somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপিরাইট মাজেজা আমি যেমনে বুঝি

০১ লা মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাগো দেশে মেধাস্বত্ত, পেটেন্ট বা কপিরাইটের গল্প পুরাটাই ঔপনিবেশিক। ব্রিটিশ বেনিয়ারা য্যামনে চাইছিল; ঠিক ত্যামনেই প্রথমে ভারতীয় তারপর ফাকিস্থানী এবং এখনকার বাংলাদেশে কপি খাইয়া রাইট বা না রাইটের রাজনীতি চলতাসে। আগে না প্রিন্ট ক্যাপিটালিজম আছিল না এখনকার ব্লগ ক্যাপিটালিজম আছিল। চিকিৎসা গল্পে শুরুটা হইছিল নাপিতগো ফোঁড়া কাটার দ্বায়িত্ব থেইকা অব্যহতি দিয়া, তাগো যা দক্ষতা সেইটা থেকে ছুটাইয়া ব্রিটিশ ডাক্তরের এসিসট্যান্ট বানানের মধ্য দিয়া। এতে ঘরে ঘরে চিকিৎসা আয়ের ব্যবস্থা তো গেলই, মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত শুরু হইল ডিস্পেন্সারী। এর সাথে সাথেই ধাইগো ধইরা ধইরা ট্রেনিং দেওন হইছিল যাতে তারা আধুনিক, বিশুদ্ধ ও জীবাণুমূক্তভাবে পোলা মাইয়া পৃথিবীতে আনে। কিন্তু নাপিত/ধাই কেউই ডাক্তারের মর্যাদা পায় নাই, পাওয়ার কথাও ছিল না। ঐটা তখনো বেনিয়াগো জইন্য। এরপর এইখানকার জমিদার সন্তানগো ডাক্তার হওনের হাউস হইল, তারা বাপকে ধরিল, বাপেরা বড় লাটরে ধরিল, কলিকাতায় ডাক্তারী কলেজও প্রতিষ্ঠিত হইল। কলেজ থেইকা এইবার ডাক্তার পয়দা হওন শুরু হইল। ভারতীয় উপমহাদেশে হাজার বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা আইর্যু্বেদি, কবিরাজি, হউনানী, হাকিমি, ওষুধি সব বন্ধ হইয়া যাবার উপক্রম হইল এবং ক্রমান্বয়ে তারা প্রান্তিক হয়ে উঠল। জমিদারের সন্তান ডাক্তার হইল, কিন্তু বাকীসব ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসক, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং এর সাথে যুক্তরা চিকিৎসক থেইকা হইয়া গেল কামলা, বড় জোর ডাক্তারের চেলা। কেননা তাহা যথেষ্ট ‌‌‍‍‌‌‌’আধুনিক’ নহে। তাদের চিকিৎসা আধুনিক নহে।
এখনকার কপিরাইট কাহিনী বীজ নিয়া, ঔষুধ নিয়া, সফটওয়ার, ঋণ নিয়া; আসলে কি নিয়া না। পূঁজিবাদ প্রথমে আমাগো কয় নেন নেন ব্যবহার করেন, ‌’উন্নয়ন’ করেন। কয়েক বছর যাইতে না যাইতে কয় পয়সা দেন, টোল দেন, সুদ দেন, ভাগ দেন, দেশ চালাইতে দেন। আমরা আবাল তৃতীয় বিশ্বের অপেশাদার মালেরা হুতাশে পড়ি, ( যদিও দেশীয় বিশুদ্ধ তখন মুচকি হাসেন, তেনাগো সবকিছুই তো সবসময় পেশাদ্বারীত্বে ভরপুর, কেননা তারা সেই স্থানীয় বুর্জোয়ার উত্তরাধিকার) । কই গেল এডব আর এক্সপির সোনালী দিন, কই গেল রাসায়নিক সার। পেটেন্ট করা রেজিষ্টার্ড সফট ছাড়া এখন হার্ড পিসিও চলবোনা! সার না দিলে এখন ধান উগাইবো না। হ্যাগো বীজ একবার বিয়ায় তাই কিনতে হইব বারবার।
হাগার জন্য যে ভাত দরকার সেটাই নাই । ঔষুধের দামে সুখই নাই অসুখ হইব ক্যামনে? আগে কইল বিশুদ্ধ পানি খাও এরপর কয় আর্সেনিক। আগে কইল বিশুদ্ধ পরিবার এখন কয় এইডস। চাল কিননের টাকা নাই, পাবলিক হিরো কিননের রিস্ক নিব ক্যামনে? আগে কইল দুই বাচ্চা এখন কয় না নিলেই ভালা।
আমরা যে হাগুম সেইটার কপিরাইটও তো আর আমাগো নাই। কারণ আমাগোটা বিশুদ্ধ টয়লেট না, আমগো পানিতে আর্সেনিক । কিন্তু তারো আগে, হাগার জন্য আমাগো তো পেটে খাবার দরকার। কিন্তু সেই খাবারও তৈরী হওয়া কঠিন, কারণ বীজ, সার, উৎপাদন উপকরণ পুরো ব্যবস্থাই কপিরাইট নিয়ন্ত্রিত। আর এই নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নয়। আর তাই এখন না হাগলেও চাপ লাগলো ক্যান তার পয়সা দেও, নাইলে মাফ চাও কোন এককালে খাইছিলা ক্যান। তাগো কাছে এখন যেটা পাইরেসি সেটা তো কয়দিন আগেই ফ্রি সফট্‌ওয়ার আছিল। তখন তথ্য প্রযুক্তি বিস্তার কতই না দরকার ছিল। কত সুন্দর সুন্দর এন্টি ভাইরাস ছিল। এখন তারা ভাইরাস বানায় এবং ভয় দেখায়। কি দু:খে কিনছিলাম পিসি এখন অবস্থা এমন যে না পারি চালাইতে না পারি রাখতে । গল্প হইয়া গেছে ‘কড়ি ফেল মাখ তেল’। আসলে গল্পটা প্রচ্ছন্নে সেটাই থেকে আসছে গত দুশ বছর ধরে।
তাইলে এই গল্প আসলে কি? সহজ উত্তর: বিশুদ্ধায়ন, একই রকম মাল বানায়ন আবার স্থানীয় পেটি চামবাজ সহযোগীরে নিয়া শোষনযোগ্য করিয়া রাখন। ক্যমনে? ম্যাকেনলি বুদ্ধি করিয়া কইবানছিল, ‌’ভারতীয়গো মুখ হতে পারে অন্যরকম কিন্তু মন হতে হবে ইংরেজ।‘ কিভাবে? সাহিত্য আর ভাষা চর্চা দিয়া। দিকে দিকে শিক্ষালয়ে ইংরেজি ভাষা ছড়াইয়া ইংরেজি চেতনা ঢুকাইয়া দেয়া। তথাকথিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবি শ্রেণী তৈরী করে তাদের দিয়া শোষণ কর্ম চালু রাখা। এ জন্যই সুশীল সমাজ, এ জন্যই সচেতন আবেগী খুব খুব সম্মানী শ্রেণী যারা আইন ভালো বুঝবেন কিন্তু ব্যবহার করবেন পুঁজি ব্যবস্থার স্বার্থে। তৃতীয় বিশ্বের মানুষজন হইয়া কপিরাইটের পক্ষ অবলম্বন আসলে সেই ব্যবস্থায় হাত ডুবাইয়া ঘি এর গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা; তাতে হাতে কিছু না আসল তো কি!!! শেকড় গাড়া লুম্পেন বুদ্ধিজীবিতা তো একটু আত্মবিশ্বাসী সুখ পেল।
৩০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×