনেটলি বাক্স বাক্স ধরণের চিন্তাকারী প্রাণী। মানে এক আর এক তাদের কাছে দুই ই হয় অন্যকিছু হওয়া কখনোই সম্ভব না। ফলে স্কুলের বাচ্চাদের মত ঠিক সকাল আটটায় আমাদের লবিতে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এক মিনিট দেরী হলেও মুখ ব্যাজার। বিশেষ করে ড. ওডিলার। তিনি মানুষ ভালো হলেও জাতে একেবারেই মাষ্টারনি। আর যে কোন মাস্টারনিকে বেশিক্ষণ সহ্য করা কঠিন। আর আমারও ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম বিষয়টা নিয়ে।
গত পর্বে ইংলিশ গার্ডেনের যে রেস্টুরেন্টের কথা বলছিলাম, সেখানেই আমরা জার্মান ওয়েটারদের বেশ কনফিউজ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। মাংস কেমন কুক হবে, স্ট্রং নাকি নরমাল সেটা নিয়ে। ওদের যেটা ভেরি গুড কুকড, আমাদের কাছে সেটা নরমাল। হাহাহা। একবারের জায়গায় দুইবার বার্ণ করে আনতে পাঠানো। হেহেহেহে।
আর সেখানেই জিয়াদ বোমাটা ফাটালো। সে খুব ইন্নোসেন্ট মুখ করে বলল, “তাহলে আগামী কাল আমাদের যাত্রা শুরু হচ্ছে সকাল ১০:৩০ থেকে?” প্রশ্ন শুনেই সেবাস্টিয়ানের মাথায় হাত, ড. ওডেলার মুখ কালোতর। কাহীনি কি? কাহীনি হল, জার্মানী আসার আগে যে শিডিউল পাঠানো হয়েছিল তাতে ১০:৩০ই লেখা ছিল। এদিকে জার্মানরা তো কথার বরখেলাপ করতে পারে না আবার ইগোর কারণে তাদের ভুলও স্বীকার করতে পারেনা। ফলে জিয়াদ ভালোমানুষের মত করে বলে যাচ্ছিল, “কিন্তু আমি তো এই শিডিউল দেখে একদম সকালে এক বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা ঠিক করে রেখেছি, ও আসবে অনেক দূর থেকে”। পাজির পা ঝাড়া আর কাকে বলে। আর আমরাও তার এই অভিনয়ে সমানে তাল দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেবাস্টিয়ান তো বিপাকে। নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা একটা বই পড়ি, “এভরি ডে ফর্ম অফ পিজেন্ট রেজিস্টেন্টস” শক্তিমানের সীমানায় থেকেও তার সাথে কীভাবে প্রতিদিনের লড়াই চালাতে হয় তার নিখুঁত বর্ননা। ফলে সময় নিয়ে জার্মানদের অবসেশন দেখে আমরাও চালিয়ে গেলাম। এবং সেবাস্টিয়ানকে প্রায় কনভিন্স করে ফেললাম যে আগামীকাল আমরা দেরী করেই শুরু করছি। মানে ১০:৩০। তখন বেচারার মুখটা ছিল দেখার মত।
হু উইল ওয়াচ দ্যা ওয়াচারস?
নাহ! শেষ পর্যন্ত আমরা জার্মান আথিতেয়তাকে অসম্মান করিনি। সবাই ঠিকমত ঠিক সাড়ে আটটায় বাসে উঠে গেছি। ৬ই আগস্ট। দিনটা ঝলমলে। বাতাসে হালকা শীতের ঘ্রাণ। আজকে আমাদের গাইডেড ট্যুর আছে বার্লিন শহরের। সবার মন মেজাজ তাই ফুরফুরে।
চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে মিটিং এর কি অবস্থা।
বিটকমে সকালের বোরিং মিটিং সেরে আমরা ছুটলাম, জার্মান ইনিস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস এ।
তিউনেশিয়ার দৌহাকে আগে থেকেই চোখে পড়েছিল। তিনি বুদ্ধিমতী এবং স্পেসিফিক। টিমের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তিউনেশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়ার লিডিং পার্সোনালিটিদের একজন। বৈচিত্রময় তেজস্বী জীবন এবং বর্ণ ফাইটার। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হল তিনি হলেন গ্রীণরুমের কারিগর। মানে সবচেয়ে ভালোভাবে যে কোনকিছু চালাতে যে প্রস্তুতি ও নির্দেশনা দরকার তিনি ঠিক তাই, নেপথ্যের কারিগর। তিনিই প্রশ্নটা করলেন, ঠিক তখনি যখন ই ইউ র্যাপোর্টিয়ার সরকারী ভাষায় ইতং বিতং করছিলেন। মানে মানবাধিকার রক্ষার যে কাঠামো তাতে গণতান্ত্রিক সরকার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তেমনি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনাও রাখে। তাহলে দেশে মানবাধিকারের অবস্থা কি? কোথায় কোথায় ভায়োলেশন হচ্ছে? কীভাবে দূর করা সম্ভব, কীভাবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব সেটা দেখার জন্য যে প্রতিষ্ঠান ও কর্তাব্যক্তি তাদের মনিটর করবে কে? প্রশ্নটা বাংলাদেশের জন্যও খুব রিলেভেন্ট ছিল। আমি আগ্রহ নিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকলাম। তিনি ইচ্ছে করেই এই ইতং বিতং করেছিলেন, সেটা বোঝা গেল যখন এরিক টুয়েফার প্রশ্নটাকে মোকাবিলা করলেন।
“বিষয়টা মুখ্যত সৎভাবে পারষ্পরিক জবাবদিহিতার একটা বিষয় এবং সর্বপোরি সামগ্রিক নৈতিকতা ও চর্চার। “ কথাটা আপাতত জটিল মনে হলেও কথাটা সত্য। মানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কমিশন, আইন, প্রশাসন ইত্যাদি তখনি কার্যকর এবং অর্থবহ যখন প্রতিদিনের চর্চায় সেটি দুর্নীতি মুক্ত হবে। একই সাথে পরস্পরকে চোখে চোখে রাখার বিষয়টি হরাইজন্টাল হবে। মানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকবে না। ভার্টিকাল থাকবে না। তা না হলে প্রতিটি পদক্ষেপে এটা তার শক্তি হারাবে এবং মানবাধিকার একটা অধরা বিষয় হিসেবেই থাকবে।
সোশ্যাল মিডিয়া রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্টদের জন্য স্পেসিফিক কোন অধিকার বা রক্ষা কবচ জার্মানীতে আছে কিনা সেটা জানতে চেয়েছিলাম আমি। উত্তরটা ছিল, “না”। নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রাইভেসির অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি রক্ষ কবচ হিসেবে কার্যকর রয়েছে। এবং সেটা ইম্প্লিমেন্টও হচ্ছে। মূল কথাটা হল ইম্প্লিমেন্ট হওয়া। শুধু আইন দিয়ে তো হয়না। আবার স্পেসিফিক কন্টেস্টেক্সটের জন্য স্পেসিফিক অধিকার রক্ষাকবচও তৈরি করাও দরকার।
পথে যেতে যেতে চেক পয়েন্ট চার্লি
ঐতিহাসিক স্থান এবং পর্যটকদের বিরাট আকর্ষণের জায়গা। দুপুরে খেতে যাবার সময় ক্রস করলাম। এর মিউজিয়ামটিও অনেক জনপ্রিয়। শীতল যুদ্ধের সময়কার বার্লিন ওয়ালের পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনে যাবার ক্রসিং পয়েন্ট। এটার নাম দেয় পশ্চিমা জোট। সেই চেক পয়েন্ট এখন ট্যুরিস্ট স্পট। রাশিয়া এবং আমেরিকার রাজনৈতিক লড়াইয়ের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। এখানে আমেরিকান সৈনিকদের সাথে (সেজে থাকা) ছবি তোলার খরচ ২ ইউরো। এঙ্গোলার ক্যাডি বেশ উৎসাহের সাথে ছবি তুলল, তবে আমি কোন আগ্রহ পেলাম না। কিন্তু কি হাস্যকর বিভাজন। তথাকথিত “সভ্য” রাষ্ট্রের ইতিহাস বড়ই প্যারাডক্সিকাল। আসলে কোন রাষ্ট্রের নয়?
চেক পয়েন্ট চার্লি বিস্তারিত
ছবিতে চেকপয়েন্ট চার্লি
হোটেল এ্যাংলিটেরে তে খাওয়াটা ভালৈ ছিল তবে তাদের কোন এসি ছিলনা।
হায় পৃথিবী, হায় রাষ্ট্র কি বিচিত্র!
আমি যখন বার্লিনে তখন প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি তান্ডব চলছে। শিশু হত্যার মচ্ছব। আর তথাকথিত বিশ্ব-বিবেক নির্বিকার। আর আমি এমন একটি দেশে যাদের জাতিঘৃণার ইতিহাস দীর্ঘ। অর্থাৎ ইহুদি তথা মানব হত্যার ঘৃণ্য উদাহরণ তৈরি করেছে। পরবর্তীতে তারা আইন করেছে, কোনভাবেই "হলোকাস্ট" কে অস্বীকার করা যাবেনা। খুব ভালো উদ্যোগ। ইহুদী ঘৃণাকে নিয়ে তাদের সংবেদনশীলতা এতই স্পর্শকাতর, যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে "ইসরায়েলের জন্য প্রযোজ্য নয়" এই বক্তব্য যেন প্রায় রাষ্ট্রীয় ঘৃণা উৎপাদনের সামিল।
অথচ আমি এমন একটা সময়ে বেঁচে রয়েছি যখন সেই ইসরায়েলিরাই প্রবল উৎসাহে প্রতিবেশী মানুষ মারছে, ভূমি দখল করছে। যেই সময়ে মুসলমান মানেই "সন্ত্রাসী" আর প্যালেস্টাইনি হওয়াই অপরাধ। বিশ্ব বলে গ্লোবাইলেজশনে ভেসে গেছে, আসলেই। তা না হলে অন্য দেশে যেতে হলে প্যালেস্টাইনিকে বহন করতে হয় ইসরায়েলি "ট্রাভেল ডকুমেন্ট"। পুরোই পোষ্ট মর্ডাণ; আবার সেখানে বড় বড় করে লেখা, "এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট বহনকারী কোনভাবেই স্টেট অফ ইসরাইলের সিটিজেন নয়।" বাহ! বিশ্বায়ন, বাহ! ইউনাইটেড ন্যাশনের মানবিকতা, বাহ! গণতন্ত্র, বাহ! রাষ্ট্র।
কেন বলি বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া আর্ন্তজাতিক; চ্যালেঞ্জে/সম্ভাবনায়
পুরো ট্যুরের মধ্যে অন্যতম দারুণ বক্তা এই ভদ্রলোক। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রোগ্রামিং, পলিটিক্স খুব ভালো বোঝেন। এবং তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তিনি বোঝাতেও পারেন। প্রায় নির্মোহভাবে এলগিরিদম ভিত্তিক বায়াস এবং বিগ ডাটা নিয়ে চমৎকার বলে গেলেন। আর তখনি ঠিক তখনি আবারো তর্কটা উঠলো। সেই আলাপের নির্যাসটা কয়েকটা পয়েন্ট আকারে দেই।
১. গুগল এবং ফেইসবুক শেষ পর্যন্ত আপনাকে আপনার কন্টেক্সট অনুযায়ী ই সার্চ এবং তথ্য শো করে।
২. এবং তারা নতুন প্রযুক্তির যেমন উদ্ভাবন করছে তেমনি কিনেও নিচ্ছে।
৩. ফলে একচ্ছত্রত্য তৈরি হচ্ছে।
৪. ফলে আপনার ব্লেন্ডারেও যেদিন ইন্টারেনেট কানেক্টিভিটি চলে আসবে।
৫. সেদিন আপনি সবদিক দিয়েই একটি বা দুটি বিশেষ ধরণের সার্ভিসের হাতে বন্দী।
৬. আপনার প্রাইভেসীর তো কাহীনিই নাই, ওটা অনেক আগেই শেষ।
৭. এখন বরং চ্যালেঞ্জ হল প্রযুক্তির ইনট্রুশনকে কতদূর বাধা দেয়া যায়।
৮. এটা ইউজারদের আচরণ পরিবর্তনে সরাসরি ভূমিকা রাখছে।
৯. আর সবগুলোর উৎস আইন এবং অর্থনীতি ইউএসএ কেন্দ্রীক।
ঠিক তার পরের বক্তা যখন প্রাইভেসী রক্ষা, এনক্রিপশন নিয়ে কথা বলছিলেন তখন আমার হাসি পেল। টর ব্রাউজার, অনিয়ন এ্যাড্রেস, ফোল্ডার এনক্রিপশন, এনোনিমিটি এর সবগুলো অন্তত বিগত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের ব্লগার এক্টিভিস্ট এবং ইন্টারনেট ইউজাররা ব্যবহার করে আসছে। ফিশিং, স্প্যামিং, হ্যাকিং, প্রোপাগান্ডা, গ্রুপ এটাক, বট, পার্সোনাল ইনফো লিক কোন ঘটনাটা বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটেনি? ব্লগার, ফেইসবুকার গ্রেফতার, থ্রেট, ফেইসবুক, ইউটিউব বন্ধ আবার খুলে দেয়া, ব্লগ সাইট ব্লক, নানা দিক থেকে একটি বিশেষ ব্লগকে ডাউন করার চেষ্টা সবই তো ঘটেছে। অন লাইন এবং অফ লাইনে আর্ন্তজাতিক স্তরের মত সকল চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে এখনো যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ বিশ্বের বেশির ভাগ জায়গার চাইতে বেশি। ফলে এই দেশের ব্লগার, ইন্টারেনেট ইউজার, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টরা যা করে ফেলেছে তা থেকে বিশ্বের শেখার আছে অনেককিছু। সেটা ইন্টারনেট গর্ভনেন্স থেকে, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন, প্রাইভেসি, সাইবার ল, হিউম্যান রাইটস, ইন্টিলিজেন্স সবক্ষেত্রেই। তবে দুঃখ হল, এ বিষয়ে ব্লগাররা, ইউজাররা যতটা সচেতন; সিদ্ধান্ত নিতে পারা মানুষগুলো ঠিক তার উল্টো।
বার্লিন ওয়াল মেমোরিয়ালের বিকেলটা
রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রের বিচিত্র সব সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলছিলাম। একটা দেয়াল টেনে দিয়ে শহর, রাষ্ট্র ভাগ করে দেয়া। কি অদ্ভুত! সেই দেয়াল ভাঙ্গলো মাত্র ২৫ বছরে আগে। বাহ! ১৩ই আগস্ট ১৯৬১ তে পূর্ব জার্মানী খাড়া করল বিরাট দেয়াল। চার্চের মধ্য দিয়ে, বাড়ীর মধ্য দিয়ে। হায়রে সীমানা লাইন। এভাবে যেন রাষ্ট্র, শহর ভাগ করা যায়। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের স্মৃতি যাদের আছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখেন কেমন ছিল এই বিভাজন।
বার্লিন দেয়াল বিস্তারিত
বার্লিন ওয়াল ম্যামোরিয়াল
বাকীটা দেখে নেই ছবিতে।
বার্লিন দেয়ালের ভেতর বাহির
আমাদের চারপাশে কত দেয়াল। ভিসার দেয়াল, রাষ্ট্রের দেয়াল, চিন্তার দেয়াল।
নিপীড়ণ করা এবং আত্মরক্ষা উভয়ের জন্য ব্যবহৃত একটি আদিম প্রযুক্তি। ইতিহাসের ভাঁজে ভাঁজে এর নানান ধরণের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এবং ভবিষ্যতেও যাবে এমনটা বিশেষজ্ঞরা বলেন। এবং এই প্রযুক্তি ঐতিহাসিকভাবে এও প্রমাণ করে যে প্রজাতি হিসেবে মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু এবং কদাচিৎ বন্ধু (সংখ্যায় এত সীমিত যে উল্লেখ করা বাহুল্য)। এই প্রযুক্তি মানব প্রজাতির আরেকটি অত্যন্ত বিশেষ ধরণের বৈশিস্ট সর্ম্পকে আমাদের সতর্ক করে। আর তা হল একটি মহাবিপর্যয়মূলক সাধারণ শত্রুতার সময়ে মানব জাতির মধ্যে ঐক্য দেখা দিলেও, সমস্যা দূরীভূত হওয়ামাত্র তারা আবারো পরস্পরের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। দেয়াল, একটি অবস্তুগত ভাববাচ্য, দার্শনিক উপলব্ধিও বটে। ফলে এটি একটি দর্শন। যা সর্বত্রগামী। সর্বত্র বিস্তৃত। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলের এক উপলব্ধিকর লিখেছিলেন, "আমি একদিনও না আআআআআআ দেখিলাম তারে এএএএএএ"। মানে তিনি দেয়ালের অস্তিত্ব হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন। আরো উদাহরণ, তিনি আরেক উপলব্ধিকর তবে একটু বেশি বাস্তব ঘনিষ্ট "ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে"...চাবি ভাঙ্গা কি এখানে দেয়াল ভাঙ্গার ইঙ্গিত? কেননা ঘরই তো দেয়াল সমূহ। তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি আরেকটি শত্রুতার ইঙ্গিতবহ। আর তা হল মানুষ নিজের সাথে নিজেই শত্রুতা করে। ফলে দেয়াল হল সেই প্রযুক্তি এবং দর্শন যা, তিন ধরণের শত্রুতাকে আমাদের সামনে উপস্থিত করে।
১. মানব প্রজাতির সাথে অন্যান্যের শত্রুতা যেমন দুর্যোগ, বিপর্যয়, দারিদ্র্য।
২. মানব প্রজাতির একে অপরের সাথে শত্রুতা যেমন যুদ্ধ, শ্রেণী, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম ইত্যাদি ভেদাভেদ।
৩. মানব প্রজাতির নিজের সাথে নিজের শত্রুতা, যেমন অনিয়ন্ত্রণ, বিশৃঙ্খলা, অযত্ন, ঔদাসীন্য, ইত্যদি।
এই তিন প্রকার শত্রুতার সাথে লড়াইয়ের উপায় কি? আত্মনিয়ন্ত্রণ-ঐক্য-বন্ধুত্ব-সহমর্মিতা-সমতা।