ছোট্ট আমি...
অনেক কথা অনেক চিন্তা কেমন অসমাপ্তই রয়ে যায়।আমার মেয়েবেলা থেকে কিশোরীবেলা পর্যন্ত স্মৃতিগুলো ছাড়া ছাড়া ভাবে মনে পড়ে। বাবুবাজার লেনের ঐ বাসা টা ছেড়ে দিয়ে আব্বা অন্য একটা দোতলা বাসা ভাড়া নেয়। আমাদের ঠিক পাশের বাসাতেই থাকত মনি হাসিনা আপু রা। ওরা অনেকগুলো ভাই বোন ছিল।মনি, হাসিনা, চম্পা, সুরমা, জাদু, আরো কয়েকজন নাম মনে পড়ছে না। এতোগুলো ভাই বোন ছিল তারা অথচ কোন আওয়াজ পাওয়া যেত না বাসা থেকে। ওদের মা টেবিলের পায়ার সাথে ওদের পা বেধে রাখত পড়ার সময় যাতে কেও পড়া ফাকি দিতে না পারে। তারপর ও ওরা ভালো রেজাল্ট করত না। আমার মনে আছে আন্টি ভীষণ মোটা আর ফর্সা ছিলেন। আর ওদের বাবা ঠিক আন্টির বিপরীত ছিল...খুব বেশী মাত্রায় স্লিম।আমার ছোট ভাই বাবু সে সময় খুব দৌড়াত পুরো বাসা জুড়ে। বাবু মুরগীর ডিম খুব পছন্দ করত...খেতে না, অবাক চোখে দেখতে। একবার রান্না ঘরে আম্মা রান্না করার সময় ডিম খুজঁতে গিয়ে বাবু গরম দুধ এর পাতিলের উপর পড়ে যায়। ওর পেছন দিকটায় বড় বড় ফোস্কা পড়ে যায়...ঠিক ছোট টেনিস বল সাইজের। অনেকদিন কষ্ট করেছে ঠিক মত বসতে পারত না।আমার এখনও মনে আছে হাল্কা হলুদ রঙের ফোস্কাগুলো। আমার বয়স তখন কত ছিল মনে নেই, স্কুল এ পড়তাম কিনা তাও বলতে পারছিনা। আমার আর বাবু কে দেখভাল করার জন্য যে বুয়া ছিল তাকে খুব ভালবাসতাম আমরা। নাম সম্ভবত রেনু ছিল। রেনু যেদিন বাসা থেকে চলে যায় দুই ভাই বোন চিৎকার করে কেদেঁছিলাম সারাদিন। আমাদের অনেক যত্ন করত রেনু - খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, যত রকম আবদার সব সহ্য করত...তাই ভালবাসা টা অনেক বেশিই ছিল।আমি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে খুব যন্ত্রনা দিতাম...যত রাতই হোক না কেন আমার জন্য প্রতি রাতে বুনবুনি নিয়ে আসতে হত আব্বাকে...অনেক রাত অব্ধি জেগে থাকতাম আব্বা ফেরার অপেক্ষায়। কখনো ঘুমিয়ে গেলে, ঘুম থেকে উঠিয়ে আমাকে বুনবুনি খাওয়ানো হত। আর সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাপা পিঠা...এটা ছাড়া তো আমাকে বিছানা থেকেই নাকি নামানো যেত না...আম্মা বলে। যতদুর মনে পড়ে বাবু এত টা জ্বালাত না বাবা মাকে। কেন যে এত কিছু মনে পড়ে যায়...সব কিছু ভুলে তো ভালই থাকি...তারপরও।।
আমার ডায়েরী-টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি