ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের সকলের খাদ্যের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতো এ ভাটি। উনারা কি কি পদ্ধতিতে চাষ করতো?
চাষ করতো পচনশীল দ্রব্য, গবর এবং যতেষ্ট নিড়ানি পরিচর্যা করে।বাকি কাজটি কে করতো? ফসলের পোকা দমন মাটি আগলে অক্সিজেন সরবরাহ? এ কাজটি যুগ যুগ ধরে নিপুণ ভাবে করতো ব্যাঙ এবং প্রকৃতির লাঙ্গল খ্যাত কেঁচো বা জির। তাহলে তো সার আর কীটনাশক বিক্রি হবে না। উপায় কি!
যারা একটু স্মরণকালের অতীত স্মরণ করতে পারেন, তারা জানেন ব্যাঙ ধরে দিলে কে বা কারা টাকা দিতো। বস্তায় ভরে ভরে মানুষ ব্যাঙ নিয়ে যেতো। হয়তো কোন দেশে বিক্রিও হতো যেমন তাইওয়ান,চীন বা ফিলিপাইনে। এ সকল জাতির খাদ্যভ্যাস বহু প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্ত করেছে। এমন কি বাংলাদেশের পেঙ্গুলিন বা বনরুই বিলুপ্ত হয়েছে চায়না, তাইওয়ানে পাচার করে করে।
বহুজাতিক কোম্পানি গুলো নিবিড়ভাবে খোঁজ নিয়ে, গবেষণা করে বের করলো বাংলাদেশে কোন কীটনাশক এমন কি সার লাগে না কারণ বঙ্গবদ্বীপে একটা নিবিড় খাদ্যচক্র গড়ে উঠেছে দীর্ঘ দিনের পরিক্রমায়। সেখানে খাদ্যচক্রের উপরে ব্যাঙ। ব্যাঙের খাদ্য কেঁচো, দারকিনা মাছ, বিভিন্ন ছোটমাছের প্রজাতি, এমন কি দেশে যে এত মশা বেড়েছে এটিও ব্যাঙ বিলুপ্তির কারণে। ছোট ব্যাঙ,ব্যাঙাচির প্রধান খাবার হলো মশার লার্ভা,খাদ্যচক্রের ব্যাঙ দমন করে কত কত হাজার কোটি টাকা আমরা জরিমানা গুণছি তা হিসেবের বাইরে। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নয় এমন এলাকা নেই। ব্যাঙ দমনের বড় প্রভাব এটিও
একটি দেশের এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব সরকারের, সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিবিদ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিভিন্ন মহলের। উনাদের আর কি বলবো!
বলছি অন্য একটি গল্প, আমার স্কুলে একজন ম্যাডাম নিয়োগ হবে তৎকালীন সময়েই অনেক উচ্চমূল্যে, আমি সম্ভবত তখন নাইনে পড়ি। নিয়োগ কমিটিতে নিযুক্ত স্যার-কে বললাম, উনাকে যে নিয়োগ দিচ্ছেন তাতে তো কোন উপকারে আসবে না। বরং ক্ষতি হবে।
তিনি কয়েকটা কারণ দেখালেন, স্কুলের বড় একটা ফান্ড হবে। আর একজনের কর্মসংস্থান হবে।
এবং আরেকটি গল্প শুনতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষকদের কাছে উনারা বিভিন্ন নিয়োগ কমিটিতে থাকতেন। কিছুই বলতে পারে না তবুও একটা স্কুলে বা কলেজে অনেককে নিয়োগ দিয়ে আসতে হতো। কারণ নাকি লোক নেই। কি আর করা নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
পরিতাপের বিষয় হলো, এই কানা মামা-রা আমাদের দেশটা কানা করে দিয়েছে বেশি। না ছিল বা আছে উনাদের আদর্শের জোর না ছিলো শিক্ষার জোর। এরা ধারেও কাটে না ভারেও কাটে না। অনেককে বেত্রাঘাত স্কুল-কলেজে নেই বলে অনেক কান্নাকাটি করতে শুনি। আসলেও মানুষকে শেখানো প্রয়োজন দায়িত্ববোধ, জ্ঞান ও চিন্তাশীলতা এবং জীবন-প্রকৃতির মূল্য। শিক্ষকদের ছোট ছোট কথা আচরণও শিক্ষার্থীদের শেখায়। নির্জন স্থানে বেত কাজ করে না, সেখানে প্রয়োজন দায়িত্ববোধ।
আগে শিক্ষক নিয়োগের আরেকটা বিষময় পদ্ধতি ছিলো স্কুল-কলেজ বেতন দেবে নামেমাত্র আর বাকিটা উনি প্রাইভেট পড়িয়ে অর্জন করে নেবেন। দারুণ ব্যবস্থা। পুরো একটি ব্যবসায়িক চিন্তা। আর ম্যানেজিং কমিটির ছিলো মজাই মজা, যা ফান্ড হতো লুটেপুটে খেতে পারতো, নিয়োগেও মজা। সবমিলিয়ে মজাই মজা। শিক্ষায় যদি দায়িত্বহীন মানুষে সয়লাব হয় তাহলে আর কোন জায়গায় হাত দেয়া লাগে না। ওরাই সব নষ্ট করে দেয়।
এখন আবার গত ১৫/১৬ বছর ধরে চলছে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি নিয়োগ, শিক্ষক তেমন নিয়োগ হচ্ছে না হয়নি।
এক আ আ ম স আরেফিন সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০০র অধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে গেছেন, মজার ব্যাপার হলো তারাই আবার উনাকে বিতাড়িত করে গেছেন পরের মেয়াদে। উনার আত্মবিশ্বাস ছিলো তারা কোরাম করে উনাকে রাখবেন, রাখেননি।
আসি মূল আলোচনায়, এই ব্যাঙ বিলুপ্তির ফলে ফসল উৎপাদন কমা শুরু হলো। ব্যবহার শুরু হলো সারের আর কীটনাশকের দমন হলো কেঁচো। ফলে মাটির উর্বরতা কমতে শুরু হলো পর্যাপ্ত প্রকৃতির লাঙ্গলের অভাবে। এভাবে আমরা একটা হাজার বছরের অর্গানিক খাদ্য উৎপাদন শৃংখল থেকে রাসায়নিক খাদ্য উৎপাদনকারী জাতি হলাম।
এখনো হুজুগে কিছু কাজ চলে কে বা কারা এ রিউমার গুলো তৈরি করে আর আমরা দলে দলে নেমে যাই। ম্যাগনেটিক পিলারের দাম নাকি কোটি কোটি টাকা, অন্যটি হলো বাংলাদেশে পর্যাপ্ত তক্ষক আছে, যা ধরে ধরে দমন করা হচ্ছে ব্যাঙের মতো। এর কি বিশেষ উপকারী দিক ছিলো হয়তো গবেষণা করে পরে এক সময় আমরা জানবো, কিন্তু ততদিনে আমাদের ক্ষতিটা হয়ে যাবে। আর পিলারের অভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে।
আমাদের কিছু বিজ্ঞানমনস্ক আছেন যারা বিজ্ঞানের তেমন কিছুই জানেন না, কিন্তু খুঁচাখুঁচি জানেন। একটু আধটু যা বিজ্ঞান জানেন তাতে জাতির মোটেও উপকারে আসে না। উনারা চারুকলার বিজ্ঞানী। উনারা কোন আউটপুট দিতে পারেন না। উনাদের ভেতর আবার অসম্ভব রকম হিংসা-বিদ্বেষ-ভয়। নতুন কিছু এসে যদি উনাদের তলিয়ে দিয়ে যায়।
আরেকটা সম্প্রদায় আছে আমাদের, কট্টর ধর্মবাদী যাদের ভেতর ধর্মের বালাই নেই, জাতির জন্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করবেন এমন কোন আশা-দূরাশাও নাই। খিস্তি করবেন শুধু, এই মোল্লা একটা ওয়াজে আওয়াজ ছাড়বেন ওর বিরুদ্ধে, ঐই মোল্লা আওয়াজ ছাড়বেন এর বিরুদ্ধে। সম্পুর্ণ পরিবেশ নষ্ট। চেতেচেতে বিচি দুইডা কান্দে তুলে ফেলেন।
আমাদের অসচেতন সম্প্রদায় তৈরিতে তাবলীগের ভূমিকাও অন্যন্য। কয়দিন আগে এরাও দুইভাগ হলো। উত্তপ্ত আরেকটা সম্প্রদায় হলো জামাত। তারা নূন্যতম মানুষ হিসেবে সাধারণ ভাবে সহবস্থান করবে কারো সাথে সেটি করবে না। প্রচন্ড জিঘাংসায় জ্বলে উঠবে, বাংলাদেশে প্রশাসন এতটা আতংকিত জনগণ বিরোধী একদিনে হয়নি, জামাতের তান্ডবেও হয়েছে। ভয় ধরিয়ে দেয়া আছে কি যেন হয়ে যাবে।
এখনো যতোটুকু বামের ডানে আর ডানের বামে, মানুষ আছেন এরাই বাংলাদেশের আশাবাদ। এক সময় বাংলাদেশকে পথ দেখাবে। আমি বারবারই বলি, ১৬/১৭ বছরে যে আওয়ামী লীগ একটা টেকসই উৎপাদন খাত তৈরি করতে পারেনি তাদের হাজার বছর দিলেও পারবে না। তাদের উৎস এখন স্বৈরাচার আর টিকে থাকা জন্যে ধর্মের আশ্রয়, ভারতের দক্ষিণা। এক ব্যাক্তির উপর নির্ভর করতে করতে আর কোন যোগ্য লোক উনাদের অবশিষ্ট নাই। চরম প্রতিক্রিয়াশীল সম্প্রদায় এরা।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যিনি আমাকে মাঝে মাঝেই বিএনপির জন্যে তিরস্কার করতেন, একদিন হঠাৎ দেখা তিনি বলেন তোমরা আরো ভালো করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাও। কথাটা শুনে আমি অবাকই হলাম। যিনি আমাকে দেখলেই বকা দিতেন কিসের বিএনপি করো।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক ধারা আমাদের লাগবে, সাথে লাগবে জাতিগত ঐক্য ও সমন্বয়, এটি আওয়ামী লীগ করতে পারবে না, জামাতও পারবে না। আওয়ামী লীগ দেশ চালাতে ব্যর্থ আর জামাত সহনশীল হতে ব্যর্থ। আমাদের দুটো গুণই তো লাগবে। ১৬/১৭ বছরের সরকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে শিক্ষার এবং পরিবেশের; সবগুলো পুনরুদ্ধার করা গেলেও বেগ পেতে হবে এই দুটিতে। কারণ শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। পরিবেশও দীর্ঘমেয়াদি বিষয়।
ব্যাঙ দিবসে বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যাঙের গুরুত্ব বুঝতে হবে। সার্বজনীন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞানে জাতিগত সমন্বয় জরুরী। সকলের দেশকে দেবার পরিবেশ তৈরি জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭