মা বোনকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছি। একদম ফেরার সময় শেষ দোকানটায় ঢোকা। এমনসময় খেয়াল করলাম সস্তা মেকাপ দিয়ে চারজন নারী মেয়েদের কেনাকাটার অংশে ঢুকেছে। এবং তারা একভাবে আমাকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমি স্বভাবতই মা'কে মাঝখানে রেখে সরে আসছি। প্রথমে ভেবেছিলাম গার্মেন্টস কর্মী, ঈদের সাজুগুজু করে শপিং এ এসেছেন এবং মধ্যবিত্ত পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করছেন, আর এজন্যই এত কৌমভাব। সবাই তাদের কিভাবে গ্রহণ করছেন (বা নাক সিঁটকাচ্ছেন) সেটা নিয়ে বেশি আত্মসচেতন এবং অস্বস্তিতে আছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণের সাথে সাথে খেয়াল করলাম যে তাদের মধ্যে একরকমের সিনক্রোনাইজেশন যেন আছে। এবং ক্রমাগতভাবে তারা এগ্রেসীভ আচরণ করছেন। ঠেলছেন, সচেতন আব্রুর রিফ্লেকশনে এক ধরণের ডোমিনেন্ট আবহ তৈরি করছেন ( অর্থাৎ কোন পুরুষের/নারী/অন্য মানুষের গায়ে গা লাগার বিষয়টিতে যেভাবে ভদ্র মানুষ একটু কুঞ্চিত হন সেরকম, নারী/পুরুষ নির্বেশেষে)। একসময় খেয়াল করলাম দরজা দিয়ে বের হবার সময় তারা আমার মা'কে প্রায় কোনঠাসা করে ফেলেছেন। পিছনে তিনজন এবং সামনে একজন। তারা একটা কৃত্রিম দুলুনিও তৈরি করেছেন। যাতে সাধারণভাবে মনে হয় এটা আসলে ভিড়ের ধাক্কা আদতে যা নয়। (যেমন সতর্ক মেয়েরা/ছেলেরা মাত্রই জানতে পারেন কোন স্পর্শটি ইনটেনশনাল আর কোনটি নয়)। মজার বিষয় হল আমার বোনও সেটা খুব ভালোভাবে লক্ষ করেছেন। তিনি আসলে সামনে থেকেই সেটা খেয়াল করছিলেন। দরজা দিয়ে ঠেলে বের হবার সাথে সাথে আমি ঝট করে সামনে যেয়ে মাকে বললাম ব্যাগ চেক করতো। তিনি ততক্ষণে কিছুটা হৃতবিহ্বল এবং দেখা গেল তার হ্যান্ড ব্যাগের ভেতর থেকে লম্বা পার্টসের অর্ধেকটা প্রায় বেরিয়ে এসেছে। আমি বেশ জোর গলায় যখন বললাম, "মা তোমার ব্যাগট্যাগ ঠিকমত দেখোতো" তখনি দেখি চারজন নারীর সেই দলটি আর নেই। আমার বোনকে ঘটনাটা জানাতেই তিনি বললেন, "মোক্ষম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছু করলেই হাতেনাতে ধরতাম।" ইতোমধ্যে তারা বেশ কয়েকটি লিপিষ্টিক ও ছোটখাটো জিনিসও যে দেহের উপরের অংশে লুকিয়ে ফেলেছে, সেটাও জানালেন। ফেরত আসার ঠিক আগ মুহূর্তে দেখলাম দলটি আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সতর্ক হয়ে গেছে আমাদের তৎপরতায়। মেয়েদের কোন দলকে ধরতে হলে ছেলেরা প্রস্তুত থাকুন, সাথের মেয়েদের সাহায্য নিন, সঠিক কৌশল অবলম্বন করুন তা না হলে আপনারা একই সাথে মলাস্টার হবার ট্রাপে পড়তে পারেন। ছেলেদের কোন দল হলে মেয়েরা পরিচিত ছেলেদের জানান, কোন সিন তৈরি হবার আগেই নিজে সিন তৈরি করুন। সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার স্ট্র্যাটেজী নিন, পরিচিতদের ফোন করুন।
অপরাধী গোষ্ঠী লিঙ্গীয়, শক্তিমত্তা, গোষ্ঠীবদ্ধতা, নিষ্ঠুরতার সকল কৌশল নিয়ে ঈদের বাজারে নেমেছেন, আপনারা প্রস্তুত তো?
ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সামনে এনেছেন, আমি হুবুহু তুলে দিলাম :
১। আপনার অবর্তমানে কেউই যেন বাসায় না ঢুকতে পারে সেই ব্যাপারে বাসার দারোয়ান এবং এপার্টমেন্টের ইনচার্জকে বলে যাবেন। কারন সম্প্রতি মহানগর পুলিশ এমন বেশ কিছু ডাকাতির অভিযোগ পেয়েছে যেখানে কোন ব্যক্তি বাড়ি চলে যাওয়ার পর, একজন খুব স্মার্ট ব্যাক্তি তার বাসার দারোয়ানকে গিয়ে বলেন, ঐ বাসায় তার আত্মীয় থাকেন। তাঁরা ভূলে কিছু জিনিস ফেলে গিয়েছেন। তাকে চাবি দিয়েছেন, তিনি যেন সেই সব জিনিস নিয়ে চলে যান। এই ক্ষেত্রে ফোনও দেয়া হয়। কিন্তু সেই ফোনের আওয়াজ অনেক কম শুনা যায়। ফলে ভয়েস আইডেন্টিটি ঠিক ভাবে হয় না।
তারপর ঐ ব্যক্তি বাসায় ঢুকে মূল্যবান গহনা ও অন্যন্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
২। মার্কেটে যখন কোন শপিং ব্যাগ কোন দোকানে গচ্ছিত রাখবেন, তা ফেরত নেয়ার সময় ভালো ভাবে দেখে নিবেন। কারন সেখানে প্রতারনার মাধ্যমে ব্যাগের ভিতরে অন্য জিনিস গছিয়ে দেয়া হয়।
৩। নানাবিধ প্রতারনা আছে, সেই সকল কথা বলতে গেলে মনে হবে আমরা বুঝি জাতি হিসেবে প্রতারনা প্রবন জাতি। তবে নিজে যদি সচেতন না থাকি তাহলে কিছুই হবে না। তাই নিজে সচেতন হন। এটাই পারে আমাদেরকে এই ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা থেকে রক্ষা করতে।