সেল্ফ এসেসমেন্ট: এই ১২ টা ক্ষতিকর চিন্তা/বিষয় থেকে আমি বিগত কয়েক বছর বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
১. অন্যকে দোষ দেওয়া: একদম বাধ্য না হলে এই কাজটা করি না। তবে ন্যুনতম এক্সপেক্টেশন আর ভীষণ অসমতাপূর্ণ সমাজে এই জিনিসটা বেশি দেখা যায়। কারণ ব্যাবস্থাপনা মুখ্যত করাপ্ট। আপনি পথচারী এবং আপনি রাস্তার ঠিক দিকে হাঁটছেন, এবং আপনাকেই কোন বাস চাপা দিতে পারে, আপনি দোষ না দিয়ে করবেনটা কি? আর এই কাজটা যখনি করি তখনি আবশ্যিকভাবে আসে, অন্যকে বদলানোর চেষ্টা করা।
২. অন্যকে বদলানোর চেষ্টা করা: একসময় খুব করতে চাইতাম এবং এখন একদমই করি না। যদিও সমাজ বদলের জন্য নিজের বদল হওয়াটা খুব দরকার। কিন্তু এটা বৈপরীত্যমূলকও। কেবলমাত্র প্রকৃত শিক্ষিত এবং বিবেচনা সম্পন্ন মানুষ বদলাতে পারে। অভিজ্ঞতা, ক. একজন মানুষ নিজের মত করে একটা জিনিস বুঝে আছেন এবং সেজন্য তিনি বিগত ২ বছর ধরে আমাকে ভীষণভাবে বিরক্ত করছেন, সম্ভবত তিনি মানসিক রোগী, কিন্তু তিনি তার বিষয়ে অটল, তাকে বদলানোর চেষ্টা করে লাভ নেই, আমার আত্মরক্ষা করা দরকার। তিনি কবে সুস্থ হবেন আর এরপর আমি শান্তি পাবো এই চক্রে পড়াটা বোকামী।
৩. কেন এমন হচ্ছে ভাবা: মানুষের সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে নাই, এটা মেনে নেয়া ভালো একটা বিষয়। অনিশ্চয়তা ফেইস করার প্রস্তুতি একটা আবশ্যিক ট্রেনিং। পথেঘাটেসামাজিক মাধ্যমে কত রকমের ভালো মানুষ এবং রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। ২০১৩ আমার জীবনের একটি অত্যন্ত কঠিন এবং শিক্ষণীয় বছর। কিন্তু এর সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ কখনোই আমার হাতে ছিল না। ফলে যা ঘটেছে তা নিয়ে স্পেকুলেশনে না বসে কি শিখলাম এবং সামনে তাকানো দরকার।
৪. অন্যকে বেশি সুখী ভাবা: এই রোগটি সৌভাগ্যক্রমে আমার কখনোই ছিলনা। এর নাম ঈর্ষা। কিন্তু আমার নিজের রোগ না থাকলেও অনেকের এই রোগ আছে আর তাই অনেকের গোপন ঈর্ষার শিকারও হয়েছি, ফলে শিক্ষাটা হল সম্ভাব্য ঈর্ষাকাতর/পরশ্রীকাতর লোকজন থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে শেখা।
৫. অন্যের প্রতি আশা রাখা: এইখানে আমার বেশ খানিকটা দূর্বলতা ছিল স্বীকার করে নেই। মানে মানুষ হিসেবে ন্যুনতম প্রত্যাশা বোধ সম্ভবত একটু বেশি। যৌক্তিক প্রত্যাশার একটা ক্ষীণ চাহিদা নিশ্চয়ই আমাকে গাইড করেছে। যদিও পরে শিখেছি এবং শিখছি, ভীষণ যৌক্তিক/মানবিক আশাটা নিয়ে বেশি সময় দেয়া ঠিক নয়। এটা অভিমান তৈরি করে। যেটা আবার আত্মঘাতী।
৬. অন্যের ওপর নির্ভর করা: সেই ছোট বেলা থেকেই এই বিষয়টা থেকে নিজেকে সর্বতোভাবে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি এবং সেটা সবসময় ভালো ফলাফল দিয়েছে। কিন্তু অসতর্ক হলে এটার বাজে আউটকামও আছে। বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং অহংকারী করে তোলে। আর সেটি থেকে শুরু হয় নীচের চিন্তাটা।
৭. নিজেকে সঠিক ভাবা: এটা স্বীকার করতে লজ্জা নেই; মাঝে মাঝে আমাকে বেশ আক্রান্ত করে। এখনো শিখছি এবং শিখে চলেছি যে আমি সবসময় সঠিক নই। এটা এমন এক কূপমন্ডুক জড়তা তৈরি করে যা থেকে বের হওয়া মুশকিল। নিজের কূয়ায় নিজেই লাফানো এবং নিজেই কাঁদা ছিটানোর মত অবস্থা। খুব খারাপ আত্মঘাতী একটা রোগ। অহংকার পতনের মূল বাক্যটা এখান থেকে উৎসারিত মনে করি। আরো আরো আরো বিনয়ী এবং বুঝদার হতে হবে।
৮. অন্যের চিন্তা নিয়ে ভাবা: ছোটবেলা থেকেই এটা থেকে মুক্ত। কৈশোরে বেশ ছিল। কিন্তু জীবনযুদ্ধে শিখেছি যে এটা খুব কাজে আসে না। অন্যের চিন্তাকে সম্মান করা উচিৎ অবশ্যই কিন্তু তার মাপকাটিতে নিজেকে যাচাই করার রোগে আক্রান্ত না হওয়াই ভালো। প্রচুর সময় এবং এনার্জী নষ্ট করে। বেশি শুদ্ধিবাদী এবং সমালোচক এটা দ্বারা আক্রান্ত।
৯. সত্য-মিথ্যার পরিমাণ: দুটোই যে নির্মাণ যোগ্য এবং কনটেক্সুয়াল এই শিক্ষার জন্য আমি আমার একাডেমীক ট্রেনিং এর কাছে ঋণী। বিশেষভাবে নৃবিজ্ঞান। সত্য যে বহু এবং সবার সত্য যে এক নয় এটা আমার জীবনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বোধ।
১০. ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা: এই ভাবনাটা আসলে কোন সুখ দেয় না, আইনস্টাইন বলেছেন, "সাধারণত এটা খুব দ্রুত চলে আসে", আর কুম্ফু পান্ডায় বলা হয়েছে, "Yesterday is History, Tomorrow is Mystery, and Today is a GIFT, that's why its call PRESENT" এর বেশি আর কিছু জানার দরকার নাই মানবের। আপনি জন্মাইছেন বর্তমানে, বাঁচবেন বর্তমানে, মরবেন বর্তমানে।
১১. টাকাতেই সব সুখ: এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা এই জামানায় ভয়ংকর একটা চ্যালেঞ্জরে। আপনার ব্যক্তিসত্তা, পরিবার, বন্ধু, বান্ধবী, নি:শ্বাস, প্রশ্বাস, সমাজ, রাষ্ট্র, ফেইসবুক, মিডিয়া সব সব সব সবসময় আপনাকে জানাতে থাকবে, ঝাঁকাতে থাকবে আপনের ট্যাকা নাই তাইলে তো আপনি মানুষই না। এইটা এতটাই শক্তিশালী বয়ান যে উপরের সবগুলা কথা এর সামনে পানসে হইয়া যায়, অর্থহীন মনে হয়। এইটার সাথে মোকাবিলা করাটা খুব জরুরী লড়াই, কি ব্যক্তিক কি বৈশ্বিক।
১২. অতীত ভবিষ্যতকে তৈরি করে: অতীতে কোন কাজে অসফল, ব্যাস এইটাতে তো কোনভাবেই সফল হওয়া যাবেই না। অতীতে কোন কাজে সফল, ব্যাস খালি এই কাজটাই করতে হবে। আমার মতে ৯৯% মানুষ এইভাবে চিন্তা করে। পুরো মানব সভ্যতার ৯৯% এইভাবে পৃথিবীরে দেখে। তাই পৃথিবী হয় রিপিটেশনের। এইটা থেকে বের হওয়াও কষ্টের। খুব কষ্টের, তবে প্রচেষ্টা জারি আছে। এই প্রচেষ্টার নামই বেঁচে থাকা। মানুষের মধ্যে এইটার সর্বোত্তম গুণ বলে মনে হয় আমার আর এজন্যই এই গুণটা অর্জনের জন্য এত আশা। আশা করি একদিন পূর্ণাঙ্গভাবে এটা অর্জন করতে পারবো।
সবার জন্য শুভ কামনা।