বিসর্জন
তসলিমা নাসরিন
চল ওই নদীর ধারে যাই
একথা আমিই তাকে বলি, সেও
কাঁধ শ্রাগ করে চোখে উদাসীন মায়া, বলে- চল।
নদী বুঝি খুব ভাল লাগে?
বলি- খুব।
নদী অনেকটা দূর শৈশবের মতো
দেখা যাচ্ছে পাড়, অথচ বাড়ালে হাত
ছুঁতে পারি না, কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলি
সে আমার পাশে পাশে হাঁটে, বলে
- আকাশের চাঁদও বুঝি ভাল লাগে? বলি- খুব।
- আর হেমন্তের হাওয়া?
-সেও।
- আচ্ছা, পূর্ণিমায় একা অরণ্যে তোমার,
অচেনা ফুলের ঘ্রাণ,
স্রেফ একা তুমি, ভয় ভয় লাগে না একটু?
আমার শরীরে মনে অবর্ণনীয় পুলক খেলা করে,
বলি - ভয় কীসের? ভূতের?
- না, আমার ! বলে হেসে হেসে সে আমার
স্পর্শ করে উষ্ণ করতল।
ততক্ষণে নদী এসে গেছে পায়ের নিকটে
আমি বুঁদ হয়ে আছি তার স্পর্শে গন্ধে।
আচমকা সে আমাকে প্রবল স্রোতের দিকে দিল ধাক্কা
ক্ষুব্ধ ক্ষুধার্ত হামুখো
জলের ওপর আমি তখন হুমড়ি খেয়ে পড়ে
ডুবতে ডুবতে
আবার ভাসছি, সে দাঁড়িয়ে তখন হাসছে তীরে।
সাঁতার জানি না আমি
এইকথা তার চেয়ে বেশি আর কেউ কি জানত?
তাকে ভালবাসি
এইটুকু শুধু আমার পাপ বা পুণ্য হোক
এইটুকু হোক সুখ
কিংবা অন্তর্গত দুঃখ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৭