somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বরাকবাসীর ভাবনা

১৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত সরকারের টিপাই মুখ বাধের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ সোচ্চার হলেও বরাক উপত্যকাবাসীর ভাবনা ভিন্ন। তারা মনে করছে এই বাধ নির্মিত হলে বরাক উপত্যকার ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলায় আর কখানো দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হবেনা। সময় মত তারা পানি পাবে, পানি নিষ্কাশন হবে বলেই জানে তারা। তাছাড়া তারা বিভিন্নভাবে উপকৃত হওয়ার কথা শোনে এই বাধের পে অবস্থান নিয়েছে এক সময়ের বাংলাদেশের ঘনিষ্ট মিত্র বরাক উপত্যকাবাসী। বরং বাধ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা ওখানে কথা বলতে যায় তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখেন তারা। বরাক উপত্যকার বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, আইনজীবি, শিাবিদ, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব ল্য করা গেছে।
বরাক উপত্যকার প্রখ্যাত গবেষক ড. তুষার কান্তি দাস জানান, ২০০৭ সালের প্রথম দিকে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বরাক উপত্যকায় বেড়াতে যান। তখন তিনি টিপাই মুখ বাধের যৌক্তিক প্রতিবাদ করেন বিভিন্ন আলোচনায়। এসময় একটি স্থানীয় পত্রিকায় বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের লোকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, প্রৃকৃতি ও পরিবেশের হুমকির বিষয়টি তোলে ধরেন মুহিত। তখন এ নিয়ে শিলচরে ােভের মুখে পড়েন তিনি। এমনকি একটি শ্রেণী তাকে ‘দালাল’ আখ্যায়িত করে সেখানে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। এভাবেই যারা বরাকে গিয়ে টিপাই মুখ বাধের প্রতিবাদ করে বরাকবাসীর ােভের মুখে পড়তে হয় তাদের। বরাকবাসী এই বাধ নির্মাণের পে একাট্রা বলে তিনি জানান।
শিলচরের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি ও আইনজীবি ইমাদ উদ্দিন বুলবুল বলেন, বরাক উপত্যকাবাসীর টিপাই বাধ নিয়ে কোন টেনশন নাই। বরং এই উপত্যকার ৯৫ ভাগ লোক এই বাধের প।ে ৫ ভাগ লোক এর বিপে পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বরাকবাসী আতœীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু অবস্থা এখন এমন হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ লোকজনকে তারা বন্ধু না শত্র“ ভাববে তাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। যারা ভারত-বাংলার মৈত্রী স্থাপনের পে তারা কষ্টে আছে। তিনি বলেন, বরাকবাসী এখন গভীর চিন্তা করতে পারছেনা। অথচ শিলচরের লোকজন আসাম-মেঘালয়ে সাহিত্য, সংস্কৃতি, আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু গত ৬০ বছর ধরে তারা বৃত্তে আটকা পড়েছে!। তারা কিভাবে টিপাইমুখ বাধের প্রতিবাদ করবে।
শিলচরের বিখ্যাত সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবি অতীন দাস বলেন, ২০০৭ সালে বরাক উপত্যকার ১৫টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়। তখন সরকারিভাবে বলা হয় টিপাই মুখ বাধ সম্পন্ন না হওয়ায় এই দুর্ভোগ বাড়ছে, পানি যাচ্ছেনা। তাই বরাক উপত্যকার সাধারণ লোকজন এই বাধের প।ে তবে তিনি এর বিপ।ে তিনি বলেন, নদীকে বাধ দিয়ে কিছুই করা ঠিক নয়। তার গতি হারালে সভ্যতাও মারা যাবে। ফারাক্কা বাধের ফলে বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকা খরায় পরিণত হয়েছে। তিনি ভারত সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, নদীকে আপন গতিতে চলতে দিন। বিদ্যুতের লোভ দেখিয়ে টিপাইমুখের বাধের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। কারণ এর সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শুধু পরিবেশগত সমস্যাই নয় অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত।
বরাক উপত্যকার প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি ও ভাষা সৈনিক পরিতোষ পাল বলেন, টিপাই বাধ করার জন্য আমাদের সকল রাজিৈনতক শক্তি ঐক্যবদ্ধ। তাই তারা মুখে কলুপ এটে আছেন। অথচ এই বাধ বরাকবাসীর তেমন উপকারে আসবেনা। এর আগেও তা প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৯৬৩-৬৪ সনে বরাক ড্রামের জন্য তৎকালীন আসাম সরকার পাঞ্জাবের ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার বলবন্ত সিং নাংকে বরাক ড্রামের সার্ভের জন্য নিয়োগ করেছিল। কিন্তু তিনি প্রকৃতি, পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ের উপর গবেষণা করে বাধের বিরুদ্ধে তার রিপোর্ট জমা দেন। তিনি বলেছিলেন কোনমতেই বাধ দেওয়া চলবেনা। তারপরও আমাদের রাজনৈতিকক শক্তিগুলো এই বাধ করার পে অবস্থান নিয়েছে।
পরিবেশবিদ জিষ্ণু রায় বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি বাংলাদেশের জনমত টিপাই বাধের প।ে কিন্তু বরাকবাসীর অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি বলেন, সাধারণ বরাকবাসী টিপাইমুখ বাধের প।ে তাদেরকে এমনভাবে বোঝানো হয়েছে যে এই বাধ হলে তারা বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে কেউ টিপাইমুখ বাধের বিপে বললে তারা অন্যরকম ভাবে। তবে সচেতন কিছু লোক উত্তরপূর্ব বাংলাদেশের যৌক্তিক উদ্বেগের কথা জানে। কিন্তু তাদের কিছু করার নেই। তারা কেন্দ্রীয় রাজনীতির কুট কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। তিনি দুই দেশের মধ্যে এ বিষয় নিয়ে জরুরি ডায়লগের আহবান জানান।
প্রভাষক অর্জুন চৌধুরী বলেন, বরাকবাসীর টিপাইমুখ বাধের বিষয়ে বাংলাদেশের তির কথা অবগত নয়। তারা জানে এই বাধ হলে তারা বন্যা থেকে রা পাবে। জল বিদ্যুৎ পাবে। তাই এসব স্বাভাবিক কারণে তারা এর পক্ষে বরং তারা দ্রুত এর বাস্তবায়ন চায়।
##
(চলতি বছরের ফেব্র“য়ারিতে বরাক উপত্যকায় বেড়াতে গেলে কথা হয় আসাম, শিলচর, করিমগঞ্জের সুদীজনের সঙ্গে। বিভিন্ন বৈঠকে টিপাইমুখ বাধ নিয়ে কথা বলেই এই প্রতিবেদন।)

৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×