পথ নিঃশব্দ প্রায়
ক্যান কুড়ানো বুড়ি অসাড় ঘুমিয়ে আছে
মরে যাওয়া স্বামী তার কোঁচকানো মুখে
প্রেমের হাত বোলায়।
কালো বিড়ালের নেই আজ বিশ্রাম
অশরীরি ল্যাম্পপোষ্টের ছায়া
নিরন্তর তাড়া করে
শোনায় তাকে ওপারের গান
সে যখন মারা গিয়েছিল
তখন নীচের বলরূমে হু্ল্লোড়
চতুর্থবারের মত এগিয়ে যেয়েও
কেউ একজন ফিরে এসেছিল
নিজের টেবিলে
ঝকঝকে আহবান আর উদ্দাম ওয়াইন
অনামিকার আংটিটা অস্বস্তিতে ঘোরাতে ঘোরাতে
তার মনে পড়ছিল সব
এতদিনের ভুলে যাওয়া স্মৃতি
পথভোলা দাম্পত্যের খসখসে চৌরাস্তায়
সকালের ব্রেকফাস্টে সসেজ আর প্যাশন ফ্রুটের জুস
সাথে উজ্জ্বল দিনের মত চকচকে স্ক্র্যাম্বল্ড এগ
দুটো টোস্ট, পরস্পরের গায়।
যেন যুগলের শুয়ে শুয়ে দেখা সৈকত
যেন দুটো পাখি আকাশের পানে চায়
ডোর বেলে সাড়া না পেয়েই জানা গেল;
মরে গেছে সে,
নিতান্ত বিখ্যাত বলেই
হাসপাতালে হতে হল নিশ্চিত
মরে গেছে।
ঘর ভর্তি ছবি, হার্ড ড্রাইভ ভর্তি লেখা
আর কপর্দক শূণ্য ব্যাংক
পাই পাই করে জীবনের চাহিদা মিটিয়ে
চুটিয়ে বেঁচে; কোন দেনা না রেখে
বিদায় নিল সে।
এ প্রস্তুতি আজকার নয়
তাকে হাত ধরতে শিখিয়েছিল সাংস্কৃতিক উবুদ,
অভিমান; নীল লম্বুগান, দেমাগী প্যারিস,
আর প্রেম;
বিনয়ী জাকার্তা, প্রেমিকা নেপাল
সবগুলো হোটেল ঘুরে ঘুরে
শিখেছিল সে ঘর-বদলের গান
নোনাপাখি মনে মনে তাই আওড়ায়
জীবনটাকে ব্যাকপ্যাকে ভ’রে
হেঁটেছে সে শূণ্য ঘরে
খুঁজে দেখেছে আসবাবের ভেতর লুকানো বিষ্ময়
জরায়ুতে লুকানো খেদ
আর ছোট ছোট হাতে ধরে থাকা রঙ্গীন স্কেচ
কাপ্তাইয়ের হ্রদ, আশুলিয়ার কাশবন
সে শিখেছিল;
একদিন সবই ফুরিয়ে যায়।
তাই হোটেলেই ফিরে গিয়েছিল সে
বাকীদের পাঠিয়ে, নিজ নিজ ঘরে
আর এঁকেছিল ছবি অফুরান
সব পথ যখন ক্লান্ত ঘুমিয়ে যায়
কালো বিড়াল যখন অমোঘ আকর্ষনে
ল্যাম্পপোষ্টের দিকে চায়
যখন ঘুমিয়ে থাকে ক্লান্ত বুড়ি
তখন হোটেলের দরজা খুলে
সে চুপিচুপি এসে তার কোঁচকানো মুখে
প্রেমের হাত বোলায়...
প্রেমের হাত বোলায়...